ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যর্থতা বা গাফিলতি ছিল কিনা তা অনুসন্ধান করতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী বছরের ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন। এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে সরকারি হিসাবে ১১২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব এ বিষয়ে তদন্ত করবেন। তদন্ত কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক, আইসিডিআরবির একজন কর্মকর্তা, প্ল্যান প্রোটেকশনের একজন কর্মকর্তা এবং পাবলিক হেলথ বিভাগের একজন কর্মকর্তার মতামত নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া, কমিটি চাইলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যেকোনো বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির মতামত নিতে পারবেন বলে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) পক্ষে ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম টিপু ও দক্ষিনের পক্ষে অ্যাডভোকেট সাইদ আহমেদ রাজা উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার কাজী মাঈনুল হাসান। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাইনুল হাসান জানান, সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কত জন মৃত্যুবরণ করেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এমন একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ৬ই নভেম্বর পর্যন্ত ১৭৯টি মৃত্যুর কেস পর্যালোচনা করে ১১২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে বলে নিশ্চিত হয়েছে মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, আদালত ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কোনো ব্যর্থতা বা গাফিলতি আছে কিনা সেটি তদন্ত করতে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। ওই কমিটিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের নিচে নয় এমন একজন পদমর্যাদার কাউকে সংযুক্ত করতে বলা হয়েছে। কমিটি আগামী ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে একটি প্রতিবেদন দেবে। তদন্ত কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীট-তত্ত্ব বিভাগ, আইসিডিডিআরবি, গণস্বাস্থ্য বিভাগ, প্ল্যান প্রটেকশন উইং এর সাহায্য সহযোগিতা নিতে পারবে। এর বাইরেও যাদের সহযোগিতা দরকার তাদের সহযোগিতাও নিতে পারবে। অপরদিকে, ব্যারিস্টার তৌফিক ইনাম টিপু সাংবাদিকদের বলেন, গত মে মাসে ডেঙ্গু বিষয়ে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কী কাজ করা হয়েছে সে বিষয়ে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছি।
গত ৬ই নভেম্বর, সারাদেশে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত কতজন মানুষ মারা গেছেন, তার সংখ্যা জানতে চান হাইকোর্ট। একইসঙ্গে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে আগামী ১১ই নভেম্বরের মধ্যে এফিডেভিট আকারে এডিস মশা নির্মূলের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। সেই অনুযায়ী রাষ্ট্র পক্ষ মৃত্যুর সংখ্যা এবং দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।