তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ। এমন দৈন্যদশা দেখে অবাক ভারতীয় সংবাদকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শকরা। পাকিস্তানকে সরিয়ে বাংলাদেশ যে জায়গা করে নিয়েছিল। ইন্দোর টেস্টে তার ছিটেফোঁটাও নেই। বিশেষ করে ব্যাটিংটা দৃষ্টিকটু ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে গুটিয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৭২ রানেই হারায় পাঁচ উইকেট। শেষে ২১৩ রানে অললাউট। তবে ব্যাটিংয়ের এমন বেহাল চিত্র নতুন নয়।
সে জন্য বয়সভিত্তিক দলে রাখা হচ্ছে স্পেশালিস্ট ব্যাটিং কোচও। এর মধ্যে অন্যতম ভারতের সাবেক ওপেনার ওয়াসিম জাফর। তিনি বর্তমানে ছুটিতে রয়েছেন নিজ দেশ ভারতে। নিয়মিত খোঁজ রাখছেন টাইগারদের। দৈনিক মানবজমিনকে জানালেন নিজের হতাশার কথা। সেই সঙ্গে দিলেন পরামর্শও। তার কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: বাংলাদেশের টেস্ট পারফরম্যান্স কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?জাফর: বাংলাদেশ দল যেভাবে টি-টোয়েন্টি শুরু করেছিল তাতে ধারণা করেছিলাম টেস্টেও তারা একই রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। কিন্তু হয়নি, তবে আমি মনে করি টস জিতে তারা দারুণ সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাট করার। কিন্তু তারা নিজেদের যোগ্যতা অনুসারে ব্যাট করতে ব্যর্থ হয়েছে। এটি মানতে হয় যে, ভারতের বোলিং দারুণ। তাই বলে এটি ১৫০ রানের উইকেট ছিল না। নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেললে এই উইকেটে অন্তত বাংলাদেশ ৩০০ রান করতে পারতো। আর একটা কথা বলতেই হয়, তিন পেসার নিয়ে খেলা উচিত ছিল। জায়েদ দারুণ বল করেছে কিন্তু তাকে কেউ সঙ্গ দিতে পারেনি। যদি ২৫০ও করতো বাংলাদেশ তাহলে ভারতকে চাপে ফেলা যেত দ্বিতীয় ইনিংসে।
প্রশ্ন: ব্যাটিংয়ে এমন ব্যর্থতার কারণ কি কৌশলগত দুর্বলতা?জাফর: আমি মনে করি না ব্যাটিং টেকনিকে বড় কোনো ভুল আছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। আমার ধারণা টেস্ট খেলার জন্য যে শক্ত মানসিকতার প্রয়োজন সেটি এখনো হয়নি। আমি এই জায়গাটাই বলবো বারবার যে, তারা মানসিকভাবে শক্ত নয়। আর ব্যাটিংয়ে যে ছোটখাট ভুল আছে সেগুলো ভারতও করে। বিরাট আউট হয়েছে, রোহিতও। তাই বলেকি অন্যরা হাল ছেড়েছে! সাদমানের আউটটা দেখ, ইমরুল কিংবা লিটন ওদের কাউকে মনে হয়নি টেস্টের জন্য ব্যাটিং করছে। মায়াঙ্ক (আগারওয়াল) জীবন পেয়েছে, কাজে লাগিয়েছে। সব নিয়ে খেলেছে। ভালো বল ছেড়েছে, বাজে বলে রান করেছে। ও কিন্তু ভাবেনি যে বিরাট নেই, রোহিত নেই। নিজের সেরাটাই দিয়েছে। আমি যা দেখেছি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছে। বিশেষ করে মুমিনুল সেট হয়ে আউট হয়েছে। প্রথম ইনিংসে মুশফিকও একই কাজ করেছে। আমি বলবো সেট হয়ে আউট হওয়াটাও অন্যায়।
প্রশ্ন: টেস্ট দলের সিনিয়রদের ভূমিকা কি মনে হলো?জাফর: সিনিয়র বলতে আছে তো মুশফিক আর মাহমুদুল্লাহ। তাদের মনে হয় অনেক বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। আমি যদি এক এক করে বলি তাহলে মুমিনুল পর্যন্ত ঠিক আছে ব্যাটিং লাইন আপ। কিন্তু চারে মোহাম্মদ মিঠুনের পরিবর্তে মুশফিকের খেলা উচিত। সেতো এখন উইকেট কিপিংও করছে না। মাহমুদুল্লাহকে পাঁচে খেলানো উচিত। এরপর অন্যরা আসতে পারে। কারণ টেস্টে দলের সব সিনিয়র ক্রিকেটারই দায়িত্ব নিয়ে খেলবে।
প্রশ্ন: কোথায় এখনো উন্নতি প্রয়োজন বলে মনে করেন?জাফর: প্রথমে বলে রাখছি ভারত ও বাংলাদেশের পার্থক্য কোথায়। এক সময় আমরাও (ভারত) পেস আক্রমণে দুর্বল ছিলাম। আবার পেস খেলতেও। কিন্তু এই বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেই অবকাঠামোতে বড় পরিবর্তন এনেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। পেসার যেন তৈরি হয় ও বিদেশের মাটিতে যেন ব্যাটসম্যাসনরা পেসবান্ধব উইকেটে খেলতে পারে সেজন্য উইকেটে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। তার ফল দেখুন, ভারতের এই পেস বিভাগের সঙ্গে এখন কোনো বড় দলও পারছে না। এমনকি ব্যাটিং ও ফিল্ডিংও দারুণ উন্নতি করেছে। এক কথায় এটি ভারতের সেরা দলের একটি। আমি বলতে চাইছি বাংলাদেশকে একটি নয় সব জায়গাতেই উন্নতি করতে হবে। তার জন্য অবকাঠামো ও কৌশল সবই বদলাতে হবে। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং সব জায়গাতেই কাজ করতে হবে। হয়তো রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়। কিন্তু যারা উঠে আসবে তাদের জন্য সব কিছুই ভবিষ্যৎ ভেবে করতে হবে।
প্রশ্ন: আপনি বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক দলের কোচের দায়িত্ব পালন করছেন। কোথায় অভাব দেখেন?জাফর: আপাতত আমার কাজ অনূর্ধ্ব-১৯ দল নিয়ে। আমার যা অভিজ্ঞতা তা কাজে লাগিয়ে তরুণদের উন্নতির চেষ্টা করছি। হ্যা,অনেক কিছু দরকার এখনো। সেগুলো পূরণও করা হচ্ছে। আশা করি ধীরে ধীরে সবই পরিবর্তন হবে।
প্রশ্ন: জাতীয় দলের কেউ আপনার কাছে আসলে কী করেন?জাফর: হ্যাঁ, আমার কাছেতো জাতীয় দলের অনেকেই আসে। মুমিনুল তোমাদের নতুন অধিনায়ক ও আমার সঙ্গে বেশ আলোচনা করে। মোহাম্মদ মিঠুন আসে, শান্ত আসে। আমি চেষ্টা করেছি তাদের পরামর্শ দিতে। অন্যরা যদি চায় আমি তাদের সাহায্য করতে প্রস্তুত আছি।
প্রশ্ন: ইডেন টেস্টে কী আশা করছেন?জাফর: আমি ভালো কিছুই আশা করি। যদিও এই ভারত দলের সঙ্গে খেলা খুব কঠিন। তারপরও বলবো মানসিকতায় পরিবর্তন নিয়েই বাংলাদেশ দলকে খেলতে হবে। বিশেষ করে যেভাবে সাহস করে টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেইভাবে সাহস নিয়ে খেলতে হবে। সামনে ভারত নাকি অস্ট্রেলিয় এই সব ভেবে চলবে না। নিজেদের সেরা খেলাটাই উপহার দিতে হবে। টেস্টে যেভাবে ইনিংস বাই ইনিংস খেলতে হয় সেইভাবেই এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যতটা জানি ইডেনেও উইকেট হবে পেসারদের জন্য। তাই তিন পেসার নিয়ে খেলারই পরামর্শ দিবো। আরেকটা বিষয় আমি এবারের বাংলাদেশের স্পিন নিয়ে বেশ হতাশ। স্পিনারদের আরো ভালো বল করতে হবে।