লিবিয়ার দু’টি বন্দিশিবিরে আটক ১৭১ বাংলাদেশি অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। তারা অবৈধ উপায়ে ইউরোপ পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ৩০শে অক্টোবর ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। এরপর রাখা হয়েছে দু’টি বন্দিশিবির জানজুর ও আবু সালিমে। সেখান থেকে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন আরব নিউজ। এতে বলা হয়, সব মিলিয়ে ওই সময়ে উদ্ধার করা হয়েছে ২০০ অভিবাসীকে। লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর এএসএম আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশি সব অভিবাসীর রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে।
তাদের নভেম্বরের শেষ নাগাদ দেশে ফেরত পাঠানো যাবে বলে আমরা আশা করছি। তিনি বলেছেন, লিবিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে রাজধানী ত্রিপোলির বিমানবন্দরগুলোতে কোনো কার্যক্রম নেই। তাই ত্রিপোলি থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মিসরাতা বিমানবন্দর থেকে দেশের উদ্দেশ্যে উড়াল দেবেন ওইসব বাংলাদেশি।
তার ভাষায়, ত্রিপোলি বিমানবন্দর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বোমা হামলা ঘটছে ঘন ঘন। চালানো হচ্ছে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে এখন কোনো আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থার বিমান ওড়ে না। তাই ওইসব অভিবাসীকে দেশে ফেরত আনতে একটি ফ্লাইট ভাড়া করতে চাইছে দূতাবাস। এতে যে খরচ হবে তা বহন করবে অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন আইওএম। আটক ওইসব বাংলাদেশিদের সঙ্গে অব্যাহত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা। তারা তাদেরকে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও অন্যান্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
আরব নিউজ লিখেছে, ইতালি ও ইউরোপের দেশগুলোতে অবৈধ উপায়ে অভিবাসী পাচারের জন্য লিবিয়াকে গেটওয়ে বা প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহার করছে মানবপাচারকারীরা। ইউরোপিয়ান বর্ডার অ্যান্ড কোস্টগার্ড এজেন্সি ফ্রনটেক্স-এর মতে, গত এক দশকে অবৈধভাবে ইউরোপ প্রবেশের চেষ্টাকালে প্রায় ৩০ হাজার বাংলাদেশি অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই সংস্থার মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেসব দেশ থেকে অবৈধ উপায়ে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন তার অন্যতম বাংলাদেশ। এর আগেও লিবিয়া থেকে বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠাতে সুবিধা দিয়েছে আইওএম। ২০১৭ সালে ৯২৪ জনকে, ২০১৬ সালে ৩০৭ জনকে এবং ২০১৫ সালে ৫২১ জনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে আইওএমের সহযোগিতায়।
বাংলাদেশভিত্তিক উন্নয়ন সংগঠন ব্র্যাক-এর অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেছেন, বাংলাদেশে বেকারদের মধ্যে ভাগ্য সন্ধানী বেশি। তারা যেকোনো উপায়েই হোক ইউরোপ পাড়ি জমাতে চান। এ জন্য দেশে-বিদেশে মানবপাচারকারী চক্রের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়। তারাও এটাকে অর্থ কামানোর একটি সুযোগ হিসেবে নেয়। তিনি মনে করেন, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নিয়ে সমন্বিতভাবে মানবপাচার কমিয়ে আনতে হবে।