× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ভৈরবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সার্কেল অফিসে যা হচ্ছে

বাংলারজমিন

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
১৮ আগস্ট ২০১৯, রবিবার

ভৈরবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সার্কেল অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও আটক বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ফলে সার্কেল ইন্সপেক্টর মাসুদুর রহমানসহ দু’জন সিপাহিকে শোকজ করা হয়েছে। তাদের আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও সেন্টু রঞ্জন নাথ নামে একজন সাব ইন্সপেক্টরকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে মুঠোফোনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হাবীব তৌহিদ ইমাম। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলা নিয়ে ভৈরব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সার্কেল অফিস। এই সার্কেল অফিস থেকে ভৈরবসহ কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, নিকলী, অষ্টগ্রাম ও কটিয়াদী উপজেলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তাছাড়া সড়ক, রেল ও নৌ-পথে অবাধ যাতায়াতের কারণে মাদকের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ভৈরবকে ব্যবহার করছে চোরাকারবারিরা।
ফলে জেলার বাইরে ভৈরবে দেশের দ্বিতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সার্কেল অফিস স্থাপন করা হয়। একই সঙ্গে দেশের বন্দরনগরী ভৈরবে মাদকের প্রবেশ বন্ধে এবং মাদক ব্যবসায়ী বা চোরাকারবারিদের আটক করে আইনের হাতে সোপর্দ করতে এই সার্কেল অফিসে একজন ইন্সপেক্টর, একজন সাব ইন্সপেক্টর ও মহিলাসহ তিনজন সিপাহী নিয়োগ দেয়া হয়। শহরের আমলাপড়ায় এই সার্কেল অফিস তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।    
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভৈরবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সার্কেল অফিস থাকলেও শহরের কমলপুর, পঞ্চবটি, চন্ডিবের, কালিপুরসহ উপজেলার শ্রীনগর, আগানগর, সাদেকপুর, গজারিয়া, শিবপুর, শিমুলকান্দি ও কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লায় মাদকের ছড়াছড়ি। ফলে হাত বাড়ালেই মেলে মরণনেশা ইয়াবা ট্যাবলেট। শুধু তাই নয়, শহরের পাওয়ার হাউজের হরিজন কলোনি এবং চান্দানী টিলায় প্রতিদিন শত শত লিটার চোলাই মদ তৈরি হলেও নজর নেই সার্কেল অফিসের। এমনকি শহরের আমলা পাড়ায় খোদ সার্কেল অফিসের চারপাশে মাদকের ছড়াছড়ি থাকলেও যেন দেখার কেউ নেই। ফলে প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। আর মাদকের টাকা যোগার করতে শহরে বাড়ছে চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা। ঘটছে হতাহতের ঘটনাও। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক মাস চাকরির সুবাদেই মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সার্কেল অফিসের লোকজনের সখ্যতা গড়ে ওঠে। ফলে প্রতি মাসে হাতিয়ে নেয় তারা মাশোহারা। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করলেও দেখা যায় চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের না ধরে গাঁজাসেবীদের আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে হাতেগোনা দু’একজনকে সাজা দেয়া হয়েছে। আবার কখনো কখনো চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করা হলেও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, গেল তিনমাস আগে শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপুর গ্রামের কালা মিয়ার বাড়িতে অভিযান চালায় সার্কেল অফিসের লোকজন। এ সময় কালা মিয়াকে না পেয়ে ঘরে তল্লাশির সময় আলমিরাতে রাখা তার মেয়ের বেতনের ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠে সাব ইন্সপেক্টর সেন্টু রঞ্জন নাথ ও তার সহকর্মী সিপাহিদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পরদিন কালা মিয়ার মেয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ ছাড়াও রেল স্টেশন এলাকা থেকে হাতকড়া পড়িয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রায় এক বছর আগে ভৈরব সার্কেল অফিসে কর্মরত ইন্সপেক্টর কামনা শীষ সরকারের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠে। ফলে তিনি মাদকসহ থানা পুলিশের হাতে আটক হন। পরে তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়। এ প্রসঙ্গে ভৈরব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সার্কেল অফিসের ইন্সপেক্টর মাসুদুর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে গেল দু’সপ্তাহে ৩ বার গিয়েও তার দেখা মেলেনি। এমনকি অফিসের বাইরে তালা ঝুলতে দেখা যায়। ফলে ইন্সপেক্টর মাসুদুর রহমানের ব্যবহৃত মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. হাবীব তৌহিদ ইমাম মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, ইতিমধ্যে ভৈরব সার্কেল ইন্সপেক্টর মাসুদুর রহমানসহ দু’জন সিপাহিকে শোকজ করা করা হয়েছে। তাদের আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও সাব ইন্সপেক্টর সেন্টু রঞ্জন নাথকে অন্যত্র বদলি করেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। যদিও কোনো অভিযোগের কারণে তাকে বদলি করা হয়নি। তাছাড়া তিন কার্যদিবসের মধ্যে যদি তারা শোকজের জবাব সন্তোষজনক দেয়, তাহলে তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হবে। আর যদি জবাব সন্তোষজনক না হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানো হবে। এ ছাড়াও তিনি ভৈরব সার্কেল অফিসের নানা অনিয়মের কথা অকপটে স্বীকার করে বলেন, তাদের জন্য আমাকে চাপে থাকতে হয়। আগেও এই অফিসের ইন্সপেক্টর কামনা শীষ সরকারের অপকর্মের কারণে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বদনাম হয়েছে। তাই, তার বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর