আশুগঞ্জ যাত্রাপুর গ্রামের মোর্শেদ আলমের মৃত্যুর ১১ দিন পর তার স্ত্রী হত্যা মামলা দায়ের করেছেন আদালতে। যাতে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ করা হয়। এনিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়। তবে এরআগে মৃত্যুর কারণ ‘হৃদরোগ’ জেনেই ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল ছাড়া পরিবারের লোকজন তার লাশ দাফন করেন। মোর্শেদ মিয়া মারা যাওয়ার ৫ দিন পর তার ছেলে মো. কাউছার আলম আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তার পিতার মৃত্যুর কারণ ‘স্ট্রোক’ দেখিয়ে একটি মৃত্যু সনদ গ্রহণ করেন। পুলিশ ও গ্রামের লোকজন জানিয়েছেন, পুকুর ইজারাদারদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মোর্শেদ আলম মারা গেছেন। ওই গ্রামের বড়তল্লা মৌজার ১৫০ শতাংশ একটি পুকুরে মালিকানা রয়েছে মোর্শেদ আলমসহ আরো ২০/২৫ জনের। সম্প্রতি পুকুরটি ওই গ্রামের আজাদ মিয়ার কাছে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকায় সাড়ে ৫ বছরের জন্য ইজারা দেয়া হয়।
ইজারার বিষয়টি চূড়ান্ত করার সময় পুকুরের মালিকদের মধ্যে ইসহাক মিয়া, শাহজাহান মিয়া, হাজী কুতুব মিয়া, ধন মিয়া, তাজুল ইসলাম মেম্বার, সুমন ও কামালসহ আরো অনেক অংশীদার উপস্থিত থাকলেও মোর্শেদ মিয়া সেখানে ছিলেন না। ওই সময় পুকুরে থাকা আগের মাছগুলো জাল দিয়ে ধরে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত হয়। গত ৫ই অক্টোবর ভোরে ইজারাদার আজাদ, কামাল ও নুরু মিয়াসহ আরো ৬ জন পুকুর থেকে মাছ ধরতে যান। এসময় মোর্শেদ মিয়া পুকুর পাড়ে গিয়ে মাছ ধরার কারণ জানতে চাইলে আজাদসহ তারা সকলে জানায় তারা পুকুরটি ইজারা নিয়েছেন। এনিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা চলতে থাকে। একপর্যায়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হন মোর্শেদ মিয়া। পরে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে উপজেলার মেডিল্যাব হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপরও মুর্শিদকে বাজিতপুর জহিরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরাও মৃত জানিয়ে ময়নাতদন্ত করতে বলেন পরিবারের সদস্যদেরকে। কিন্তু পরিবারের লোকজন ময়নাতদন্ত করতে রাজি হননি। ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল না করেই তার লাশ দাফন করা হয়। এরপর গত ১৬ই অক্টোবর মোর্শেদকে পিটিয়ে মারার অভিযোগে তার স্ত্রী মোছাম্মৎ নাসমিকা প্রতিবেশী হাজি কুতুব মিয়াসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে আরো ৬/৭ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। আদালত বিষয়টি তদন্ত করে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আশুগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। হত্যা মামলার বাদী নাসমিকা জানান, পুকুরের ইজারা নিয়ে দ্বন্দ্বে আমার স্বামীকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে আজাদ মিয়া। অন্যদের আসামি করার কারণ সম্পর্কে জানান, পুকুর ইজারার সাথে যারা জড়িত তাদের নাম দিয়েছি। তবে তার স্বামীকে মারার সময় তারা ছিলো না বলেও জানান। এবিষয়ে আশুগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জামাল উদ্দিন জানান, আদালতের আদেশ পাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমাকে বিষয়টি তদন্ত করতে বলেন। আমি তদন্ত করতে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানতে পারি মোর্শেদ স্ট্রোকে মারা গেছেন। কিন্তু সমস্যা হয়েছে এই মৃত ব্যক্তির কোন সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়নি। ময়নাতদন্তও করা হয়নি। আমরা আদালতের কাছে বিষয়টি তুলে ধরব।