× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

১৮ দিনে ১০০ কোটি ডলার রেমিটেন্স

শেষের পাতা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
২২ অক্টোবর ২০১৯, মঙ্গলবার

রপ্তানি আয়ে ধাক্কা খেলেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি মাসের ১৮ দিনেই প্রায় ১০০ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন তারা। দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা, জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে   (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৪৫১ কোটি ০৮ লাখ (৪.৫১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬.৫৯ শতাংশ বেশি। প্রতি বছর দুই ঈদের পর রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যায়। আগস্টে কোরবানির ঈদের পর ধারণা করা হয়েছিল, সেপ্টেম্বরে প্রবাসীরা কম রেমিটেন্স পাঠাবেন। কিন্তু এবার তেমন হয়নি।
সেপ্টেম্বরে ১৪৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন তারা। যা মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ রেমিটেন্স।
এর আগে গত মে মাসে রমজানের ঈদকে সামনে রেখে ১৭৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল জুলাই মাসে, ১৫৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল ২০১৮ সালের মে মাসে ১৫০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আর চলতি অক্টোবর মাসের ১৮ দিনে (১ অক্টোবর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত) ৯৯ কোটি ৮৫ লাখ ডলার (প্রায় ১ বিলিয়ন) রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সবমিলিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৯ মাস ১৮ দিনে ১ হাজার ৪৪৩ কোটি ৫১ লাখ (১৪.৪৩ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছে বাংলাদেশে।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে সুখবর দিয়ে শেষ হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছর। গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ৯.৬০ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি ছিল আরো বেশি, ১৭.৩২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও রেমিটেন্স বাড়ছে। সাধারণত ঈদের পর প্রবাসীরা কম রেমিটেন্স পাঠান। কিন্তু এবার দুই ঈদের পরও রেমিটেন্স বেড়েছে। এটা খুই ভালো খবর। প্রণোদনা দেয়ার কারণেও রেমিটেন্স বাড়ছে। এছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হয়েছে। সে সব দেশে অবস্থানকারী আমাদের প্রবাসীরা এখন বেশি মজুরি পাচ্ছেন, তারাই বেশি অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন। এছাড়া সামপ্রতিক সময়ে জনশক্তি রপ্তানি বাড়ায় রেমিটেন্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিটেন্সের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্সের মধ্যে ২২ কোটি ৩৮ লাখ ডলার এসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। ৪০টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৭৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ৯টি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ২ লাখ ডলার। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। প্রবাসীরা ১০০ টাকা দেশে পাঠালে ২ টাকা প্রণাদনা পাবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা ঘোষণা করেছে। ৬ই আগস্ট তা প্রকাশ করা হয়েছে; তাতে বলা হয়েছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে প্রণোদনা পেতে ১ হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত কোন ধরনের কাগজপত্র লাগবে না।
তবে, রেমিটেন্সের পরিমাণ এই অংকের বেশি হলে প্রাপককে প্রেরকের পাসপোর্টের কপি এবং বিদেশি নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপত্র অবশ্যই জমা দিতে হবে। আর ব্যবসায়ী ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবসার লাইসেন্সের কপি দাখিল করতে হবে।
গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ (১৬.৪২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অংক আগের বছরের (২০১৭-১৮) চেয়ে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ এবং অতীতের যে কোন বছরের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক বছরে এই পরিমাণ রেমিটেন্স আসেনি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ১৭ লাখ (১৪.৯৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ১৭.৩২ শতাংশ বেশি ছিল। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হল বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স।
বর্তমানে ১ কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। জিডিপিতে তাদের পাঠানো অর্থের অবদান ১২ শতাংশের মত। স্থানীয় বাজারে ডলারের তেজিভাব এবং হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই রেমিটেন্স বাড়ছে বলে জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। বর্তমানে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৭০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে।
রিজার্ভ ৩২.২০ বিলিয়ন ডলার: রেমিটেন্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়নও (রিজার্ভ) সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। রোববার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২.২০ বিলিয়ন ডলার। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আগস্ট-সেপ্টেম্বর মেয়াদের ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছিল। গত কয়েকদিনে বেড়ে তা ফের ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ- এই ৯টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রপ্তানি আয় কমেছে ৩ শতাংশ। এই ৩ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ১১ শতাংশ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর