× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা /চারদিকে কান্না আর বাঁচাও বাঁচাও আকুতি

দেশ বিদেশ

শুভ্র দেব
১৩ নভেম্বর ২০১৯, বুধবার

রাত তখন পৌনে তিনটা। আমরা পাঁচ বন্ধু শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন থেকে উদয়ন ট্রেনে উঠি। গন্তব্য ছিল চট্টগ্রাম স্টেশন। সেখান থেকে পিকনিকের উদ্দেশে কক্সবাজার। ‘ঝ’ বগিতে চার বন্ধুর সিট ছিল পাশাপাশি। আমার সিটটা ছিল একটু পেছনে। তারা চারজন মিলে একসঙ্গে মোবাইলে লুডু খেলছিল।  আমি মোবাইল টিপতে টিপতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক তখনই হঠাৎ বিকট এক শব্দ।
তারপর সব অন্ধকার। শুরু হয় চারদিকে কান্নাকাটি আর বাঁচাও বাঁচাও আকুতি। প্রথমদিকে অন্ধকারের মধ্যে আশেপাশের কিছুই দেখছিলাম না। আমার মাথায় হাত দিয়ে দেখি মাথা ফেটে প্রচুর রক্ত ঝরছে। মাথায় চাপ দিয়ে ধরে বন্ধুদের অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি, কিন্তু পাইনি তাদের। কিছুক্ষণ পর অন্যদের মোবাইলের আলোতে দেখি চারদিকে রক্ত আর রক্ত। যেদিকে তাকাই ওইদিকে শুধু রক্ত। কথাগুলো বলছিলেন, ব্রাহ্মবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগে উদয়ন ও তূর্ণা নিশীতা এক্সপ্রেসের সংঘর্ষে আহত যাত্রী সাইদুল ইসলাম সুমন (২৫)।

ট্রেন দুর্ঘটনায় তিনি মারাত্বকভাবে আহত হয়েছেন। তার মাথায় সাতটি সেলাই লেগেছে। এছাড়া শরীরের আরও বিভিন্ন স্থানে আঘাত লেগেছে। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। সাইদুল ইসলাম সুমন বলেন, রুবেল, ফারুক, নাসিম, মুন্না ও আমি দীর্ঘদিনের বন্ধু। মুন্না ও আমি ওয়ার্কশপে কাজ করি। রুবেল ও ফারুক প্রাণ কোম্পানিতে চাকরি করে। আর নাসিম ফটোগ্রাফি করে। আমাদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ছিলো কক্সবাজার ঘুরতে যাবো। সেই মোতাবেক আমরা সোমবার রাতে উদয়ন ট্রেনে উঠেছিলাম। ট্রেনের মধ্যে বসা ও দাঁড়ানো অবস্থায় অন্তত ৬০ থেকে ৬৫ জন যাত্রী ছিলেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য নারী ও শিশুরা ছিলেন। রাত গভীর হওয়াতে বেশিরভাগ মানুষ ঘুমাচ্ছিলেন। অনেকে গল্প করছিলো ও মোবাইল দেখছিলো। কিন্তু এরকম একটি ঘটনা ঘটবে তা কল্পনাও করতে পারিনি। বিকট শব্দের সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ সব আলো নিভে গেল। মনে হল ভূমিকম্প হচ্ছে। সবাই একসঙ্গে চিৎকার দিয়ে উঠলো। ছোট-বড়, সবাই বাঁচাও বাঁচাও বলে কান্না করছিলো। কিন্তু কে কাকে বাঁচাবে। কমবেশি সবাই আহত হয়েছেন।

ট্রেনের সিট থেকে সবাই ছিটকে পড়ে যান। পাশের সিটের দু’জনকে পড়ে থাকতে দেখেছি। মনে হয়নি তারা বেঁচে আছেন। আমার মাথায় প্রচণ্ড রক্তক্ষরণের জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কাউকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। চারদিকে চেয়ে দেখি ছোট ছোট শিশুদের কোলে নিয়ে সবাই হাসপাতালে যাচ্ছিলো। এসময় অবস্থা খারাপ দেখে এক পুলিশ সদস্য আমাকে ধরে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে আমার দুজন বন্ধুকে খোঁজে পাই। পরে তাদের কাছ থেকে জানতে পারি রুবেল মারা গেছে। মুন্নার ডান পা ভেঙ্গে গেছে। পরে এই হাসপাতাল থেকে আমরা চলে যাই একটি প্রাইভেট হাসপাতালে। তারপর পাঠানো হয় কুমিল্লা মেডিকেলে। এখন মুন্না আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আমি চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে আসছি। আর নিজ বাড়ির কবরস্থানে রুবেলকে গতকাল ২টার পরে কবর দেয়া হয়েছে।  

এদিকে, ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছেন একই ট্রেনের যাত্রী মুন্না। ট্রেন দুর্ঘটনায় মুন্নার ডান পায়ের হাঁড় দুই জায়গায় ভেঙ্গেছে। বলতে গেলে পায়ের চামড়ার সঙ্গে আটকে আছে তার ডান পা। ভয়াল সেই দুর্ঘটনার স্মৃতিচারণ করে গতকাল ঢামেকে মুন্না বলেন, রাত সাড়ে ১২টার দিকে শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন থেকে আমরা ট্রেনে উঠি। সর্বশেষ আখাউড়া স্টেশন পার হয়েছি এটা মনে আছে। ট্রেনের দরজা জানালা সব বন্ধ ছিল। বাইরের কিছুই দেখতে পাইনি। আমি তখন বন্ধুদের সঙ্গেই ছিলাম। তার আরও অনেক পরে একটি বিকট শব্দ হয়। চারদিক থেকে ভেসে আসে শুধু কান্নার শব্দ। ঘুমন্ত যাত্রীদের কারো মাথা ফেটেছে, কারো হাত পা ভেঙ্গেছে। ট্রেনের কয়েকটি বগি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। আমার পা ভেঙ্গে প্রায় ঝুলে আছে। নড়াচড়া করতে পারছিলাম না। বন্ধুদেরকে ডাকছিলাম কিন্তু তারা কেউ শুনেনি। পাশের সিটেই ছিল বন্ধু রুবেল তাও আমি জানতাম না। অনেক কষ্ট করে নিজের চেষ্টায় নামি। তখন দুই বন্ধুকে দেখতে পাই। তারা আমাকে একটি গাড়ি দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়। যখন জ্ঞান ফিরে তখন জানতে পারি রুবেল মারা গেছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর