× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

জুয়ার নেশায় সন্তান বিক্রি জুয়াড়ি বাবা ও ক্রেতা গ্রেপ্তার

এক্সক্লুসিভ

আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে
২২ নভেম্বর ২০১৯, শুক্রবার

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে চিকিৎসার কথা বলে মায়ের কোল থেকে নিয়ে গিয়ে ১৪ দিনের শিশুকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে মো. ফারুক ভূঞা নামের পাষণ্ড এক বাবা। বাবার জুয়ার নেশায় জন্মের কয়েকদিনের ব্যবধানে নবজাতক কন্যা শিশুটিকে এই নির্মমতা দেখতে হয়। গত সোমবার উপজেলার মসূয়া ইউনিয়নের রামদী গ্রামে এই ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় পরদিন মঙ্গলবার শিশুটির মা মোছা. রিনা খাতুন বাদী হয়ে কটিয়াদী থানায় মামলা দায়েরের পর ওইদিন রাতেই শিশুটিকে উদ্ধার এবং শিশুটির বাবা মো. ফারুক ভূঞা ও শিশুটির ক্রেতা জাকিয়া আক্তারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার সন্ধ্যায় তাদের কিশোরগঞ্জের আদালতের পাঠানোর পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার নেপথ্যের কারণ জানতে দুই আসামির প্রত্যেককে ৫ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কটিয়াদী থানার এসআই মো. মোস্তফা কামাল। গ্রেপ্তার হওয়া শিশুটির বাবা মো. ফারুক ভূঞা কটিয়াদী উপজেলার বালিরারপাড় এলাকার মৃত শাহাবউদ্দিনের ছেলে এবং শিশুটির ক্রেতা জাকিয়া আক্তার উপজেলার বেতাল গ্রামের সুমন ভূঞার স্ত্রী।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া ইউনিয়নের রামদী গ্রামের মো. ফরিদ ভূঞার মেয়ে মোছা. রিনা খাতুনের প্রায় ১৫ বছর আগে মো. ফারুক ভূঞার সাথে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে এক ছেলে ও দুই মেয়ে জন্ম নেয়।
কিন্তু সংসারে অভাব অনটন লেগে থাকায় প্রায়ই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হতো। এরই মধ্যে গত ৫ই নভেম্বর কটিয়াদী পৌর সদরের একটি ক্লিনিকে জন্ম নেয় তাদের তৃতীয় সন্তান। এই কন্যা সন্তানটির নাম রাখা হয় রাধিয়া। গত সোমবার রাধিয়া সামান্য জ্বরে আক্রান্ত হলে ওই দিন সকালে তার বাবা ফারুক ভূঞা চিকিৎসার কথা বলে মেয়েটিকে তার মায়ের কোল থেকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়।

এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিশুটির বাবা ফারুক ভূঞা তার শ্যালক শফিককে মোবাইল ফোনে জানায়, শিশু রাধিয়াকে এক মহিলার কোলে দিয়ে সে শৌচাগারে গিয়েছিল। পরে সেখান থেকে এসে দেখতে পায় যে রাধিয়াকে নিয়ে ওই মহিলা পালিয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুুঁজি করেও শিশুটিসহ ওই মহিলাকে পাওয়া যাচ্ছে না। এ খবর পেয়ে ছোট বোন রিনাকে নিয়ে শফিক হাসপাতালে গিয়ে শিশুর বাবাকে খুঁজতে থাকেন। না পেয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে শিশুটির বাবার মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে তার বাড়ি বালিরারপাড় গ্রামে যান। এক পর্যায়ে শিশুটির বাবা অন্য একটি মোবাইল ফোনে শিশুটির মা রিনাকে জানায়, শিশু রাধিয়াকে পেতে হলে তাকে ৬ লাখ টাকা দিতে হবে। পরবর্তীতে শিশুর মামা শফিক ও মা রিনা আক্তার জানতে পারে, শিশু রাধিয়াকে তার বাবা ফারুক ভূঞা, দাদী রেহেনা খাতুন ও তাদের আত্মীয় জসিম ভূঞা ও অজ্ঞাত দুই তিন জন মিলে উপজেলার বেতাল গ্রামের সুমন ভূঞার স্ত্রী জাকিয়া আক্তারের কাছে ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে।

এই ঘটনায় শিশু রাধিয়ার মা মোছা. রিনা খাতুন পরদিন মঙ্গলবার কটিয়াদী মডেল থানায় ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মুক্তিপণের উদ্দেশে শিশুকে ক্রয়-বিক্রির ও সহায়তা করার অপরাধে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ পাষণ্ড পিতা ফারুক ভূঞা ও শিশুর ক্রেতা জাকিয়া আক্তারকে শিশুসহ আটক করে বুধবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জ আদালতে পাঠায়। পরে আদালতের নির্দেশে রাতে শিশু রাধিয়াকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়ে দুই আসামিকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

কটিয়াদী মডেল থানার ওসি এম এ জলিল জানান, ১৪ দিনের শিশু সন্তানকে বিক্রি করে ফারুক ভূঞা ৭০ হাজার টাকা পেয়েছিল। এক রাতেই জুয়া খেলে সে পুরো টাকাই শেষ করে দেয়। জুয়ার নেশায় পড়েই সে এমন নির্মমতার পথ বেছে নিয়েছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর