আগামী ১৪ই সেপ্টেম্বর বিএনপির ভ্যানগার্ড খ্যাত ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল। সাতাশ বছর পর কাউন্সিলের মাধ্যমে আসছে নতুন নেতৃত্ব। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে ভোটের মাধ্যমে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেও এর পর প্রত্যেক বারই প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এবারের কাউন্সিল উপলক্ষে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে কদর বেড়েছে তৃণমূল নেতাদের। ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন হওয়ার ঘোষণার পর থেকেই আগ্রহী প্রার্থীরা যাচ্ছেন তৃণমূল নেতাদের দরজায়। জেলা ও মহানগরের শীর্ষ নেতাদের (ভোটার) কাছে ভোট এবং দোয়া চাইছেন। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, জেলা ও মহানগরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তৃণমূলের প্রতিটি ইউনিটকে ঢেলে সাজানোসহ তারা নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
তৃণমূল নেতারাও প্রার্থীদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে কী ভূমিকা, বিগত আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন কি না- এসব বিচার-বিশ্লেষণ করে তারা পছন্দের যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে চাইছেন।
শুধু ভোটারই নন, সংশ্লিষ্ট জেলা-মহানগর এলাকার প্রভাবশালী বিএনপি নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন তারা। তবে ‘বিশেষ সিন্ডিকেট’ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নিতে প্যানেল করার কাজেও নেমে পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তৃণমূল নেতাদের মতে, ভোট হলে সিন্ডিকেটমুক্ত হবে এবারের কমিটি। যোগ্য ও পরীক্ষিতরাই ছাত্রদলের নেতৃত্বে আসবে।
আসন্ন কাউন্সিলের সভাপতি পদপ্রার্থী হাফিজুর রহমান বলেন, আমি ২০০৪ সাল থেকে ছাত্র রাজনীতি করে আসছি। এই সময়ে অনেক মামলা হামলার শিকার হয়েছি। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি জেলা মহানগর সফর করেছি। কাউন্সিলরদের কাছ থেকে ভাল সাড়া পাচ্ছি। আশা করছি সবকিছু বিবেচনা করে তারা আমাকে ভোট দেবেন।
আরেক সভাপতি প্রার্থী মামুন খান বলেন, আমার মাতৃতুল্য আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির আন্দোলন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ঢাকার রাজপথে কার্যত এবং দৃশ্যমান আন্দোলনের সূচনা করতেই আমি চাই। এখন পর্যন্ত ছয়টি বিভাগেই আমি সফর করেছি। কাউন্সিলরদের কাছ থেকে খুব সাড়া পাচ্ছি। আশা করছি নিরাশ হব না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ মামুন মানবজমিনকে বলেন, ২০০৮ সাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি করে আসছি। এর পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দুইবার কমিটি হয়েছে। কিন্তু এবারের মতো কোন প্রার্থী কমিটির আগে আমাদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ করেনি। উল্টো আমরাই যোগাযোগ করেছি। ছাত্রদলের ভোটের মাধ্যমে কাউন্সিল হওয়ায়টা অনেক আগেই জরুরি ছিল। এখন যেহেতু হয়েছে আমি এটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করছি এই কাউন্সিলের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ ছাত্রদলের যোগ্য নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আমিনুর রহমান আমিন বলেন, বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম, আগামী দিনেও থাকব। আশা করি, কাউন্সিলররা সব বিবেচনা করে ভোট দেবেন।
আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, প্রায় তিন দশক পর ভোটের মাধ্যমে ছাত্রদলের কাউন্সিল হচ্ছে। কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি হওয়া এটা যেকোন দলের জন্য ভালো। আর এতে তৃণমুলের নেতাদের সঙ্গে একটা পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। আমরা যারা প্রার্থী হয়েছি এটা আমাদের ভবিষ্যৎ রাজনীতির ক্ষেত্রেও কাজে আসবে। আর বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে যারা রাজপথে ছিলেন এবং নির্যাতিত হয়েছেন, কাউন্সিলররা তাদেরই নির্বাচিত করবেন।
এ বিষয়ে কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন শিবলু বলেন, এবারের কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই আগ্রাহী প্রার্থীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। যেটা অতীতে কখনো হয়নি। আমরা সব সময় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগযোগ করতে হতো। এবারের কমিটিতে তৃণমুলের নেতাদের অগ্রধিকার দেয়া হচ্ছে। এটা দলের জন্য অনেকটাই মঙ্গল।