কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রথম ব্যাচে ভর্তি ফরম ও রেজিস্ট্রেশন ফরমে অঙ্গীকারনামায় রাজনীতি ও ধূমপান মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার অঙ্গীকার নেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে ঘটে উল্টো। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষক রাজনীতিও সরব।
২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩তম ব্যাচ চলমান। এ ক্যাম্পাসটিতে ছাত্র রাজনীতির প্রভাব বিস্তার করছে সর্বত্র। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দই নিয়ন্ত্রণ করে আবাসিক হলগুলো। ২০১১ সালে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৫ সালে ১০ সদস্যবিশিষ্ট প্রথম কমিটি ঘোষণা করা হয়।
বর্তমানে ২০১৭ সালে গঠিত ছাত্রলীগের দ্বিতীয় কমিটি চলছে।
২০১৬ সালের ১লা আগস্ট দু’গ্রুপের সংঘর্ষে মৃত্যুবরণ করেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তদন্ত কমিটি হলেও আজও তা আলোর মুখ দেখেনি। দলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর, শিক্ষক লাঞ্ছনা, সাংবাদিকদের মারধর ও লাঞ্ছনা এবং ছিনতাইয়ের অভিযোগ থাকলেও বিষয়গুলো বারবারই এড়িয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রায় শতাধিক ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ জানানোর পরেও একটি ঘটনারও বিচার করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ছাত্রলীগ থেকে আজীবন, সাময়িকসহ বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছিল নীরব। এমনকি প্রশাসনের কাছে বিচার দিলে ছাত্রলীগের সঙ্গে বসে সেগুলো মীমাংসা করতেও বাধ্য করতো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ ক’জন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে ভর্তি হই একটি রাজনীতি ও ধূমপান মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে। কিন্তু ভর্তির পরেই তা ভঙ্গ করতে হয় আমাদের। আবাসিক হলগুলোতে যেখানে থাকবে পড়াশুনা করার একটি সুষ্ঠু পরিবেশ সেখানে হল ছাড়তে বাধ্য হয় পড়াশুনা করার জন্য। হলগুলোতে মাদকের আগ্রাসন এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে, এখান থেকে অনেকেই বেরিয়ে আসতে পারছে না। এ বিষয়েও হল প্রশাসন একেবারেই উদাসীন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ ক’জন শিক্ষক বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও ছাত্ররাজনীতি যে প্রকট আকার ধারণ করেছে সেটা ভবিষ্যতের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, প্রভোস্টবৃন্দও যেখানে ছাত্রলীগের নেতাদের কথার বাইরে যেতে পারেন না সেখানে সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী তো কিছুই না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বের অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলেও একেবারে সম্ভব না। বিষয়গুলো নিয়ে আমরা শিক্ষক, ছাত্রনেতা এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে একটা সমাধানে আসবো। যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তাদের আধিপত্যই ক্যাম্পাসে দেখা যায়। এটা একটা রীতি হয়ে গেছে ক্যাম্পাসগুলোতে। যদি ছাত্রনেতারা একসঙ্গে ২০-২৫ জন এসে কোনো বিষয়ে চাপ দেয় সেখানে আমারও তো তেমন কিছু করার থাকে না।