অসামাজিক কাজের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল সিলেটের লালবাজারের আজাদ হোটেল। পরিচিতি পেয়েছে মিনি পতিতালয় হিসেবেও। কক্ষ রয়েছে হোটেলে। নেই কোনো বোর্ডার। রয়েছে অসামাজিক কাজে নিয়োজিত নারীরা। দিন-রাত অবাধ যাতায়াত ছিল পুরুষের। সবচেয়ে বেশি যেত উঠতি বয়সী তরুণরা। বাদ থাকেনি লালবাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীরাও।
এতে করে লালবাজারের পরিবেশ হয়ে উঠে বিষাক্ত। আর এই হোটেল সম্পর্কে অভিযোগ পাওয়ার পর নিজেই অভিযান চালান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। অভিযানের সময় ছাদ থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যায় কেউ কেউ। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি হোটেল কক্ষ থেকে অসামাজিক কাজে জড়িত থাকা ৫ নারী ও ৭ পুরুষকে আটক করেন। পরে পুলিশের হাতে তুলে দেন তাদের। সিলগালাও করে দেয়া হয় আজাদ হোটেলকে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, লালবাজারে তিনতলা একটি ভবন ভাড়া নেন কবির আহমদ নামের এক হোটেল ব্যবসায়ী। তিনি ওই ভবন ভাড়া নিয়ে আজাদ আবাসিক হোটেল নামে ব্যবসা শুরু করেন। হোটেল চালুর পরপরই ব্যবসায়ীসহ এলাকাবাসীর কাছে অসামাজিক কাজের বিষয়টি ধরা পড়ে। অনেক ব্যবসায়ী ওই হোটেলের কার্যকলাপ নিয়ে প্রতিবাদী হলেও লালবাজারের কয়েকজন শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতার কারণে তারা অসামাজিক কাজ বন্ধ করতে পারছিলেন না। এ কারণে ক্ষোভ বাড়ে তাদের মধ্যে। ৮-৯ মাস আগের ঘটনা। লালবাজারের ব্যবসায়ীরা আজাদ হোটেলে অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হন। তারা এক হয়ে লালবাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের সঙ্গে নিয়ে হোটেলে যান। এ সময় তারা হোটেলের বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপরত অবস্থায় ৬ নারীকে আটক করেন। পরে আটক করা নারীদের পুলিশে সোর্পদ করা হয়। এক বস্তা কনডমও উদ্ধার করা হয়। আটকের পর নারীরা ব্যবসায়ীদের জানিয়েছিলেন, হোটেলের মালিক কবির তাদের চুক্তিতে নিয়ে এসেছে। ব্যবসায়ীরা ওইদিন কবিরকে খুঁজলেও পাননি। পরে তারা হোটেল তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী গতকাল অভিযানের সময় মানবজমিনকে জানান, ব্যবসায়ীরা রাতে হোটেল বন্ধ করে দেয়ার পরের দিনই স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির শীর্ষ নেতা সেখানে আসেন। এবং তিনি উপস্থিত থেকে হোটেলের মালিককে দিয়ে তালা ভাঙেন। এবং তার নির্দেশে পুনরায় হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ শুরু করে কবির আহমদ। তিনি জানান, ভোর হলেই তার হোটেল থেকে দলে দলে নারীরা বেরিয়ে যায়। একাংশ বেরিয়ে যাওয়ার পর আরেক অংশ এসে ঢোকে। এসব দৃশ্যের বাইরে দিনভর উঠতি বয়সী তরুণদের আড্ডা জমে এই হোটেলকে ঘিরে। মাদকেরও বিস্তার রয়েছে ওখানে। এসব কারণে আজাদ হোটেল স্থানীয় ব্যবসায়ীদের গলার কাঁটা হিসেবে পরিণত হয়েছে। এককভাবে কেউ প্রতিবাদ করেন না। পুলিশি ঝামেলার আশঙ্কায় তারা মুখ বন্ধ রাখেন। এই অবস্থায় গতকাল সকালে লালবাজার এলাকার মাংসের দোকানে অভিযানে যান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ সময় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকার মানুষ আজাদ হোটেল সম্পর্কে মেয়রকে অবগত করেন। জানান- অসামাজিক কাজের কথাও। তাদের কথা শুনে মেয়রও ক্ষুব্ধ হন। তিনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে সকাল ১০টার দিকে হোটেলে ওঠেন। এ সময় মেয়রকে দেখে হোটেলে থাকা নারী ও পুরুষরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। কেউ কেউ ছাদ টপকে চলে যান। মেয়র এ সময় হোটেলের ম্যানেজারসহ ৭ পুরুষকে আটক করেন। অসামাজিক কাজে জড়িত থাকা ৫ নারীকেও আটক করা হয়। অভিযানের পর মেয়র হোটেলটি সিলগালা করে দেন। তবে অভিযানের সময় হোটেলের মালিক কবিরকে পাওয়া যায়নি। এ সময় মেয়র বলেন, পবিত্র এই নগরীকে কোনোভাবেই অপবিত্র করতে দেয়া হবে না। যারা এই অসামাজিকতার কাজে জড়িত থাকবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযানে সিসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. জসীম উদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর, লাইসেন্স কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর, লাইসেন্স পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান, রুবেল আহমদ নান্নুসহ সিসিকের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহাব উদ্দিন শিহাব জানিয়েছেন- আজাদ হোটেলের লাইসেন্স বাতিল করতে মেয়র জেলা প্রশাসনকে চিঠি লিখবেন। আর যাতে এই হোটেলে কোনো অসামাজিক কাজ না চলে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। সিলেটের কোতোয়ালি থানার ডিউটি অফিসার এসআই রিংকু জানান, লালবাজার থেকে আটকদের অসামাজিকতার ধারায় আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে। দুপুরেই তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয় বলে জানান তিনি