× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

জয়নালের গ্রেপ্তারকে নাটক বলছে দুদক!

দেশ বিদেশ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শনিবার

রোহিঙ্গাদের এনআইডি তৈরির ঘটনায় জড়িত মূল হোতারা নিজেদের আড়ালে রাখতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচন কমিশনের চট্টগ্রাম ডবলমুরিং থানার সহায়ক জয়নাল আবেদীনকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এমনকি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের হয়েছে।
এটা একটা নাটক। এমনটাই বললেন, দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। তিনি বলেন, মূল হোতাদের বাঁচাতেই এমন কাজটি করা হয়েছে। তবে থানায় মামলা হলেও এ বিষয়ে অনুসন্ধানের পর মূল হোতাদের বিরুদ্ধে নতুন করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শরীফ উদ্দিন জানান, জয়নালকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার আগে একাধিক অভিযানে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মচারী থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার তথ্য পায় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
২০১৫ সাল থেকে এনআইডি জালিয়াতির ঘটনা ঘটলেও, এমনকি যে ল্যাপটপে রোহিঙ্গাদের এনআইডি জালিয়াতি করা হয়েছিল সেটি হারিয়ে গেলেও এতদিন পর্যন্ত কেন নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেয়নি, তা রীতিমতো রহস্যজনক।
দুদক সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের হাতে এনআইডি পাওয়ার পেছনে শুধু জয়নাল আবেদীন বা অফিস কর্মচারীরাই জড়িত নয়। এর সঙ্গে কমিশনের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারাও জড়িত।
যার বিষয়ে সকল তথ্য-উপাত্ত দুদকের হাতে এসে পৌঁছেছে। তবে কর্মকর্তারা নিজেদের বাঁচাতে জয়নালকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। কয়েকজন কর্মচারীকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে।
সূত্র আরো জানায়, নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে আঞ্চলিক কর্মকর্তাকে ল্যাপটপ হারানোর বিষয়ে জানতে চাইলে এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। বরং, নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে দাবি করা হয়েছিল, রোহিঙ্গারা যে ল্যাপটপের মাধ্যমে ভোটার হয়েছে তা কমিশনের কোন ল্যাপটপই নয়।
৪৩৯১ ও ০৩৫১ ল্যাপটপটির বিষয়ে তথ্য চাইলেও তারা এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। অভিযানের দু’দিন পর লিখিতভাবে জানানো হয়-রোহিঙ্গারা ভোটার হওয়ার পেছনে এই ল্যাপটপটি ব্যবহার করাই হয়নি। অথচ দুদকের সর্বশেষ অভিযানের একদিন পর গত সোমবার রাতে ডবলমুরিং থানার অফিস সহায়ক জয়নালকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন নির্বাচন কমিশন।
নিজেদের রক্ষা করতেই এমনটি করা হয়েছে। মূলত নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা ফেঁসে যাওয়ার বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই একদিনের মাথায় এমন কাজটি করেছেন। যা অনেকটা নাটক বলেও মন্তব্য করেন দুদকের কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার পেছনে শুধুমাত্র নির্বাচন অফিস সরাসরি জড়িত থাকলেও ফেঁসে যেতে পারেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধারাও। কেননা, প্রাথমিক পর্যায়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে জন্ম নিবন্ধন কার্ড বা প্রত্যয়নপত্র নিয়েই তারপর নির্বাচন কমিশনে ভোটার হতে আবেদন করতে হয়।
কিন্তু জনপ্রতিনিধিরাও এই কাজে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করেছেন বলেও দুদকের অনুসন্ধানে ওঠে আসে। যার কারণে তারাও এই কাজে সহযোগী হিসেবে ফেঁসে যেতে পারেন।
এরমধ্যে চট্টগ্রাম নির্বাচন অফিস থেকে বাঁশখালী এলাকায় ভোটার হওয়া ফরম নম্বর ৪১৮৬৩৩ থেকে ৪১৮৭০১ পর্যন্ত ৬৮ জনের তালিকা দুদকের কাছে দেওয়া হয়। এই ৬৮ জনের মধ্যে মোস্তফা আলী নামে মাত্র একজন বাংলাদেশি ভোটার হলেও বাকি ৬৭ জনই ছিল রোহিঙ্গা। আবার এই মোস্তফা আলীই গ্রেপ্তার হওয়া জয়নালের আত্মীয়।
এই ৬৮ জন চট্টগ্রাম নির্বাচন অফিসের ফরম নং-২ দিয়েই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু এই ফরম শুধুমাত্র নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারাই দিতে পারেন। যদি এসব ফরম নকল বা জালিয়াতি করেই হতো তাহলে সেখানে কিভাবে নির্বাচন কমিশনের নম্বর দেয়া থাকে, সে বিষয়টিও নির্বাচন কমিশনের এড়িয়ে যাওয়ার ক্ষমতা নেই বলে জানান, দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার পেছনে কক্সবাজারের সকল থানার নির্বাচন কমিশন অফিসের কর্মকর্তা জড়িত। এর বাইরে চট্টগ্রাম নির্বাচন অফিসের এই চক্রটির সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজগুলো সমপন্ন করা হয়। যার বিষয়ে তদন্ত করতে শীঘ্রই কক্সবাজার যাওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক রতন কুমার দাশ বলেন, আমরা শুধুমাত্র চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশন থেকে তথ্য পেয়েছি। তবে এই কাজে আর কারা জড়িত আছে, তা দেখতে প্রয়োজনে অন্য অফিসগুলোতেও অভিযান চালানো হবে।
নির্বাচন কমিশন এ ঘটনায় জড়িত পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করলেও এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের অনুসন্ধান অব্যাহত থাকবে। মূলহোতা যারাই হোক, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুধু নির্বাচন অফিস নয়, এই কাজে সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনে জনপ্রতিনিধিদেরও হাজির করা হবে।

অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর