× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সিলেট আওয়ামী লীগে চার নেতার যে লড়াই

শেষের পাতা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২১ নভেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ- অতীতে এ পদে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তারা ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতা। তাদের রাজনৈতিক আদর্শ কিংবা দর্শন সবই ছিল শিক্ষণীয়। বর্তমানে যিনি ‘ভারপ্রাপ্ত’ হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন তিনিও বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা। তাকে নিয়ে রাজনীতিতে প্রশ্ন কম। তিনি হচ্ছেন এডভোকেট লুৎফুর রহমান। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানও। বঙ্গবন্ধুর জমানায় দাপিয়ে বেড়ানো রাজনীতিবিদ।
ছিলেন গণপরিষদ সদস্যও। তার আগে প্রবীণ নেতা এডভোকেট আবু নসর, প্রয়াত নেতা আ.ন.ম শফিকুল হক ও আব্দুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ানের মতো নেতারা এই পদে দায়িত্ব  পালন করে গেছেন। তারা অনেকেই বিতর্কের উর্ধ্বে থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট লুৎফুর রহমান বয়োবৃদ্ধ নেতা। এরপরও হিসেবে খাতার শীর্ষে রয়েছে তার নাম। কিন্তু নিজ থেকে সভাপতি পদের জন্য তিনি লবিং-গ্রুপিংয়ে ততোটা সক্রিয় নয়। এ কারণে এবার সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদের জন্য লড়াইয়ে নেমেছেন তিন আওয়ামী লীগ নেতা। আসন্ন সম্মেলনকে সামনে রেখে তারা সভাপতির পদের জন্য জোর লবিং চালাচ্ছেন। লড়াই এখন অনেকটা প্রকাশ্যে। চলছে হিসাব-নিকাশও। এই তিন নেতা হলেন- বর্তমান কমিটির সাধারন সম্পাদক সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন।

সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন- তিনজনই সভাপতি হওয়ার মতো যোগ্য নেতা। তবে সব সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে কেন্দ্রের উপর। কেন্দ্র যাকে অধিকতর যোগ্য মনে করবে তাকেই সভাপতি করতে পারে। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত লুৎফুর রহমানও হতে পারেন ভারমুক্ত। সব ঠিক করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সভাপতির দৌড়ে এগিয়ে থাকা শফিকুর রহমান চৌধুরী সিলেট আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে তিনি আগলে রেখেছেন সিলেট আওয়ামী লীগকে। এক্ষেত্রে তিনি সাংগঠনিকভাবে প্রশ্নে মুখোমুখি হলেও দলের মধ্যে নিঃস্বার্থ নেতা হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। শফিক চৌধুরী ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। ২০০৮ সালের আগে নিজ এলাকা বিশ্বনাথ ও বালাগঞ্জে ভোটের রাজনীতির মাধ্যমে তিনি সক্রিয় হন। পেয়েছেন যান আওয়ামী লীগের টিকিট। এরপর সিলেট-২ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। পরে তাকে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। প্রথম দিকে অবস্থান গড়ে তোলতে সিলেটের রাজনীতিতে যুদ্ধ করতে হয়েছে শফিকুর রহমান চৌধুরীকে। এখন অবস্থান অনেকখানি সুসংহত। ‘সাংগঠনিক দক্ষতার’ অভাব এবার তাকে বিতর্কের মুখে ফেলেছে। বর্ধিত সভায় সেটি প্রকাশ পায়। তবে- কেন্দ্রের নির্দেশে তিনি মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে ৮ উপজেলার সম্মেলন করে সেই বিতর্ক মুছে দিয়েছেন। ২০১৪ সালে দলে সিদ্ধান্তে সংসদ সদস্য পদ বিসর্জন দিয়েছেন তিনি।

২০১৮ সালেও একই ভাবে তিনি শরীক দলের কাছে নিজের আসন ছেড়ে দেন। এ কারণে কেন্দ্রের নেতাদের কাছে শফিকুর রহমান চৌধুরীর গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। কখনো তিনি দলীয় সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করেননি। বরং সিলেট আওয়ামী লীগের কোন্দল মিটমাটে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। তিনি নিজেও সিলেটের রাজনীতিতে প্রকাশ্য কোনো কোন্দলে সক্রিয় হননি। জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সহ সভাপতি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস এমপি। তিনি সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য। ২০০৮ সাল থেকে তিনি এ নিয়ে তৃতীয় বারের মতো এমপি হয়েছেন নিজ এলাকায়। এতোদিন তিনি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিয়ে ততোটা সক্রিয় ছিলেন না। এবার জেলার সম্মেলনকে সামনে রেখে তিনি সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তার দিকেও নজর রয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের। নিজেকে তিনি সব সময় দলীয় কোন্দল থেকে দূরে রেখেছেন। দলীয় নেতারা জানান- কয়েক মাস ধরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সব কর্মকাণ্ডে সক্রিয় মাহমুদ উস সামাদ কয়েস এমপি।

তিনি বিভিন্ন উপজেলার সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পাশাপাশি সিলেট জেলার কয়েকটি উপজেলায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনেও উপস্থিত ছিলেন। দলীয় নেতাদের কাছাকাছি যেতে তিনি এই ভূমিকা পালন করেন। জেলা সম্মেলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে তিনি কাজ করছেন। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের মধ্যে অন্যতম তিনি। তার ভাই আসাদ উদ্দিন আহমদ হচ্ছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। মাসুক উদ্দিন আহমদ ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান থেকে আওয়ামী লীগের আন্দোন সংগ্রামে সামনের কাতারের নেতা হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। নিজ এলাকা জকিগঞ্জেও মানুষের কাছে তিনি গ্রহণযোগ্য নেতা। বারবার সিলেট-৫ আসনের মনোনয়ন চাইলেও এখনো তার ভাগ্যে জুটেনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। এবার মাসুক উদ্দিন আহমদ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে শক্তিশালী প্রার্থী।

তৃণমূলে রয়েছে তার গ্রহণযোগ্যতা। সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন- সিলেট আওয়ামী লীগের মধ্যে একই পরিবারের দুই ভাই গুরুত্বপূর্ণ নেতা। সুতরাং এক পরিবারে দুটি শীর্ষ পদ দেয়া নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছেন নেতারা। এ ব্যাপারে দলেরও স্পষ্ট অবস্থান রয়েছে। তারা জানান- এবার মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আসাদ উদ্দিন আসীন থাকলেও ভাগ্য সহায় নাও হতে পারে মাসুকের। পূর্বের পদেই তিনি আসীন থাকতে পারেন। মহানগরে আসাদের ক্ষমতা খর্ব হলে মাসুক উদ্দিন আহমদের প্রতি সহানুভূতি থাকতে পারে কেন্দ্রের।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর