× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

পৈতৃক সম্পত্তি রক্ষায় মাকসুদা বেগমের আকুতি

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার

মাকসুদা বেগম। ৪৮ বছর বয়সী এই নারী একজন সরকারি চাকরিজীবী। তিনি আরেক সরকারি চাকরিজীবীর রোষানলে পড়ে হিমশিম খাচ্ছেন পৈত্রিক সম্পত্তি রক্ষায়। এটি রক্ষা করতে গিয়ে অন্যায়ভাবে জেল খাটতে হয়েছে তাকে। চাকরিতে ওএসডি হয়েছেন। অনিশ্চয়তা, ভয় আর শঙ্কা নিয়ে দিন কাটছে তার। মাকসুদার বাড়ি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামে। ওই গ্রামেই তার বাবার রেখে যাওয়া ৮৪.৬৬ শতাংশ জমি রক্ষায় তিনি রীতিমতো যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। মাকসুদার বাবা আহাদ আলী ২০০৬ সালে মারা যান।
তার মৃত্যুর পর স্থানীয় বাসিন্দা ডা. রুহুল আমিন ওই জমির মালিকানা দাবি করেন। তিনি জানান, ২১ বছর আগে জমি কিনেছেন। পরে জমি কেনার মিথ্যা দলিল প্রত্যাহারের জন্য মাকসুদা মামলা করেন। আদালত এটি তদন্তের দায়িত্ব দেন পুলিশ ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোকে (পিআইবি)।

ডা. রুহুল আমিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজের বিভাগীয় প্রধান। ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করেন, এই বছরের ১৬ই জানুয়ারি ডা. রুহুল আমিন ও তার লোকজন মিলে ওই নারীর পৈত্রিক সম্পত্তি জোরপূূর্বক দখলের চেষ্টা করেন। আর এতে বাঁধা দিলে নানামুখী হয়রানির শিকার হন তিনি। এর আগে ১১ই জানুয়ারি তাকে একা পেয়ে তার ওপর হামলা হয়েছিল। গলা চেপে ধরে মামলা প্রত্যাহার না করলে চোখ উঠিয়ে ফেলার হুমকি দেন। ১৬ই জানুয়ারী শতাধিক লোক নিয়ে তার জমিতে লোহার গেট নির্মাণের চেষ্টা করেন রুহুল আমিন। তিনি পরদিন ১৭ই জানুয়ারি থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও কাপাসিয়া থানার ওসি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এছাড়াও একাধিকবার তাকেসহ তার পরিবারের সদস্যদের মারপিট করা হয়।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, ডা. রুহুল আমিন তার বাবা ও মায়ের কাছ থেকে জমি কিনেছেন এমন জাল দলিল তৈরি করেন। এই জাল দলিল সংগ্রহ করে মাকসুদা আদালতে দলিল বাতিলের মামলা করেন। মামলা নং ৭৬/১৮। কিন্তু সিভিল এই মামলা চলাকালীন ডা. রুহুল আমিন ফের জমি দখলের চেষ্টা করেন। ফলে, মাকসুদা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারায় মামলা করেন। মামলা নম্বর ১৪৯/১৮। আবার আদালতে মামলা চলাকালীন ডা. রুহুল আমিন সৃষ্ট দলিলের মাধ্যমে অর্জিত জমির নামজারী ও জমিভাগ করার জন্য খারিজের আবেদন করেন। মাকসুদা এরপর গাজীপুর জেলা প্রশাসকের নিকট বিচারাধীন মামলার নালিশি তফসিলের খারিজ না দেয়ার জন্য একটি আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। যার স্মারক নম্বর ০৫.৪১.৩৩০০.০০৯.০৯.১২২.১৬। কিন্তু তারপরেও তরগাঁও ভূমি অফিসের তহশিলদার বাবুল মিয়া নালিশি তফসিলের খারিজ দিয়ে দেন।

গাজীপুর সিনিয়র সহকারী জজ ৩য় আদালতের ৭৬/১৮ দলিল বাতিলের মামলা দায়ের করলে ডা. রুহুল আমিন ও তার সহযোগী আবু সিদ্দিক, পিন্টু, মফিজ, আবুল হাসেম, শামিমসহ ৫/৭ জন লোক বসতবাড়িতে তার অনুপস্থিতিতে রাতের বেলা ক্ষতি সাধন করে। এ ঘটনায় মামলা করলে আদালত তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন। অতপর মামলা প্রত্যাহার করার জন্য ডা. রুহুল আমিন ও তার সহযোগীরা প্রাণনাশের হুমকি দেয়। মামলা করায় আরো ক্ষিপ্ত হয় তারা। এরপর ১৮ই মার্চ অতর্কিত মাকসুদার ওপর হামলা করে। তাকে জোর করে রুহুল আমিনের গাড়ি চালকের উপস্থিতিতে তার গাড়িতে উঠানো হয়। তিনি অভিযোগ করেন, তাকে মামলা প্রত্যাহারের কাগজে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। স্বাক্ষর না করায় প্রায় অর্ধেক রাত তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। তিনি বলেন, আমি ডায়াবেটিকের রোগী আমার কিছু সময় পর পর পানি পান করতে হয়। তাদের কাছে সেদিন বার বার পানি চাওয়ার পরও দেয়নি। তারপরেও স্বাক্ষর না করায় ৩৫(৩)১৯ মামলা দিয়ে কোর্টে চালান করে দেয়া হয়। মাকসুদা ইয়াবার মামলায় ২৮ দিন জেল খাটেন। আবার আটক থাকা অবস্থায় ওসি কাপাসিয়া ও এস আই রাসেলের সহযোগীতায় তার সম্পত্তির গাছ কেটে ফেলে একাংশে বাউন্ডারি নির্মাণ করা হয়।

মাকসুদা বেগম বলেন, তিনি ২৫ বছর যাবৎ সরকারি চাকরি করছেন। এর আগে কোনদিন থানায় যাননি। কিন্তু পৈত্রিক সম্পত্তি রক্ষায় আমাকে জেল পর্যন্ত খাটতে হলো। আমি বর্তমানে ওএসডি অবস্থায় আছি। আমি আমার ও আমার পরিবারের ওপর হয়ে যাওয়া নির্যাতনের বিচার চাই। সেই সঙ্গে আমার পৈত্রিক সম্পত্তিতে শান্তিতে থাকতে চাই। মাকসুদার এসব অভিযোগের বিষয়ে ডা. রুহুল আমিন মানবজমিনকে বলেন, আইন অনুযায়ী কাজ করেছি। ১৪৫ ধারায় নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় খারিজ পেয়েছি। নির্যাতন ও হামলার বিষয়টিও অস্বীকার করেন রুহুল আমিন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর