× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

গোয়ালঘরের সেই মাকে ঘরে তুললো ছেলে

বাংলারজমিন

স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে
১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার

 দৈনিক মানবজমিন-এ সংবাদ প্রকাশের পর গোয়ালঘরে থাকা জনম দুঃখী মা শমলা বিবিকে দেখতে গেছেন হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শেখ মহিউদ্দিন। সঙ্গে নিয়ে গেছেন বয়স্ক ভাতার বই। গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইউএনও শেখ মহিউদ্দিন উপজেলার সাহেদল বড়বাড়িতে শমলা বিবির বাড়ি যান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সাহেদল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ্‌ মাহবুবুল হক ও উপজেলা সমাজসেবা অফিসার খলিলুর রহমান সরকার। সেখানে স্থানীয় দুই ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম ও মো. সেলিম, গণমাধ্যমকর্মী এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ইউএনও শেখ মহিউদ্দিন ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধা শমলা বিবির হাতে বয়স্ক ভাতার বই তুলে দেন। এছাড়া শমলা বিবির জন্য একটি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করা হবে বলেও তিনি জানান। এসময় শমলা বিবি’র চার ছেলে গিয়াস উদ্দিন, ইমান উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন ও নিজাম উদ্দিন তাদের মায়ের ভরণ-পোষণসহ যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবেন বলেও ইউএনওকে আশ্ব্‌স্ত করেন। ইউএনওর সামনেই বড় ছেলে গিয়াস উদ্দিন মায়ের পা ছুঁয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এ সময় ছেলেকে বুকে জড়িয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন শমলা বিবি। গোয়ালঘরে রাখা মাকে তুলে নেন নিজের পরিপাটি ঘরে। আরেক ছেলে হেলাল উদ্দিনও তাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে ইউএনও শেখ মহিউদ্দিন জানান, দৈনিক মানবজমিন-এর সংবাদ দেখে তিনি এই মায়ের খোঁজখবর নিতে তার বাড়ি যান। সেখানে গিয়ে তিনি তার হাতে বয়স্ক ভাতার বই তুলে দিয়েছেন। একটি হুইল চেয়ারও তাকে দেয়া হবে। চার ছেলেই মায়ের ভরণ-পোষণের ব্যাপারে তাকে আশ্বস্ত করেছেন। গোয়ালঘর থেকে মাকে বড় ছেলে গিয়াস উদ্দিন তার ঘরে তুলে নিয়েছেন।
ইউএনও শেখ মহি উদ্দিন বলেন, এই মায়ের ভরণ-পোষণের ক্ষেত্রে কোন ব্যত্যয় হলে ছেলেদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই উপজেলায় ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনা যেন না ঘটে সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেয়া হবে।
চার ছেলে ও চার মেয়ের জননী শমলা বিবি হোসেনপুর উপজেলার সাহেদল বড়বাড়ির নবী হোসেনের স্ত্রী। তার চার মেয়েই স্বামীর সংসারে। স্বামী নবী হোসেন আরেক স্ত্রী গ্রহণ করায় খোঁজ নেন না শমলা বিবি’র। তার নামে থাকা দুই শতক জায়গাও লিখে দিয়েছেন ছোট দুই ছেলে হেলাল উদ্দিন ও নিজাম উদ্দিনের নামে। এরপর থেকে ছেলেরাও আর তার কোন খোঁজ নেয় না। স্বামী-সন্তান থেকেও যেন এখন কেউ নেই শমলা বিবি’র। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ছেলেরা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন আর পরিপাটি সুন্দর ঘরে বসবাস করেন। কিন্তু মায়ের স্থান হয়নি তাদের সাথে। অগত্যা পরিত্যক্ত মালামালের মতো তারও ঠাঁই হয় বাড়ির গোয়ালঘরে। গোয়াল ঘরের এক কোণে মাথা গুজে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে শমলা বিবি’র। গত দুই বছর ধরে গোয়ালঘরে গরুর পাশাপাশি নোংরা পরিবেশের মধ্যে একটি ভাঙা চৌকিতে শুয়ে দিন পার করছেন এই সর্বংসহা নারী। সেই গোয়ালঘরে জ্বলে না কোন বৈদ্যুতিক বাতি। এক অন্ধকার প্রকোষ্ঠের মতোই দিন-রাত অন্ধকারের মধ্যে গোয়ালঘরে কাটে তার দিন। গোয়াল ঘরের গোমূত্রের গর্ত, আবর্জনা আর নোংরা পরিবেশে মশার অসহনীয় উৎপাতকে সঙ্গী করে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুকেই নিয়তি হিসেবে ভেবে নিয়েছিলেন এই জনমদুখী মা। শমলা বিবি’র এই অসহায়ত্ব পীড়া দেয় ঢাকা থেকে স্বামীর সঙ্গে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসা মেয়ে নূরজাহান বেগমকে। ভাই হেলাল উদ্দিনকে তার বৈদ্যুতিক মিটার থেকে মায়ের থাকার ঘর গোয়ালঘরে বৈদ্যুতিক বাতির সংযোগ দিতে বলেন। কিন্তু মাস শেষে তার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল বহন করতে হবে বলে বৈদ্যুতিক বাতির সংযোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায় হেলাল। মায়ের দুর্ভোগ আর দুর্দশা সইতে না পেরে স্বামী মানিক মিয়াকে হোসেনপুর থানায় অভিযোগ দিতে পাঠান নূরজাহান। শনিবার (১৪ই সেপ্টেম্বর) দুপুরে মানিক মিয়া অভিযোগ নিয়ে হোসেনপুর থানায় গেলে বিষয়টি জানতে পারেন হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী। অভিযোগ দেখে হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলী সেই মাকে দেখতে হোসেনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও অফিসার ফোর্সসহ বিকালেই ছুটে যান উপজেলার শাহেদল বড়বাড়িতে। তিনি স্থানীয় দুই ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে শমলা বিবিকে ছোট ছেলে নিজাম উদ্দিনের ঘরে তুলে দেন। শমলা বিবি’র ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন দ্বিতীয় ছেলে ইমান উদ্দিনের ব্যবসায়ী ছেলে ওমর ফারুক। এছাড়া চার ছেলে গিয়াস উদ্দিন, ইমান উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন ও নিজাম উদ্দিন দশ দিনের মধ্যে নতুন ঘর নির্মাণ করে দেয়ার লিখিত অঙ্গীকার করেন। এরপরও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোনাহর আলীর উদ্যোগে পুলিশের পক্ষ থেকে এই দুখিনী মায়ের থাকার জন্য একটি নতুন ঘর নির্মাণ এবং যাবতীয় বেডিং এর জিনিসপত্রের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর