× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

স্কুলেও ছাত্ররাজনীতি শঙ্কিত শিক্ষকরা

এক্সক্লুসিভ

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে
১৪ অক্টোবর ২০১৯, সোমবার

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়িয়ে ছাত্র রাজনীতির কালো থাবা গড়িয়েছে স্কুলেও। এরমধ্যে শুধু হাইস্কুল নয়, বাদ নেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ও। বিশেষ করে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাও জড়িয়ে গেছে ছাত্র-রাজনীতিতে। যার মধ্য থেকে জন্ম নিয়েছে শিশু-কিশোর গ্যাং। ছাত্র-রাজনীতির ভয়ঙ্কর এমন রূপ ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম মহানগরীর সড়কের অলি-গলি ও মোড়ে মোড়ে। যাদের ছায়া হিসেবে রয়েছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কথিত বড় ভাইরা। শিশু-কিশোর অপরাধ আইনের সুুবিধে এবং পুলিশের নজরদারি এড়াতে স্কুলছাত্রদের ব্যবহার করছে তারা। বিনিময়ে অপরাধ জগতের অর্থের লোভ ও নেতৃত্বের নামে আধিপত্য বিস্তারের দাপট ছড়াচ্ছে এসব স্কুলছাত্র।
যাদের সংখ্যা প্রতিটি স্কুলে এখনো অর্ধশতের নিচে। যাদের ভয়ে সবসময় শঙ্কিত বলে জানান ছাত্র-রাজনীতির কবলে পড়া স্কুলের শিক্ষকরা। নাসিরাবাদ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল আলম হোসাইনী জানান, পঞ্চম থেকে নবম-দশম শ্রেণির দুর্বল ছাত্ররা ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নামধারী কথিত বড় ভাইদের সংসপর্শে থাকে। ক্লাস চলাকালে তাদের রাস্তায় দেখা যায়। কিন্তু আমাদের পক্ষে তো তাদের রাস্তা থেকে ধরে আনা সম্ভব না। আমরা অভিবাবককে ডেকে ছেলের বিষয়ে অবহিত করি। কিন্তু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন চোখে পড়ে না। এমন ছাত্রসংখ্যা ২০-৩০ জনের বেশি হবে না উল্লেখ করে নাসিরাবাদ হাই স্কুলের এই প্রধান শিক্ষক বলেন, আমি যোগদানের আগে বহিরাগত বড় ভাইরা ক্লাস চলাকালীন স্কুলের ভিতরে চলে আসতো বলেও শুনেছি। তবে এখন এমন পরিস্থিতি নেই। বিষয়টি সরাসরি স্বীকার না করলেও ছাত্রদের একটি অংশ এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে শুনেছেন বলে জানান চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যায়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু ইউসুফ। ক্লাস চলাকালীন স্কুল ড্রেস পরিহিত অবস্থায় কিছু ছাত্রকে বিভিন্ন সময় মিছিল-সমাবেশে দেখা যায়-অনেকে এমন অভিযোগ করেছেন বলে জানান এই প্রধান শিক্ষক। শিক্ষকরা জানান, শিক্ষার্থীরা ক্লাসে নিয়মিত না আসলে এবং ঠিকমতো পড়া না শিখলে ওই ছাত্রদের অভিভাবক নিয়ে আসতে বলা হয়। কিন্তু দেখা যায়-অভিভাবক না এনে ওই ছাত্ররা বড় ভাইকে নিয়ে আসে। বড় ভাই হিসেবে কখনো একজন বা একাধিকজনও আসে। তারা এসে ওই ছাত্রকে মাফ করে দিতে বলে। অন্যদিকে, ক্লাসে কোন ছাত্রকে বকা দিলে সে যদি বড় ভাইদের সংসপর্শে থাকে সেক্ষেত্রে বড় ভাইদের কাছ থেকে মাঝে মাঝে হুমকি পাওয়ার কথাও জানান শিক্ষকরা। একাধিক শিক্ষক বলেন, স্কুলে এসে অথবা ফোনে পরোক্ষভাবে হুমকি দেন কথিত বড় ভাই। বলেন-স্যার, ওকে (সংশ্লিষ্ট ছাত্রকে) বেশি শাসন কইরেন না। ফোনে তো দেখা যায় না, সরাসরি এসে যখন বলে তখন কথিত বড় ভাইদের শারীরিক ভাষা খুব চোখে লাগে। শিক্ষক হিসেবে তখন খুব কষ্ট
হয় বলেও আক্ষেপ করেন একজন শিক্ষক। সরকারি মুসলিম হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জিয়াউল হক হেনরী বলেন, বার্ষিক পরীক্ষায় এক বা দুই বিষয় ফেল করলে কিছু ছাত্র অভিভাবকের পরিবর্তে বড় ভাইকে নিয়ে আসে। ফেল করা ওই ছাত্রকে প্রমোশন দিতে অনুরোধ জানায় কথিত বড় ভাইরা।
তিনি বলেন, স্কুলের অভ্যন্তরে কোন ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ নেই। কিছু ছাত্র স্কুলের বাইরে এ ধরনের কার্যক্রমে জড়িত। দুপুর ১২টার দিকে মর্নিং শিফট ছুটির পর ছাত্ররা এই কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়। কিন্তু ক্লাস চলাকালীন এ ধরণের কোন সুযোগ ছাত্ররা পায়না।
কয়েকজন অভিভাবক জানান, নাসিরাবাদ, বাকলিয়া, কলেজিয়েটসহ ৯টি সরকারি হাইস্কুলের আশেপাশে প্রায় সময়ই বড় ভাইদের অবস্থান চোখে পড়ে। বিশেষ করে ক্লাস শুরু ও ছুটি এবং টিফিনের সময়ে স্কুল গেটের কাছেই অবস্থান নেয় বড় ভাইরা। এসব বড় ভাইরা ওমরগণি এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, সিটি কলেজ কেন্দ্রিক ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সমপৃক্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহসিন কলেজের বড় ভাইরা ক্লাস চলাকালীন কিছু ছাত্রকে ডেকে নিয়ে যায়। এ সময় কিছু বলার সাহস থাকে না শিক্ষকদের। এ নিয়ে এক ছাত্রকে বকা-ঝকা করায় ছুরি মারার হুমকিও দেয়া হয় স্কুলের এক শিক্ষককে। মূলত এরপর থেকেই বড় ভাইদের ভয়ে সর্বদা আতঙ্কিত থাকেন শিক্ষকরা।
স্কুলছাত্ররা বড় ভাইয়ের সংসপর্শ এবং রাজনীতির সঙ্গে সমপৃক্ততার কারণে সমাজ ভয়ানক পরিণতির দিকে এগুচ্ছে মন্তব্য করে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলাম বলেন, এরা তো শিশু। এরা রাজনীতির কি বুঝবে। স্কুল পর্যায়ে কোন ধরণের রাজনীতির সমপৃক্ততা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, ছাত্রদের গণতন্ত্র শেখাতে এবং নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে স্কুলে স্কুলে স্টুডেন্ট ক্যাবিনেট গঠন করে দেয়া হয়েছে। তাই রাজনীতি দিয়ে এই স্কুল ছাত্রদের নেতৃত্বের বিকাশের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।
গত বছরের একটি ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে গিয়ে তিনি বলেন, নগরীর নামকরা একটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে সামান্য বকা দিয়েছিলেন এক শিক্ষক। পড়ালেখায় নিয়মিত মনোযোগী না হওয়ায় ওই শিক্ষক অভিভাবকসুলভ এমন বকা দেন।
কিন্তু ওইদিন রাতেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের মোবাইলে ফোন করেন এক যুবক। নিজেকে বড় ভাই পরিচয় দিয়ে ওই ছাত্রীকে বকা-ঝকা করা থেকে বিরত থাকতে বলেন শিক্ষককে। তবে অনুরোধের ভাষায় নয়, রীতিমতো শাসিয়ে। পরে ওই শিক্ষক বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে জানান। আর শিক্ষাবোর্ডের এক বৈঠকে প্রধান শিক্ষক ঘটনাটি তুলে ধরেন।
পরে শিক্ষকরা জানতে পারেন, বড় ভাই পরিচয় দেয়া যুবকটি ওই ছাত্রীর বড় ভাই ছিল না। ওই ছাত্রীর নাকি একজন ছেলে বন্ধু ছিল। ক্লাসে শিক্ষকের বকা দেয়ার বিষয়টি ছাত্রীটি তার ছেলে বন্ধুকে জানালে ওই ছেলে বন্ধু তার কথিত বড় ভাইকে দিয়ে ফোনটি করায়।
শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান শাহেদা ইসলাম বলেন, নগরীর সবকটি হাই স্কুলের ছাত্রদের একটি অংশের কিশোর গ্যাংয়ে জড়ানো এবং বেপরোয়া হয়ে ওঠার বিষয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে। আর এর কারণ হিসেবে ওঠে আসে বড় ভাইদের সংসপর্শ বা অপরিণত বয়সে রাজনীতির সমপৃক্ততা। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষকরা হতাশা প্রকাশ করেন। শিক্ষকদের মাঝে এ নিয়ে ভীতির সঞ্চার ও অনেক সময় শঙ্কিত বোধ করেন বলে প্রধান শিক্ষকগণ বৈঠকে জানান।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর