ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ.আ.ম.স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, উপাচার্যের পদটি একটি সম্মানিত পদ। উপাচার্য পদের মর্যাদা রক্ষ করা যেমন উপচার্যদের দায়িত্ব, শিক্ষকদের দায়িত্ব এবং সরকারের দায়িত্ব। যুবলীগের দায়িত্ব যদি দেয়া হয় তাহলে ভিসির দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারেন জগন্নাথ বিশি^বিদ্যালয়ের ভিসি ড. মিজানুর রহমানের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি একথা বলেন। ছাত্র রাজনীতি বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতি বন্ধের বিষয়টি সমীচিন নয়। বুয়েট কতৃপক্ষ যেটা করেছে সেটা হলো ছাত্র অপরাজনীতি বন্ধ করেছে। যে রাজনীতি একজন মেধাবী ছাত্রের জীবনহরণ করে সেটা রাজনীতি নয়, অপরাজনীতি। ছাত্র রাজনীতি সবসময় থাকবে। রাজনীতির মাধ্যমেই ছাত্রদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী, মূল্যবোধ, দেশপ্রেম জাগ্রত হয়।
ছাত্ররাজনীতি মানুষকে পরিশিলীত করে, মনুষত্ত্ব বিকাশে সাহায্য করে। কিন্তু কোনভাবেই ছাত্র রাজনীতিকে অপরাজনীতিতে নেয়া যাবে না। আমরা চাই, এমন ছাত্র রাজনীতি যা সুষ্ঠু ছাত্র কল্যাণমূলক রাজনীতি, দেশের কল্যাণের রাজনীতি এবং মানব কল্যানের রাজনীতি।
ছাত্র রাজনীতি বন্ধের পাশাপাশি আজ শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের দাবি উঠেছে এমন প্রশ্নে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শিক্ষকদের রাজনীতি করার অধিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্ত্বশাসন কাঠামোতে আছে। শিক্ষকরা রাজনীতি সচেতন হবেন। তারা অবশ্যই রাজনীতি করবেন। কিন্তু সেই রাজনীতি যেন কোনভাবেই শ্রেণীকক্ষে ছাত্রদের মাঝে কোন প্রভাব না ফেলে। ছাত্র শিক্ষকের সর্ম্পকের মাঝে যেন বিরোধ সৃষ্টি না করে। এই রাজনীতি হবে সততার পক্ষে রাজনীতি। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা বিভিন্ন সময় এই রাজনীতি করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের প্রাণ দিতে হয়েছে শুধুমাত্র তাদের রাজনৈতিক আর্দশের বিশ্বাসের কারণে। এই শক্তি নিয়েই কিন্তু আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
শিক্ষকদের রাজনীতি, ছাত্রদের রাজনীতি এই বিষয়গুলোকে যখন সমালোচনার মধ্যে ফেলা হয় এটার কারণ আমরা নিজেরাই। আমরা শিক্ষক রাজনীতি করতে গিয়ে নিজের ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছি। অসততার পথে যাচ্ছি। দুর্নীতির পথে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু যখন আমাদের স্বায়ত্ত্বশাসন দিয়েছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন, শিকক্ষরা তাদের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। সুতরাং সমস্ত স্বাধীনতা তাদের দিয়ে দাও।” আমরা যদি আমাদের বিবেককে লালিত করে এই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হই তাহলে তো সমস্যাগুলো থাকার কথা ছিল না। আমরা রাজনীতি স্বাধীনতার নামে স্বায়ত্ত্বশাসনের অপব্যবহার করি, অপরাজনীতি করি এই দোষ তো আমাদের। এটা তো আর রাজনীতির দোষ নয়। এখন রাজনীতি আর অপরাজনীতির মধ্যে যে ব্যবধান সেটা ভুলে যাচ্ছি আমরা। অপরাজনীতিকে পরিহার করতে হবে।