× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মাগুরায় নবগঙ্গা নদীর পাড় দখল

বাংলারজমিন

মাগুরা প্রতিনিধি
১৯ অক্টোবর ২০১৯, শনিবার

মাগুরা শহরের কোটপাড়ায় সরকারি খাস জমিতে ৩০ বছর ধরে বসবাস করছেন পানু দাস।  তার টিনের চালার ঘরটি তৈরি হয়েছে নবগঙ্গা নদীর পাড় দখল করে। এমনকি বাড়ির একাংশে কিছু স্থাপনা রয়েছে একদম জলাধারের উপরে।  
সম্প্রতি বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশন নদী দখলদারের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তার মধ্যে একজন এই পানু দাস। পেশায় ঝাড়ুদার পানু দাস জানান, তারা প্রায় ৩০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছেন। অন্য কোথাও ভিটেমাটি না থাকায় সরকারি জমিতেই মাথা গোঁজার ঠাঁই তৈরি করেছেন। একইভাবে তার প্রতিবেশী প্রদীপ মাল, জালাল শেখ, গোলাপি বেগমসহ অনেকের নাম রয়েছে নদী দখলদারের তালিকায়।  যাদের একটি বড় অংশ ভিটেমাটি ছাড়া। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল ২০১৬ সালে একবার এই এলাকায় উচ্ছেদ চালানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। তখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করা হয়।
পানু দাস জানান, সরকারি জমি হওয়ায় সেখানে পাকা স্থাপনা তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এ কারণে তারা সবাই টিনের চালার বাড়িতেই থাকছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙা নদী থেকে উৎপত্তি হওয়া নবগঙ্গা নদী ২১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ। এরমধ্যে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পড়েছে মাগুরা জেলায়।  ঝিনাইদহ সদরের হাট গোপালপুর বাজার হয়ে যা মাগুরায় প্রবেশ করেছে। পরে শহরের নতুন বাজার হয়ে পূর্বাশা ঘাটে কুমার নদের সঙ্গে মিলে নবগঙ্গা বড় আকার ধারণ করেছে। কুমারে মেলার আগে নদী এমনিতেই সংকীর্ণ, তারপর দখল দূষণে নবগঙ্গার এই অংশের অস্তিত্বই হুমকির মুখে। বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশনের তালিকা অনুযায়ী নবগঙ্গার মাগুরা অংশে দখলদার রয়েছে অন্তত ৮০ জন। যার বেশিরভাগই শহরের কোটপাড়া, নিজ নান্দুয়ালী, নতুন বাজার, বাটিকাডাঙ্গা ও শিবরামপুরে নদীর সংকীর্ণ অংশে।  প্রায় সবই দোকান ও বসতবাড়ি। বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশনের প্রকাশিত তালিকায় দখলদার হিসেবে নাম রয়েছে পশু হাসপাতাল পাড়ার ব্যবসায়ী রজব আলী মজনুর। শহরের ঢাকা রোডে নদীর তীর ঘেঁষে লাবণী স্টিল কর্নার নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি।  
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী রজব আলী মজনু বলেন, এ ধরনের একটি নোটিশ প্রশাসন থেকে তিনি একবার পেয়েছিলেন। তার প্রেক্ষিতে ২০১২ সালের নভেম্বরে জেলা প্রশাসন থেকে জমি মাপা হয়েছিল।  তখন তার প্রতিষ্ঠান নদীর জায়গায় না বলে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছিল। এমন দাবি ওই ব্যবসায়ীর। তিনি আরো বলেন, মাপার সময়ে তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব, ইউএনও, সহকারী কমিশনার ভূমিসহ সরকারের কয়েকটি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সদর উপজেলায় আর দখলদার রয়েছে মধুমতী নদীতে। তালিকা অনুযায়ী উপজেলার কছুন্দি, খোর্দ কছুন্দি ও বাগবাড়িয়া এলাকায় মধুমতীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে ছয়টি ইটভাটা। এর মধ্যে একজন খোর্দ কছুন্দির কে এন্ড বি ব্রিক্সের মালিক মো. মনিরুল খান। তিনি বলেন, ‘অন্যদের কথা বলতে পারবো না, তবে আমাদের ভাটার পুরো জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন।  এর মধ্যে নদীর কোনো জমি নেই।  সিএস, এসএ ও আরএস সব রেকর্ডেই এই জমি আমাদের।  বাপ-দাদার আমল থেকেই এটি আমাদের। নিয়মিত এই জমির খাজনাও দিয়ে আসছি।’ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই এলাকায় মধুমতী নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অন্তত দুই ডজন ইটভাটা। তবে এর কতগুলো নদীর জায়গায় সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। মধুমতী, নবগঙ্গা ছাড়া দখলদার রয়েছে শ্রীপুর উপজেলার হানু নদীতে।  সেখানে বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনাসহ ৪৫ জন দখলদারের নাম রয়েছে তালিকায়। দখল দূষণের কারণে এই নদীও মৃত প্রায়। তবে নদী রক্ষা কমিশন প্রকাশিত এই তালিকাকে ত্রুটিপূর্ণ বলছেন অনেকে। কারণ এখানে কেবল নদী দখলদারের নাম ঠিকানা আর স্থাপনার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। নদীর কি পরিমাণ জমি বেদখল হয়েছে সে বিষয়ে উল্লেখ করা হয়নি।  এ বিষয়ে মাগুরা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শীতেশ চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, এসব ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন থেকে আমাদের কাছে একটি তালিকা পাঠানো হয়। সেখানে যেভাবে চাওয়া হয়, সেই অনুযায়ী আমরা তথ্য দিয়ে থাকি। জেলা প্রশাসন থেকে বিস্তারিত তথ্য চাইলে আমরা সেভাবেই উপস্থাপন করবো। কমিশনের তথ্য অনুযায়ী জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত চিত্রা, ফটকি, মুচিখালী, কুমার ও মধুমতীর অন্যান্য অংশে আর কোনো দখলদার নেই। আর নদী দখলদারের এসব তালিকা করা হয়েছে ২০১৮ সালের প্রথম দিকে।  স্থানীয়রা বলছেন এর পরেও অনেক জায়গা দখল হয়েছে।  
এই তালিকা সম্পূর্ণ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মাগুরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. ফরিদ হোসেন জানান, তালিকাটি যাচাই-বাছাই করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তারা প্রতিবেদন দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে।
নদী দখলদারদের বিষয়ে জেলা প্রশাসক আলী আকবর জানিয়েছেন, এই তালিকা নিয়ে জেলা প্রশাসন কাজ করছে।  প্রক্রিয়া অনুযায়ী শিগগিরই দখলদার উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে। তিনি বলেন, নদী বাঁচাতে ও শহরের সৌন্দর্য বর্ধনে দখলদার উচ্ছেদে কঠোর পদক্ষেপ নেবে জেলা প্রশাসন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর