× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

জীবন-মৃত্যু যেখানে নিয়তিনির্ভর

বাংলারজমিন

রিয়াছাদ আলী, কয়রা (খুলনা) থেকে
১৯ অক্টোবর ২০১৯, শনিবার

মুমূর্ষু রোগীকে নদীপথে জেলা সদরে পৌঁছাতে লেগে যায় ১২ ঘণ্টা। পাড়ি দিতে হয় ১শ’ কিলোমিটার নদীপথ। যথাসময়ে লঞ্চঘাটে যেতে না পারলে ভরসা ট্রলার। দুর্যোগ ও বর্ষা মৌসুমে রোগীর চিকিৎসায় স্বজনদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। এ চিত্র দেশের দক্ষিণের সুন্দরবন সংলগ্ন উপজেলার কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন। শাকবাড়িয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া ও কপোতাক্ষ নদ ভয়াল জালের মতো ঘিরে রেখেছে এ ইউনিয়নকে। এখানকার মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনো সেই মান্ধাতার আমলের হালেই চলছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র দূরে থাক, এখানে একটা ভালো ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই।
সরজমিন ঘুরে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের গোলখালী গ্রামের আ. রাজ্জাক (৪৭), রহিম মোল্যা (৬২) তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, রোগীকে ট্রলারে তুলে দিয়ে এখানকার মানুষ শুধু কাঁদে আর সৃষ্টিকর্তাকে ডাকে।
মুমূর্ষু রোগীদের বেঁচে থাকা নির্ভর করে ভাগ্যের ওপর। ১০-১২ ঘণ্টার নদীপথ পাড়ি দিয়ে ডাক্তারের কাছ পর্যন্ত রোগী পৌঁছাতে পারবে কীনা কেউই বলতে পারে না।  আর ডাঙ্গা পথে রোগী নেয়ার কোনো উপায় নেই। কয়রা হাসপাতাল ৩২ কি. মি. দূরে। কয়রা উপজেলার এ জনপদে ২৫ হাজার মানুষ আধুনিক চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত। হাসপাতাল, ক্লিনিক, এমবিবিএস ডাক্তার কিছুই নেই এখানে। রোগী নিতে এম্বুলেন্স তো দূরের কথা, ভ্যান-টেম্পোর মতো যানবাহনও নেই এখানে। এ ইউনিয়নে ১টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র। তারও অবস্থা শোচনীয়। সেখানে সপ্তাহ ২ দিন ডাক্তার বসে তবে কারোর সঙ্গে দেখা মেলে না বলে অনেকেই জানিয়েছে। দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি কাজ চলছে একটি ভবনে। পরিবার পরিকল্পনা সেবা আর শিশুদের ছাড়া এখানে বিশেষ কোনো সেবার ব্যবস্থা নেই। ভবনে প্রবেশের আগেই মনে হবে এটা পরিত্যক্ত ভবন। কক্ষের ভেতরে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। নেই কোনো বিদ্যুতের ব্যবস্থা। যেন পরিষ্কার করার কোনো লোক নেই। লবণাক্ততার গ্রাসে দেয়াল থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। সন্ধ্যা হলে ভুতুরে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এই কেন্দ্রের অতিরিক্ত দায়িত্ব উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. মানষ ঘোষ বলেন, এখানে শিশুস্বাস্থ্য, মৌসুমী কিছু অসুখ, গর্ভবতী মায়েদের সেবা ও পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি বিষয়ক কিছু সেবা দেয়া হয়। জটিল সমস্যায় রোগীদের  উপজেলা ও জেলা সদরে পাঠানোর পরামর্শ দেয়া হয়। এখানে যে পরিমাণ ওষুধ বরাদ্দ দেয়া হয় তা পর্যাপ্ত নয়।
দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মেজাফফর হোসেন জানান, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জেনারেটর ও অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা না থাকায় রোগীদের ভালো চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। রয়েছে প্রচুর জনবলের অভাব। ৪ জন জনবল থাকার কথা থাকলেও ১ জনের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা পোস্টিং রয়েছে। তিনি বর্তমানে প্রশিক্ষণে রয়েছেন। সবাই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে থাকে। সপ্তাহ ২ দিন এখানে কোনো রকম চিকিৎসা সেবা দেয়। আমিরুল মোড়ল বলেন, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা যোগদানের পর থেকে কোনো দিন এখানে আসতে দেখেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল মোড়ল, সফুরা খাতুন ও আফজাল হোসেন জানান- এ এলাকার রোগীদের বাঁচাতে চিকিৎসার জন্য যেতে হয় জায়গীরমহল, জেলা শহর খুলনা ও পার্শ্ববর্তী জেলা সাতক্ষীরা অথবা শ্যামনগরে। গরিব অসহায় মানুষের ভাগ্যে সে চিকিৎসা জোটে না। তারা নিয়তির ওপর ভর করে দীর্ঘ নদীপথ পাড়ি দিয়ে জেলা সদরে চিকিৎসার জন্য ছুটে। আর এই নদীপথে যাতায়াতের একমাত্র বাহন যাত্রীবাহী লঞ্চ অথবা ট্রলার। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র সম্পর্কে জানাতে গিয়ে ঘড়িলাল এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, এখানে ডাক্তারের কাছে নেয়ার পথে ভ্যানগাড়ি কিংবা যাত্রীবাহী লঞ্চে সন্তান প্রসবের ঘটনা ঘটে। এমন ঘটনার তালিকা অনেক লম্বা হবে। সন্তান প্রসবের কোনো ব্যবস্থাই গড়ে উঠেনি। এ কাজে নিয়োজিত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা নিয়োজিত আছে ঠিকই, কিন্তু জটিল সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা তাদের কাছে নেই।
দক্ষিণ বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান কবি জিএম শামছুর রহমান বলেন, ইউনিয়ন থেকে প্রতিদিন রাত ৯টার দিকে ১টি লঞ্চ জোড়শিং থেকে ছেড়ে যায় জেলা শহর খুলনার উদ্দেশ্যে। এরপর সারাদিন ও সারা রাতের মধ্যে যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা নেই। মুমূর্ষু রোগীকে খুলনার যেকোনো হাসপাতালে পৌঁছাতে সময় লাগে ১২ ঘণ্টারও বেশি। লঞ্চের সময় পেরিয়ে গেলে একমাত্র ভরসা ইঞ্জিনচালিত নৌকা অথবা ট্রলার। এতে সময় ও খরচ দুটোই বেড়ে যায়। তিনি আক্ষেপ করে আরো বলেন, সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারায় পথেই অনেক রোগীর মৃত্যু ঘটে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, প্রত্যন্ত জনপদ হওয়ায় তিনি নিজ উদ্যোগে ঘড়িলাল বাজারে তাদের লোকবল দিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করার ব্যবস্থা করেছেন। অনেক লোক সেখানে কোনো রকম স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর