× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

হাবিবার অন্য চোখও ঝুঁকিমুক্ত নয়

শেষের পাতা

মরিয়ম চম্পা
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শনিবার

দুপুর পৌনে ১২টা। জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালের ৬ষ্ঠ তলার ৬২৪ নং কেবিনে হাবিবা আক্তার ছোটন তার ভাইকে নিয়ে খেলছিলেন। আরেক হাত দিয়ে বাম চোখের পানি মুছছেন। চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝড়ছে। চোখের সুরক্ষায় নিজের কালো চশমাটি ১৮ মাস বয়সি ভাইয়ের চোখে দিয়ে হাতে তালি দিচ্ছেন হাবিবা। হাবিবার বয়স মাত্র আট বছর। হাবিবার মায়ের চোখে একরাশ হতাশা। মেয়ের পাশের বিছানায় বসে ছেলেকে বুকের দুধ পান করাচ্ছেন আর কান্না করছেন মা রুবিনা আক্তার।
আহত শিক্ষার্থী হাবিবা আক্তার মানবজমিনকে বলে, আমি চাই আমার চোখ। আমি কোনো দোষ করিনি। বন্ধুর জন্য বেঞ্চে বসার জায়গা রেখেছিলাম। এরপর আমি দরজার সঙ্গে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম। এসময় স্যার আমার চোখে আকাশি গাছের জিংলা (ডাল) ছুড়ে মারে। এটি আমার চোখের মনিতে এসে লাগে। ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হলে স্যার আমার চোখে একটি গামছা পেচিয়ে স্কুল ড্রেসের রক্ত ধুয়ে দেন। আমি যন্ত্রণায় চিৎকার করলে স্যার আমাকে ঘুমের বড়ি খাওয়ান। তখন আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এরপর স্যার আমাকে টেনে স্কুল থেকে বাইরে নিয়ে যায়। এসময় মামা এসে আমাকে কোলে তুলে নেয় এরপর আর কিছুই মনে পরছে না।    

হাবিবার মা রুবিনা আক্তার বলেন, কেমনে সুবিচার পাবো আপনারা বলেন। আমার মেয়ে যদি ওইদিন স্কুলে না যেত তাহলে হয়তো তার চোখটা বেঁচে যেত। আজ আমার মেয়েকে অন্ধ হতে হতো না। শিক্ষক নিরঞ্জন দাস আমার মেয়েকে অন্যায় করলেও মারে, না করলেও মারে। সে প্রায়ই বলতো আম্মাগো নিরঞ্জন স্যার আমারে খালি মারে। সে আমার মেয়েকে হাফ মার্ডার না করে একেবারে প্রাণে মেরে ফেলতেন, সেটাও ভালো ছিল। মেয়ের শোকে তিন দিন কেঁদে কেটে মনকে শান্তনা দিতে পারতাম। কিন্তু এখন আমি মেয়েকে নিয়ে কি করবো। চোখের সঙ্গে সঙ্গে আমার মেয়ের ভবিষ্যতও তো অন্ধকার হয়ে গেলো। আমি ডাক্তারকে বারবার বলেছি, যে কোনো উপায়ে আমার মেয়ের চোখ ভালো করা চাই। প্রয়োজনে নিজের একটি চোখ দিবো। তার পরও মেয়ের চোখের আলো ফেরত চাই। আমার মেয়েতো কোনো অন্যায় করেনি। সে তার সহপাঠির জন্য বেঞ্চে বসার জায়গা রেখেছে। এটাই ছিল তার অপরাধ। আমি চোখের বদলে চোখ চাই। শিক্ষক নিরঞ্জনের উপযুক্ত বিচার চাই। আমার এই দুধের মেয়েকে নিয়ে আমি কি করবো। কোথায় যাবো। ডাক্তার বলেছেন, কখনোই আর তার চোখ ভালো হবে না। তার অন্য চোখটিও ঝুঁকিমুক্ত নয় বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চাই। আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী আমার মেয়ের বিষয়টি দেখবেন।

তিন মেয়ের পর এক ছেলে হয়েছে। বোনদের মধ্যে হাবিবা সবার ছোট। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃত্বীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী হাবিবা। স্কুলে চার জন শিক্ষক থাকলেও প্রধান শিক্ষকসহ বাকী তিন জন শিক্ষক কেউ স্কুল রেখে হাতুড়ে ডাক্তারি করেন, কেউ কৃষি কাজ এবং ব্যবসা করছেন। আর মাস শেষে বেতন নেন। শিক্ষক নিরঞ্জন প্রায়ই আমার মেয়েকে সামান্য কারণে বেত দিয়ে পিটাতো। তখন কিছু বলিনি। মেয়েকে বলেছি, শিক্ষকরা বাবা-মায়ের মত। তাদের হাতে মার খেলে কিছু হয় না। কিন্তু এই শিক্ষক যে আমার মেয়ের চোখটাই নিয়ে নিবে কে জানতো। ওর বাবা মো. শাহিন তালুকদার দুবাই প্রবাসী। প্রায় এক যুগ ধরে দুবাইতে আছে। চার ছেলে মেয়েকে নিয়ে আমি ঘর বাহির দুটোই সামলাই। কিন্তু এখন তো আর পারছি না। এই মেয়েকে নিয়ে আমি কি করবো। বর্তমানে একটি সুস্থ সবল মেয়েকে বিয়ে দেয়া যায় না। আর আমার এই মেয়েকে বিয়ে করবে কে? অনেক স্বপ্ন ছিল মেয়েকে পড়ালেখা করিয়ে মানুষ করবো। বড় হয়ে কোনো ভালো একটি চাকরি করবে। আমার সব স্বপ্ন ধুলিস্মাৎ করে দিয়েছে।      

এই ঘটনার পরে বাকী তিন শিক্ষক এবং স্কুলের সভাপতি এখন পর্যন্ত আমার মেয়ের খোঁজ নেননি। এমনকি একবার চোখের দেখা কিংবা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ পর্যন্ত করেনি। এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সদর থানায় পুলিশ মামলা করেছে। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করিনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর