জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) গণহত্যা মামলায় মিয়ানমার টিমের নেতৃত্ব দেবেন স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচি। ওই মামলায় মিয়ানমার থেকে যে আইনগত টিম থাকবে তার নেতৃত্বে থাকবেন তিনি। ফেসবুকে স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচির পেজে এক পোস্টে এ কথা বলা হয়েছে। সরকারি বেশির ভাগ সিদ্ধান্ত বা তথ্য মিয়ানমার সরকার এভাবে ফেসবুকে প্রকাশ করে থাকে। বার্তা সংস্থা এপি এ খবর দিয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, বুধবার রাতে সংক্ষিপ্ত এই ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমার। এর উদ্দেশ্য, ‘মিয়ানমারের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা’র চেষ্টা। গাম্বিয়া যে গণহত্যার বিষয়ে মামলা করেছে এতে তা উল্লেখ করা হয় নি।
বরং বলা হয়েছে, এই মামলা করা হয়েছে রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের পক্ষে। অং সান সুচি একই সঙ্গে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। ওই পোস্টে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি তার দেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক আইনজীবী দলের নেতৃত্ব দেবেন।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে দেশটির রাখাইন প্রদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নৃশংস নির্যাতন চালায় সেনাবাহিনী। তাদের নৃশংসতা থেকে জীবন বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন কমপক্ষে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, হত্যাযজ্ঞ, রোহিঙ্গাদের আবাসনে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আছে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বলেছে, জাতি নিধনের উদ্দেশে এসব করা হয়েছে। একই কথা বলেছে অন্য মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো। ফলে ইসলামিক দেশগুলোর সংগঠন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) পক্ষে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আইসিজে’তে একটি মামলা করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। নেদারল্যান্ডে অবস্থিত এই আদালত থেকে সোমবার বলা হয়েছে, তারা এই মামলার শুনানি করবে ১০ থেকে ১২ই ডিসেম্বর।
মামলা করার সময় গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী ও এটর্নি জেনারেল আবু বাক্কার মারি তামবাদু এপি’কে বলেছেন, তিনি মিয়ানমার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি পরিষ্কার বার্তা পাঠাতে চান। তা হলো, আমাদেরকে নিয়ে চারদিকে যে নৃশংসতা ঘটছে, যে নৃশংসতার মুখোমুখি হচ্ছি আমরা, বিশ্ব তার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে না এবং কিছুই করছে না। আমাদের চোখের সামনে গণহত্যা চলছে। আর আমরা কিছুই করছি না। এটা আমাদের এ প্রজন্মের জন্য লজ্জার।
জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রধান গত মাসে সতর্ক করেছেন এই বলে যে, আবারো মিয়ানমারে গণহত্যা শুরু হওয়ার বড় ধরনের ঝুঁকি আছে। এ ছাড়া এই মিশন সেপ্টেম্বরে তাদের চূড়ান্ত রিপোর্টে বলেছে যে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনি ফোরামে নিয়ে যাওয়া উচিত মিয়ানমারকে। তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার।
কিন্তু নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক গ্লোবাল জাস্টিস সেন্টারের প্রেসিডেন্ট আকিলা রাধাকৃষ্ণাণ বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে যে গণহত্যা হয়েছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন অং সান সুচি ও মিয়ানমারের বেসামরিক সরকার। তারা ওই অবস্থাকে জরুরি কোনো বিষয় হিসেবেই বিবেচনা করেন নি। নৃশংসতায় জড়িত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপই নেন নি। রাধাকৃষ্ণাণ এক বিবৃতিতে বলেছেন, সুচি ও তার বেসামরিক সরকারের অবস্থা কি সে বিষয়ে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এবং অবশ্যই তাদের উচিত গাম্বিয়াকে সমর্থন দিয়ে মিয়ানমারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে ব্যবস্থা নেয়া।
ওদিকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের (আইসিসি) সিদ্ধান্ত গত সপ্তাহে প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার। এই আদালত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার অনুমোদন দিয়েছে প্রসিকিউটরদের। কিন্তু তা উড়িয়ে দিয়েছেন মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জাওয়া হতাই। তিনি বলেছেন, এই আদালতের কোনো সদস্য দেশ নয় মিয়ানমার। ফলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো বিচার করার অধিকার নেই এই আদালতের। মিয়ানমার তার এই অবস্থানে অটল থাকবে। কিন্তু আদালতের বক্তব্য, তাদের এমন এক্তিয়ার রয়েছে। কারণ, মিয়ানমার থেকে যেসব মানুষকে জোরপূর্বক বের করে দেয়া হয়েছে তারা আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে। আইসিসির একটি সদস্য দেশ বাংলাদেশ।