দেশে পরিবারের মোট চিকিৎসার ৭১ শতাংশ খচর হচ্ছে অসংক্রামক রোগের পেছনে। অসংক্রামক রোগে মারা যাচ্ছে ৬৭ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ হৃদরোগ জনিত, ক্যানসারে ১২ শতাংশ, শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগে ১০ শতাংশ, ডায়াবেটিসে ৩ শতাংশ এবং অন্যান্য অসংক্রামক রোগ ১২ শতাংশ মারা যায়। গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ক্লিনিকাল রিসার্চ প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। সংগঠনটি ঢাকায় ১৯ থেকে ২১শে অক্টোরব বিএসএমএমইউতে তিন দিনব্যাপী ‘১ম সায়েন্টিফিক কংগ্রেস অন নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস’ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আইসিডিডিআরবি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের (বিএমজে) উদ্যোগ ক্লিনিকাল রিসার্চ প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ নামে নতুন এই সংগঠন ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করে। যার মূল উদ্দেশ্য চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য গবেষকদের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বাংলাদেশে চিকিৎসা গবেষণার প্রসার ঘটানো। সংবাদ সম্মেলনে বিএসএমএমইউ’র ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া লিখিত বক্তব্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৬ সালের তথ্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগের কারণে ৫ লাখ ৭২ হাজার ৬০০ জন লোক মারা গেছেন।
যা মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ। অসংক্রামক রোগে যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের বেশি ভাগই অকাল মৃত্যু। যাদের বয়স ৩০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। এটা ২০২৫ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনা প্রয়োজন বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যুর হার বেড়েছে ৮ শতাংশ। অর্থাৎ ৫৮ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬৬ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এনসিডি (অননন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস) বিষয়ে প্রথম বৈজ্ঞানিক কংগ্রেসের লক্ষ্য হলো-একটি শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশের চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষকদের মধ্যে গবেষণা সহযোগিতা জোরদার করা। প্রথম বারের মতো আয়োজিত এই কংগ্রেস বাংলাদেশে এনসিডি মোকাবেলা করার জন্য নানান ব্যবহারিক কৌশল বিকাশে সহায়তা করবে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অর্জনে প্রতিরোধ ও চিকিৎসার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগের কারণে অকাল মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস করবে। মানসিক স্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে সহায়তা প্রদান এগিয়ে নেবে। কংগ্রেসের জন্য নয়টি মূল বিষয় নির্বাচন করা হয়েছে। তা হলো (১) হাইপারটেনশন ও কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (২) বাংলাদেশে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ৩) স্ট্রোক ও অন্যান্য স্নায়বিক রোগ (৪) মানসিক স্বাস্থ্য ও নিউরো বিকাশ সংক্রান্ত ব্যাধি (৫) দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ (৬) রিউম্যাটোলজি ও পেশীসংশ্লিষ্ট ব্যাধি (৭) দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসজনিত রোগ (৮) অনকোলজি এবং (৯) বাংলাদেশে এনসিডি’র প্রমাণ: প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ। কংগ্রেসে দেশের ৪০০ জন ক্লিনিশিয়ান ও জনস্বাস্থ্য গবেষক অংশ নিচ্ছেন, যেখানে ২০০ অ্যাবস্ট্র্যাকট জমা পড়েছে। প্রতিটি বিষয়ের অধীনে স্বাধীন জুরি বোর্ড সেরা মৌখিক ও পোস্টার উপস্থাপনার জন্য পুরস্কার প্রদানের জন্য নির্বাচন করবেন। কংগ্রেসটি থেকে এনসিডি বিষয়ে সার্ভিস, পলিসি ও সুপারিশ বিষয়ে নিয়ে একটি ঘোষণা দেয়া হবে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন আইসিডিডিআরবির ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক এবং সাবেক স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার, আইসিডিডিআরবি-এর নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ ইনিশিয়েটিভ শাখার প্রধান ড. আলিয়া নাহিদ।