ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-পোস্তগোলা) নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রবেশমুখে অবস্থিত জেলা পরিষদের ডাক বাংলো এবং চাষাঢ়া ও হাজীগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি। এ দু’টি স্থাপনার কারণে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক দিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রবেশের মুখটি সরু হয়ে আছে। এ কারণে সড়কটির ওই অংশে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকামুখী ও ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জগামী যানবাহনগুলোকে ধীরগতিতে চলতে হয়। এতে দেখা দেয় যানজট। যা পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, সাধারণ পথচারী ছাড়াও এই দুটি স্থাপনার কারণে সরকারি তোলারাম কলেজ, মহিলা কলেজ ও একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থী এবং একটি ক্লিনিকের রোগীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয় যাতায়াতের সময়। তাই নগরবাসী মনে করেন এ দু’টি স্থাপনার কিছু অংশ ভেঙ্গে দিয়ে রাস্তাটি প্রশ্বস্ত করলে যানজটের এ যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হতো নগরবাসী। রাস্তা প্রশ্বস্ত করতে নগরবাসীর এ দাবি ছিল দীর্ঘদিনের।
তবে অতি সম্প্রতি আধুনিক ভবন নির্মাণের জন্য চাষাঢ়া ও হাজীগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি দু’টি ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। এতে করে নগরবাসী স্বপ্ন দেখছে রাস্তাটি হয়তো এবার প্রশ্বস্ত হবে। লাঘব হবে দীর্ঘদিনের যানজট সমস্যার।
এদিকে আধুনিক ভবন নির্মাণের জন্য চাষাঢ়া ও হাজীগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি ভেঙ্গে ফেলায় সেখানে নতুন ভবন নির্মাণের আগে রাস্তা প্রশ্বস্ত করার জন্য কিছু জমি ছেড়ে দিতে আহ্বান জানিয়ে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন করেছে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটি। গত বৃহস্পতিবার নাগরিক কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পুলিশ সুপারের কাছে আবেদনপত্রটি জমা দেন।
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট এবি সিদ্দিক বলেন, চাষাঢ়ায় এ দু’টি স্থাপনার কারণে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের নারায়ণগঞ্জের প্রবেশ মুখটি সরু হয়ে গেছে। ফলে রাস্তার এ অংশেই যানজটের সৃষ্টি হয়। অতীতে নগরে যানবাহনের চাপ কম থাকায় তখন কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় এখন প্রতিনিয়ত রাস্তার এ অংশে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে যানজট ছড়িয়ে পড়ে পুরো শহরময়। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ হচ্ছে এ দু’টি স্থাপনার আংশিক ভেঙ্গে দিয়ে রাস্তাটি প্রশ্বস্ত করা।
নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জে সার্কিট হাউজ নির্মাণের পর জেলা পরিষদ ডাক বাংলোর প্রয়োজন কমে এসেছে।
তাই ডাক বাংলোর কিছু অংশ ভেঙ্গে দিয়ে রাস্তা প্রশ্বস্ত করলে কোনো ক্ষতি হবার কথা নয়। বরং এতে জনগণের কল্যাণ হবে। জনগণের ভোগান্তি লাঘব হবে। যেহেতু এখন বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পুলিশ ফাঁড়ি দু’টি ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে তাই জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের কিছু অংশ প্রশ্বস্ত করার জন্য জেলা পরিষদের ডাক বাংলোর কিছু অংশ ভেঙ্গে দেয়া এখন সময়ের দাবি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বলেন, পুলিশ ফাঁড়ি দু’টি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে আধুনিক ফাঁড়ি ভবন নির্মাণের জন্য। এটা সরকারের প্রকল্প। নাগরিক কমিটির আবেদন পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আসলে এ বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে এজন্য আবেদন করতে হবে।
জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, জনগণের সুবিধার্থে যদি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয় তাতে পরিষদের কোনো আপত্তি নেই। তিনিও স্বীকার করেন সড়কটির ওই অংশ প্রশ্বস্ত করার প্রয়োজন রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেন, যেহেতু রাস্তাটি আমার নির্বাচনী এলাকায় তাই এটিকে প্রশ্বস্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দায়িত্ব আমার ওপরও বর্তায়। যেহেতু এখন পুলিশ ফাঁড়ি দু’টি ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে তাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আমি ডিও লেটার দেবো যাতে রাস্তাটি প্রশ্বস্ত করতে ফাঁড়ি ও ডাক বাংলোর সামনের কিছু জমি ছেড়ে দেয়া হয়।