× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মাকে গোয়াল ঘরে পাঁচ মাস বেঁধে রাখে সন্তানরা

বাংলারজমিন

মো. মিজানুর রহমান, বরগুনা থেকে
১৭ অক্টোবর ২০১৯, বৃহস্পতিবার

বরগুনায় গর্ভধারিণী মাকে মানসিক রোগী আখ্যা দিয়ে কোমরে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখে সন্তানরা। বিগত পাঁচ মাস ধরে বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নের চরধুপতি এলাকার ওই বৃদ্ধার দিন কেটেছে গোয়াল ঘরেই। সংবাদ পেয়ে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহর নির্দেশে খবিরুন্নেসা (৭৫) নামের ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে তার মেয়ের জিম্মায় দেয়া হয়েছে।

জানা যায়, পৈতৃক সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা হওয়ায় পর ছেলেদের কেউ বৃদ্ধা মায়ের যত্ন নিতে রাজি হয়নি। এ কারণে তাকে অবহেলায় গোয়াল ঘরে ফেলে রাখা হয়েছে। কোথাও যেন যেতে না পারেন সে কারণে কোমরে লোহার শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। ওই গোয়াল ঘরেই দিনে একবার তাকে খাবার দেয়া হতো।

স্থানীয় প্রতিবেশীরা জানায়, বয়সের ভারে কানে একটু কম শুনলেও খবিরুন্নেসা মানসিকভাবে স্বাভাবিক। বিগত পাঁচ মাস ধরে মা খবিরুন্নেসাকে (৭৫) গোয়াল ঘরে বিছানা পেতে গরু বাঁধার দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। একদিন দড়ি খুলে তিনি মেয়ের বাড়িতে যাওয়ার পথে ফের তাকে ছেলেরা ধরে আনেন।
পরে একই স্থানে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। শেকল বাঁধা অবস্থায় প্রায় পাঁচ মাস ধরে তিনি গোয়াল ঘরেই জীবনযাপন করছেন। প্রতিবেশী হুমায়ুন কবীর জানান, খবিরুন্নেসা দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জননী। দুই বছর আগে স্বামী আবদুল হামিদ খান মারা যাওয়ার পর সহায় সম্পত্তি ছেলে-মেয়েরা ভাগ করে নেন। মা খবিরুন্নেসার ভরণপোষণ নিয়ে ছেলেদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে এক বৈঠকে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সহায়তায় দুই ছেলে মিলে ভরণপোষণ করবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু ছেলেদের কেউই ঠিকমতো মায়ের যত্ন নেননি। এছাড়াও রোগে খবিরুন্নেসার শারীরিক অবস্থারও অবনতি হতে থাকে। গত মঙ্গলবার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বরগুনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওই বাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেন। এসময় তাকে পোশাক ও টাকা দিয়ে মেয়ে তাসলিমার জিম্মায় দেয়া হয়। ছেলেরা তাকে গোয়ালঘরে রাখলেও এ বিষয়ে খবিরুন্নেসা বারবারই বলছিলেন, আমার পোলারা আপনাগো দোয়ায় মোরে ঠিকমত খাওন দাওন দেয়। হ্যারা অনেক ভালো। নানাভাবে জানতে চাইলেও ছেলেদের নিয়ে কোনো অভিযোগ করেননি ওই বৃদ্ধা মা। খবিরুন্নেসার ছোট ছেলে বাচ্চুকে এসময় ঘরে পাওয়া যায়। বাচ্চু জানান, তিনি মায়ের ঠিকমতই ভরণপোষণ করছেন। গোয়াল ঘরে কেন রাখলেন-জানতে চাইলে বাচ্চু বলেন, মায়ের মাথায় সমস্যা। আমি বাইরে কাজে ব্যস্ত থাকি। মা কোথায় কখন চলে যায় তাই বেঁধে রেখেছি। বড় ছেলে বাদলের স্ত্রী বেবি বলেন, তার শাশুড়ি মানসিক রোগী। সে কারণে তাকে ছেলেরা বেঁধে রেখেছেন। স্থানীয় গৌরিচন্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তানভীর হোসেন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বৃদ্ধা খবিরুন্নেসাকে যথাসাধ্য সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়াও তার ভরণপোষণ যাতে নিশ্চিত করা হয় সে বিষয়ে ছেলেদের ডেকে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। বরগুনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি চরম অমানবিক। এটি সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ছাড়া কিছু না। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে উদ্ধার করে মেয়ে তাসলিমার জিম্মায় দিয়ে ছেলেদের ভরণপোষণ নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছি। এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর