× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চামড়া বাজার ধসের কারণে রংপুরে বিপাকে মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিংগুলো

বাংলারজমিন

জাভেদ ইকবাল, রংপুর থেকে
২২ আগস্ট ২০১৯, বৃহস্পতিবার

ঈদুল আজহার চামড়ার দাম নিয়ে সিন্ডিকেটের নাটকীয় কারসাজির কারণে ধসে পড়েছে চামড়ার বাজার। আর এতে করে বিপাকে পড়েছে কওমি মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিংগুলো। এসব প্রতিষ্ঠানের বড় আয়ের উৎস কোরবানি ঈদে সংগ্রহ করা চামড়া। দাম না থাকায় এখন এই চামড়া সংরক্ষণ ও বিক্রি বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা অবিলম্বে চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন সরকারের প্রতি। এদিকে রাষ্ট্র এবং অসৎ চামড়া ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে গরিব মানুষের হাজার কোটি টাকা লোপাটের প্রতিবাদে রংপুরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বাসদ (মার্কসবাদী)। রংপুর প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে বাসদের জেলা সমন্বয়ক কমরেড আনোয়ার হোসেন বাবলুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সদস্য আহসানুল আরেফিন তিতু, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র রংপুর জেলার দপ্তর সম্পাদক কামরুন্নাহার খানম শিখা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট রংপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন রায় প্রমুখ। নেতৃবৃন্দ বলেন, রাষ্ট্রের সহযোগিতায় অসৎ চামড়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিমভাবে চামড়ার বাজার ধসিয়ে দেয়।
দেড় হাজার কোটির টাকার চামড়া প্রায় বিনামূল্যে তাদের হস্তগত হয়। এদিকে ঋণ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং মাঠ পর্যায়ে চামড়া সংগ্রহকারীরা চামড়া কিনে অর্ধেক মূল্যে বিক্রয় করে সর্বস্বান্ত হয়। সরকার গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর স্বার্থে লাখ লাখ গরিব মানুষের স্বার্থের বিপরীতে দাঁড়িয়েছে অভিযোগ করে তারা আরো বলেন, অবিলম্বে সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে চামড়া সংগ্রহকারী এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ অন্যায় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ। ওদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়, রংপুর জেলায় ৯৬টি কওমি মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিং রয়েছে। যার আয়ের উৎস হলো দান-সদকা ও কোরবানির পশুর চামড়া। প্রতি বছরের মোট ব্যয়ের একটি বড় অংশ আসে কোরবানির চামড়া দিয়ে। মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা ঈদের দিন বাড়ি বাড়ি ঘুরে দান করা চামড়া সংগ্রহ করেন। কোথাও কোথাও স্বল্প দামে কিনে নেন চামড়া। পরবর্তী সময়ে সেগুলো বাজারে বিক্রি করে আয় দিয়ে গরিব-এতিম শিক্ষার্থীদের ভরণ-পোষণ ও শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়। এর পরও অর্থের টানাপড়েন থেকেই যায় এসব প্রতিষ্ঠানে। এবার কওমি মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিংগুলো দান করা চামড়া সংগ্রহ করলেও সেগুলো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে চামড়ার অপ্রত্যাশিত দরপতন তাদের হতাশ করেছে। ন্যায্য দাম পাবার আশায় জায়গা সংকট ও প্রক্রিয়াজাত করে রাখার সমস্যার ভেতরেই কোনোরকমে চামড়া সংরক্ষণ করে রেখেছে অনেক প্রতিষ্ঠান।
গতকাল নগরীর বৃহৎ মাদ্রাসা আল-জামিয়াতুল করীমিয়া নুরুল উলুম মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিং ঘুরে দেখা গেছে, এবার ঈদুল আজহায় সাড়ে ১২শ’ চামড়া সংগ্রহ করেছেন মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা। চামড়ার দাম না থাকায় মাদ্রাসার ২টি কক্ষে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে সেগুলো।
মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষার্থী মো. শরীফ (২৬) বলেন, আমাদের মাদ্রাসায় সরকারি কোনো অনুদান আসে না। প্রায় ৫০০ জন ছাত্রকে এ মাদ্রাসার লিল্লাহ ফান্ড থেকে খাওয়ানো হয়। লিল্লাহ ফান্ডের আয় আসে যাকাত-ফেতরা ও চামড়া বিক্রির টাকা থেকে। বর্তমানে চামড়ার বাজার খুবই খারাপ। এতে শুধু আমাদের মাদ্রাসাই নয়, বাংলাদেশের সকল কওমি মাদ্রাসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যারা লিল্লাহ বোর্ডের মাধ্যমে ভরণ-পোষণ পায় তারা সমস্যায় পড়বে। প্রতি বছর আমাদের মাদ্রাসায় আর্থিক সংকট থেকে যায়। এবার এ সংকট আরো বেশি হবে বলে মনে হচ্ছে। দেশের সকল কওমি মাদ্রাসার পক্ষ থেকে আমি সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি যেন চামড়ার দামটা বৃদ্ধি করা হয়।
প্রতিষ্ঠানের অপর ছাত্র মোস্তাকিম বিল্লাহ (১৭) বলেন, ঈদ এলে আমরা অপেক্ষায় থাকি চামড়া সংগ্রহ করে লিল্লাহ ফান্ডকে শক্তিশালী করবো। এবার চামড়ার দামের যে অবস্থা, জানি না কি হবে ফান্ডের।
আল-জামিয়াতুল করীমিয়া নুরুল উলুম মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের সহকারী পরিচালক মাওলানা ইউনুস বলেন, কোরবানির চামড়া গরিব-এতিমদের হক। সেই জন্য ধর্মপ্রাণ মানুষ কোরবানির চামড়া লিল্লাহ বোর্ডিংগুলোতে দান করে। এবার চামড়ার দাম না থাকায় লিল্লাহ বোর্ডিং চালাতে সমস্যায় পড়তে হবে। গরিব-এতিম শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে সরকারের কাছে চামড়ার দাম বৃদ্ধি করার দাবি জানাচ্ছি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর