× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

হামদর্দ এমডি’র বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তোলায় লক্ষ্মীপুরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ

দেশ বিদেশ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার

হামদর্দ ওয়াক্‌ফ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ মোতাওয়াল্লি ড. হাকীম ইউছুফ হারুন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তোলার প্রতিবাদে ক্ষোভ প্রকাশ এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও এলাকাবাসী। এর আগেও মিথ্যা ও বানোয়াট একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে নানা ধরনের হয়রানি করার অভিযোগ তোলেন বিক্ষুব্ধরা।
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ১৪ই সেপ্টেম্বর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা একেএম শাহজাহান কামাল, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ লক্ষ্মীপুর জেলা কমান্ড কাউন্সিলের সাংগঠনিক কমান্ডার সিরাজ উল্যা মনা বাকশাল, মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মোল্লা, আবদুর রেজ্জাক চৌধুরী ও আবুল খায়ের প্রমুখ। এর দুইদিন পর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় উত্তর জয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজ মাহমুদ বাকী, মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মানববন্ধনে অংশ নেন। একই দাবিতে দক্ষিণ মাগুড়ী আয়েশা কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে।
এদিকে, তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া ’৬৯ সালে রায়পুর আলিয়াতে কামিল এবং ’৭০ সালে তিনি ফেনীতে টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে অধ্যয়ন করেন। ’৭১ সালে তিনি ঢাকার তেওগাঁও থানায় কর্মরত ছিলেন।
’৭১ সালের বাতিল হওয়া কামিল পরীক্ষা তিনি ’৭২ সালে দিয়ে কামিল পাস করেন। ’৭২ সালে পরীক্ষা হলেও কাগজপত্রে তা ’৭১ সাল লেখা থাকায় একটি মহল এটাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। সরজমিন মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্নদলের রাজনীতিক নেতা, পেশাজীবী ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। অপরদিকে, ইউছুফ হারুন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেয়া রায়পুরের গাজীনগরের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইছমাইল তরফদারের সাথে ১৪ই সেপ্টেম্বর তার কথামতো বিভিন্ন স্থানে গিয়েও সাক্ষাৎ করা সম্ভব হয়নি। তিনি সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান। পরেরদিন রোববার সকালে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে অবশেষে তার বক্তব্য জানা যায়। রায়পুরে রাজাকার ও মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার কে কে ছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, রাজাকার কমান্ডার ছিলেন, নজরুল আর মুক্তিযোদ্ধা সিভিলিয়ানদের কমান্ডার ছিলেন, বকুল চৌধুরী আর সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার ছিলেন সুবেদার আবদুল মতিন। ইউছুফ হারুন ভূ্‌ঁইয়ার কোনো ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া ’৭১ সলে রায়পুর আলিয়ার ছাত্র ছিলেন। তিনি কেরোয়াতে লজিং থাকতেন। এর বাইরে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে, রায়পুরে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিয়েছেন এমন কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া নামে কোনো রাজাকার ছিল বলে তাদের জানা নেই। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এ মুক্তিযোদ্ধারা দাবি করেন, যারা আজকে সংবাদ মাধ্যমে ইউছুফ হারুন ভূঁইয়ার নামে মিথ্যাচার করছেন তাদের চরিত্র আগে খুঁজে দেখুন। তাদের কারো কারো কাছে মুক্তিযোদ্ধারাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এই অসাধু লোভী লোকগুলো আজ কোন লোভে পড়ে রাজাকার কমান্ডার ও রাজাকারদের নাম বাদ দিয়ে নিরপরাধ একজনকে রাজাকার কমান্ডার বানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করছেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার জন্য আগে তাদের বিচার হোক।
’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রায়পুর শহরে কুলির কাজ করতেন দেনায়েতপুরের বাসিন্দা ওজি উল্যাহ জানান, রায়পুর তহশিল অফিস ও আলিয়া মাদ্রাসায় ছিল রাজাকার ক্যাম্প, এলএম হাইস্কুলে ছিল সেনাক্যাম্প, কুলির কাজ করার সুবাদে আমাদের সব ক্যাম্পেই যেতে হতো। মাল উঠানামা করতে হতো। রাজাকার কমান্ডার ছিল শায়েস্তা নগরের নজরুল, দেনায়েতপুরের ফিরোজ মেম্বার আর পশ্চিম কেরোয়া গ্রামের তদার বাড়ির সহিদ। কিন্তু ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া নামে কোনো রাজাকারের নাম আজ প্রথম শুনলাম। আমি আজ মরতে বসেছি মিথ্যা কথা বলতে পারবো না। রায়পুর পৌর ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল মোতালেব জানান, আমরা দেখেছি শুনেছি রায়পুরে রাজাকার কমান্ডার ছিল নজরুল এখন নতুন নাম শুনলাম। কেউ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এমন কথা বললেও আমি মিথ্যা বলতে পারবো না। ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া রায়পুরের রাজাকার কমান্ডার ছিল না বা রাজাকার ছিল না। এটা আমি জোর গলায় বলতে পারি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংগ্রাহক ও মুক্তিযোদ্ধা সাবেক শিক্ষক সামছুল ইসলাম চৌধুরী জানান, তিনি লক্ষ্মীপুর জেলার মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সকল ইতিহাস সংগ্রহ করেছেন। ইতিমধ্যে তা বই আকারে প্রকাশ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। রায়পুর এলাকায় তিনি একাধিক অভিযানে সক্রিয় অংশ নিয়েছেন। তিনি সহ লক্ষ্মীপুরের মুক্তিযোদ্ধারা রায়পুর এলএম হাইস্কুলে পাকবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণে অংশ নিয়েছেন। সেই আক্রমণ চলাকালে পাক বাহিনীর গুলিতে তার সাথী সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের বাঙ্গাখাঁ গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার বাসু শহীদ হয়েছেন। রায়পুরে রাজাকার কমান্ডার হিসেবে তিনি নজরুল ও শহীদের নাম শুনেছেন।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ূন কবির তোফায়েল এ প্রতিবেদককে বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া কোনো বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছেন এমন তথ্য তাদের জানা নেই। যুদ্ধকালে বা যুদ্ধ পরবর্তী সময়েও এ নামে কোনো ব্যক্তিকে তারা চিনতেন না এবং জানতেন না। রায়পুর এলাকায় মুক্তিবাহিনীর কমান্ডের দায়িত্বে ছিলেন, সুবেদার আবদুল মতিন। আর রাজাকারের নেতৃত্বে ছিলেন, নজরুল ও সহিদ। যারা পরবর্তীতে মুক্তি বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হন।
সাবেক বেসমারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী ও লক্ষ্মীপুর-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা একেএম শাহজাহান কামাল ড. হাকীম ইউছুফ হারুন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন। তিনি দেশের অন্যতম ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হামদর্দ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ মোতাওয়াল্লি ড. হাকীম ইউছুফ হারুন ভূঁইয়াকে হয়রানির নিন্দা জানান। হামদর্দ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে এই চক্রান্ত ষড়যন্ত্রকে দেশের সর্ববৃহৎ ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বলেও উল্লেখ করেন তিনি। লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার হাতিয়ার হামদর্দ ও এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. হাকীম ইউছুফ হারুন ভূঁইয়াকে কুচক্রী মহলের হাত থেকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর