× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ধর্ষিত পপির আত্মহত্যা /জাহাঙ্গীরের বক্তব্যে সন্তুষ্ট নয় বিশ্বনাথের পুলিশ

দেশ বিদেশ

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
১৯ অক্টোবর ২০১৯, শনিবার

গণধর্ষণের অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছিল বিশ্বনাথের তরুণী পপি বেগম। আর এ গণধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি দক্ষিণ সুরমার জাহাঙ্গীর আলম। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক ছিল। জাহাঙ্গীরকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এরপর তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও মুখ খোলেনি জাহাঙ্গীর। বরং ধর্র্ষণের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়। তার বক্তব্যে স্পষ্ট কিছু মিলেনি। এ কারণে গতকাল আদালতে হাজির করে জাহাঙ্গীর আলমকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
বিশ্বনাথ থানার ওসি শামীম মুছা সন্ধ্যায় মানবজমিনকে জানিয়েছেন, জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্য অগোছালো থাকায় তাকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তিনি বলেন, পপির সুইসাইডাল নোটে জাহাঙ্গীরের নাম ছিল। এছাড়া আরো একজন বারেক নামে রয়েছে। একুশ বছরের তরুণী পপি বেগম। বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিল। ধর্ষণের ঘটনা দুলাভাইসহ পরিবারের লোকজনকে অবগত করেছিল। কিন্তু সবাই ঘটনাটি চেপে যান। এতে অপমান বোধ করে পপি। রাগে-ক্ষোভে আত্মহত্যা করে সে। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় বিশ্বনাথে। পাওয়া যায় পপির সুইসাইডাল নোট। আর এই নোট নিয়ে দেখা দেয় চাঞ্চল্য। পুলিশ সক্রিয় হয়। র‌্যাবও নামে অভিযানে। গতকাল জাহাঙ্গীরকে আটকের কথা জানিয়ে র‌্যাব-৯ গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। এতে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়- গণধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি জাহাঙ্গীর আলমকে ওসমানীনগর থানার লামাপাড়ার আফরোজ মিয়ার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জাহাঙ্গীর সিলেটের দক্ষিণ সুরমার তেতলী চেরাগী গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে। তাকে বিশ্বনাথ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। পারিবারিক সূত্র ও পুলিশ জানিয়েছে, বিশ্বনাথ উপজেলার অলঙ্কারী ইউনিয়নের লালটেক গ্রামের শুকুর আলীর মেয়ে পপি বেগম। গত ৬ই অক্টোবর সে বড় বোন হেপি বেগমের স্বামীর বাড়ি দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলী ইউনিয়নের চেরাগী গ্রামে বেড়াতে যায়। সেখানে ৮ই অক্টোবর রাতে গণধর্ষণের শিকার হয়ে পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে বোনের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরে পপি। বাড়ি ফিরেই দুপুরে ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে। আত্মহত্যার দু’দিন পর পপির ব্যবহৃত ভ্যানেটি ব্যাগে চিরকুট বা সুইসাইডাল নোট পান তার মা। এতে লিখা ছিল-রাতে বোনের বাড়িতে অবস্থানকালে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে পপি ঘরের বাইরে যায়। তখন বারিক ও জাহেদ নামের দুই ব্যক্তি তার মুখ চেপে ধরে তাকে বাড়ির পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায়। তখন তাদের পায়ে ধরে কান্নাকাটি করতে থাকলে তারা মারধর করে পপিকে পাশবিক নির্যাতন করে। নির্যাতনের পর পপিকে বোনের বাড়িতে ফেলে রেখে যায় জাহাঙ্গীর। চিরকুট পাওয়ার পর সেটি পুলিশ উদ্ধার করে। এরপর পপির পিতা আব্দুশ শুকুর ১৪ই অক্টোবর বিশ্বনাথ থানায় মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর তথ্য গোপন করায় পপির ভগ্নিপতি ফয়জুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলী চেরাগী গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নানের পুত্র। পুলিশ জানায়- মামলায় ফয়জুল ইসলামসহ চার জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা হলো- তেতলী চেরাগী গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম, একই গ্রামের আব্দুল মনাফের ছেলে বারিক মিয়া ও মৃত মতছির আলীর ছেলে জাহেদ। পপি বেগমের মা জোসনা বেগম সাংবাদিকদের জানান, তার বড় মেয়ের বাড়িতে গণধর্ষণের শিকার হয়ে বাড়ি ফিরে পপি জানিয়েছিল তাকে কীভাবে তুলে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছিল। কিন্তু মেয়ের ভবিষ্যৎ ও পরিবারের সম্মানের কথা চিন্তা করে তখন পরিবারের সবাই ঘটনাটি গোপন করেছিল। এরপর পপির ব্যবহৃত ভ্যানেটি ব্যাগ যখন হাতে নিয়ে তিনি মেয়ের রেখে যাওয়া স্মৃতি দেখছিলেন তখন ওই ব্যাগের মধ্যে পপির নিজ হাতে লেখা সুইসাইডাল নোট দেখতে পান। সেটি পড়ে জানতে পারেন গণধর্ষণের শিকার হয়ে লজ্জা সইতে না পেরে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর