বিয়ের পুরনো প্রথা ভেঙে দিলেন মেহেরপুরের ছেলে আর চুয়াডাঙ্গার এক তরুণী। বর পক্ষের লোকজন অনাড়ম্বর পরিবেশে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজন করেন কনে যাত্রীর জন্য। কনে যাত্রীকে বরণ করতে বরণ ডালা সাজিয়ে অপেক্ষমাণ বরপক্ষ। গানের তালে তালে গাড়ির সামনে লাল টুকটুকে বেনারসি পরে বাহারি সাজে কনে বেশে বসে বরের বাড়িতে গিয়ে বিয়ে করলেন তরুণী। এই ব্যতিক্রমী বিয়ের ঘটনাটি ঘটে শনিবার মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চৌগাছা গ্রামে। সেখানে কনে পক্ষের শতাধিক কনে যাত্রীর সঙ্গে বরপক্ষের তিন শতাধিক আমন্ত্রিত অতিথি ছিলো। আর এই বিয়ে দেখতে হাজির হয়েছিল বিভিন্ন বয়সের হাজার খানেক বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ। পাত্রী চুয়াডাঙ্গার কামারুজ্জামানের মেয়ে খাদিজা আক্তার খুশি।
সে বাড়ির ছোট মেয়ে। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ইকোনমিক্সের ২য় বর্ষের ছাত্রী। তাই তার বিয়েতে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা করতেই প্রথা ভেঙে অভিভাবকদের সম্মতিতে বরের বাড়িতে আসেন বিয়ে করতে যাত্রী নিয়ে। ফুল দিয়ে সজ্জিত একটি জিপ। সেই জিপের পিছনে বসে আছেন কনের বান্ধবী ও বোনেরা। আর কনে বসে আছেন জিপের সামনে। শুধু বর-কনে নয়, বিয়ের এমন সিদ্ধান্তে সম্মতি ছিল উভয় পরিবারের। কনে তার অনুভূতিতে জানায় সনাতন পদ্ধতির বিলুপ্তি আর নারীদের সমতা প্রতিষ্ঠায় আমার ইচ্ছাতেই পরিবারের এমন সিদ্ধান্ত। যৌতুক প্রথা বিলুপ্ত আর নারী অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে বলে এমন ব্যতিক্রম সিদ্ধান্ত। তাছাড়াও ছোটবেলা থেকেই বলে আসতাম বিয়ে করতে হলে ভিন্নধর্মী বিয়ে করে দৃষ্টান্ত স্থাপন।
এই বিয়ের পাত্র ছিলেন চৌগাছা গ্রামের আবদুল মাবুদের ছেলে তরিকুল ইসলাম জয়। যৌতুকহীন এই বিয়ে প্রসঙ্গ কনের পিতা কামরুজ্জামান বলেন, ছেলে-মেয়েদের সমঅধিকার বাস্তবায়নেই আমরা অভিভাবকেরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে মেয়েকে ছেলের বাড়িতে এনে বিয়ের আয়োজন করি। পাত্রের বাবা আবদুল মাবুদও অভিন্নসুরে জানান- ব্যতিক্রম সবসমই চমকের। প্রথা ভাঙ্গতেই এমন আয়োজন। আগামীতে যাতে মেয়েরাও ছেলেদের বাড়ি এসে বিয়ে করতে উৎসাহী হয় তারজন্য এমন বিয়ের একটি ইতিহাস গড়তে চেয়েছিলাম। সফল হতে পেরে ভালো লাগছে। কনে খাদিজা আক্তার খুশি বলেন, নারী-পুরুষের সমান অধিকার হিসেবে একজন মেয়ে একজন ছেলেকে বিয়ে করতে তার বাড়িতে যেতে পারেন তা কখনো বাস্তবায়ন হয়নি। সেই বাধার বৃঁত্ত ভেঙে আমি শুরু করেছি। আশা করছি অনেকেই এখন এটি করবেন।
বিকেলে বরকে নিয়ে কনে চলে গেছেন তার পিতার বাড়িতে। সেখানে কয়েকদিন কাটানোর পর কনে সঙ্গে নিয়ে বর ফিরে আসবেন স্বামীর গৃহে।