জাহাঙ্গীর আলম সরকার নামে কুমিল্লা জেলার গৌরিপুর ইউনিয়নের এক ব্যবসায়ীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই রায়ে আরো ৪ জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্রভুক্ত ৩ আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। সোমবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালে দায়িত্বরত বিশেষ জজ মো. আব্দুল হালিম এ রায় দেন। খুনের শিকার ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম সরকার কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুর ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের ফজর আলীর ছেলে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে দায়িত্বরত রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আইয়ুব খান বলেন, আসামিদের সঙ্গে ভিকটিম জাহাঙ্গীরের যৌথ অংশীদারিত্বে গৌরিপুর মৎস্য প্রকল্প নামে একটি ব্যবসা ছিল। ওই ব্যবসা নিয়ে তাদের মধ্যে ২০১৩ সালে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
এছাড়া জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে স্থানীয় সমাজকে দু’ভাগে ভাগ করা নিয়ে আসামিদের ক্ষোভ ছিল। এর জেরে ২০১৩ সালের ১লা ডিসেম্বর রাত ৮টায় গ্রামে মাহফিল থেকে ফেরার পথে জাহাঙ্গীরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বলে সাক্ষ্য প্রমাণে উঠে এসেছে। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আইয়ূব খান জানান, জাহাঙ্গীরকে খুনের ঘটনায় তার বাবা ফজর আলী ২০১৩ সালের ২রা ডিসেম্বর দাউদকান্দি থানায় ১৩ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল ও আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠনের পর ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর সোমবার এই রায় দেয়া হয়েছে।
রায়ে জাহাঙ্গীরকে হত্যার দায়ে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় যাদের ফাঁসি হয়েছে তারা হলেন- একই গ্রামের হারুন মিয়া ও তার দুই ছেলে মো. সজিব ও মো. রাজিব। ওই গ্রামের মো. শাওন, আমিন, মো. রবু, মো. মোমিন, মহসিন ও আবু তাহের। দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে মো. মতিন, শাহপরাণ ও মো. শামীম নামে তিন আসামির। দণ্ডবিধির ৩০২, ১১৪ ও ৩৪ ধারায় মো. খোকন মিয়া নামে একজনকেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া নয়ন মিয়া, মোছলেম মিয়া ও বিল্লাল মিয়া নামে তিনজন বেকসুর খালাস পেয়েছেন।
আইয়ূব খান আরো জানান, আসামির মধ্যে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত শাওন ও আমিন এবং খালাস পাওয়া নয়ন মিয়া ঘটনার পর থেকে পলাতক আছেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হারুন, সজীব, রাজীব, মোমিন ও রবু ঘটনার পর গ্রেপ্তার হলেও পরে জামিনে গিয়ে তারা পলাতক হয়ে যান। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আবু তাহের ও মহসিনসহ ৫ জন কারাগারে রয়েছেন।