পাঁচ সন্তানের জনক রাজমিস্ত্রি হালিম মিয়ার বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। চুল ও দাড়িতে পাক ধরেছে। এই হালিম মিয়ার কুদৃষ্টি পড়ে একই গ্রামের প্রতিবন্ধী এক নারীর ওপর। বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী ওই নারী। স্পষ্ট কথা বলতে পারে না। মুখ জড়িয়ে যায়। হাঁটতে পারে না ভালোভাবে। এ কারণে বিয়ে হয়নি।
পিতা আব্দুর রশিদের ঘরেই কাটছে তার জীবন। প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়ে জীবিকা চলছে তার। চলতি বছরের ২২শে মে হালিম মিয়া যায় আব্দুর রশিদের ঘরে। তখন ঘরে একা ছিল প্রতিবন্ধী ওই নারী।
তার কাছে পান ও চুন চায় হালিম। কথা মতো হালিম মিয়াকে পান ও চুন এনে দেয়। ওই সময় হালিম মিয়া প্রতিবন্ধী নারীকে পাশের ঘরে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। বিষয়টি জানার পর স্থানীয় সমাজপতিদের দ্বারস্থ হয় প্রতিবন্ধীর পরিবার। তারা হালিম মিয়ার বিচার চায়। স্থানীয় গ্রামের লোকজন প্রথমে বিষয়টি নিয়ে হালিম মিয়ার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি পাত্তা দেননি এবং ধর্ষণের ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান। এভাবে কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য বেলালের কাছে যায়। ইউপি সদস্য এ নিয়ে সালিশ বসালে হালিম মিয়া সবার সামনে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে এবং প্রতিবন্ধী নারীকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ঘরে তোলার অঙ্গীকার করে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হালিম মিয়া প্রতিবন্ধী পরিবারের নিরীহ লোকজনদের ভয় দেখিয়ে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ করে বাচ্চা নষ্ট করার পাঁয়তারা করে। একপর্যায়ে সে অস্বীকার করে এবং বিয়ে করবে না বলে জানায়। ওদিকে, প্রতিবন্ধী ওই নারী তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় গত মঙ্গলবার বিষয়টি কানে যায় জৈন্তাপুর থানার ওসি শ্যামল বনিকের।
ওসি ওই রাতেই পুলিশ পাঠান হালিমকে গ্রেপ্তারের জন্য। পুলিশ সদস্যরা অভিযান চালিয়ে হালিমকে আটক করেন। কিন্তু ধূর্ত হালিম নিজেকে অন্য নামে পরিচয় দিয়ে পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে যায়। গত তিনদিন ধরে হালিম পালিয়ে সিলেটের জাফলংয়ে অবস্থান করছিল। এদিকে, পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে অবশেষে গত বৃহস্পতিবার ওই প্রতিবন্ধী নারীকে বিয়ে করতে সম্মত হয় হালিম মিয়া। এরপর তাকে স্বজনদের মাধ্যমে জৈন্তাপুরে আসার কথা জানায় পুলিশ। রাত সাড়ে ৯টার সময় হালিম মিয়া জৈন্তাপুর বাজারে আসলে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবন্ধী নারীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানায় মামলা রেকর্ড করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে পুলিশ ধর্ষণ মামলায় হালিম মিয়াকে আদালতে পাঠিয়েছে। আর প্রতিবন্ধী ওই নারীকে ওসমানী মেডিকেলের ওসিসি সেন্টারে প্রেরণ করা হয়েছে। জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি শ্যামল বনিক জানিয়েছেন, ‘বিষয়টি জানান পর পর আমি সিদ্ধান্ত নেই অপরাধীকে যেকোনো ভাবে আটক করতে হবে। তাই আমরা ফাঁদ পাতি। সেই ফাঁদে ধর্ষক হালিম পা দিলে আমরা থাকে আটক করতে সক্ষম হই। ধর্ষক হালিমকে আদালতে প্রেরণ করি। আদালত থাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। এদিকে ভিকটিমকে পুলিশ হেফাজতে ওসিসিতে ভর্তি করা হয়েছে।’