× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

এনআরসি’র প্রভাবে বাড়ছে অনুপ্রবেশ

শেষের পাতা

আমিনুল ইসলাম লিটন, ঝিনাইদহ থেকে
২২ নভেম্বর ২০১৯, শুক্রবার

জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) আতঙ্কে ভারত থেকে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। প্রায় প্রতিদিনই ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে শত শত মানুষ অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢুকছে। গত দুই সপ্তাহে কমপক্ষে দুই শতাধিক ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীকে আটক করেছে খালিশপুরস্থ  ৫৮ বিজিবির সদস্য ও মহেশপুর থানা পুলিশ। বিজিবি বলছে, যারা অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে তাদের বেশিরভাগই মুসলমান। তারা এনআরসি আতঙ্ক ও ভারতীয় স্থানীয়দের নির্যাতনে দেশ ছাড়ছেন। তারা আর ভারতে যাবেন না বলে বিজিবির কাছে জানিয়েছেন। যে যা পেরেছে তাদের ব্যবহারের জিনিসপত্র নিয়ে তারা এদেশে চলে এসেছেন। তাদের আটকের পর অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ২০শে নভেম্বর পর্যন্ত মহেশপুর থানায় ১৬টি মামলা হয়েছে। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, মহেশপুর উপজেলার জলুলী, পলিয়ানপুর ও খোসালপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছে বাঙালিরা। গত ২০ দিনে ৮৯ নারী, ৭১ পুরুষ ও ৬৪ জন শিশুকে তারা আটক করেছে।

সর্বশেষ ১৯ ও ২০শে নভেম্বর আটক করেছেন ৯ জনকে। এ ছাড়া নভেম্বরের ২০ দিনে শুধুমাত্র মহেশপুর থানার মাধ্যমে ১৬৬ জন অনুপবেশকারীকে আদালতে পাঠিয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাসের ১৩ই নভেম্বর ৩৩ জন ও ১৪ই নভেম্বর ৪৯ জনসহ মোট ৮২ জনকে আটক করেছে বিজিবি। এটাই বিজিবির হাতে আটক হওয়া বড় সংখ্যার অনুপ্রবেশকারী দল। বিজিবি ৫৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল আহসান গণমাধ্যমকে বলেন, মাইগ্রেশন করে যারা ভারতে গিয়েছিলেন তাদের সেখানে এখন বসবাসে অসুবিধা হচ্ছে। এখন তারা নানাভাবে চাপের মধ্যে পড়েছেন। বিশেষ করে ব্যাঙ্গালুরু এলাকায় এই সমস্যা বেশি হচ্ছে। যে কারণে তারা প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে ভারত ছেড়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। তারা বেশিরভাগই ভারতের দুর্গম এলাকার ঠিকানা দিচ্ছেন। যে কারণে বিজিবি যাচাই করে তাদের সঠিক ঠিকানা বের করতে পারছেন না। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। আপাতত আটকদের অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় মহেশপুর এলাকাবাসী বলছেন, বিজিবি যে কয়েকজন অনুপ্রবেশকারীকে আটক করেছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি অনুপ্রবেশকারী পুলিশ ও বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশের মধ্যে প্রতিদিন প্রবেশ করছে।

অবশ্য বিজিবি কর্মকর্তা কামরুল আহসানের দাবি, তারা কঠোর নজরদারি করছেন। সে ক্ষেত্রে চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রবেশের সুযোগ খুবই কম। এ বিষয়ে ঝিনাইদহের মানবাধিকারকর্মী আমিনুর রহমান টুকু বলেন, সমপ্রতি ভারত সরকার ভারতের প্রকৃত নাগরিকদের তথ্য বের করতে তাদের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করেছে। ওই তালিকায় এদের নাম না থাকায় নির্যাতনের ভয়ে এসব নারী-পুরুষ বর্ডার পার হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। আমাদের দেশ একটা ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। তারপরও ইতিমধ্যে আমরা মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের থাকতে জায়গা দিয়েছি। এভাবে যদি আবার ভারত থেকে দলে দলে মানুষ আসতে থাকে তাহলে আমাদের অনেক বড় সমস্যা সৃষ্টি হবে।

তাদেরকে অবৈধভাবে আমাদের দেশে আসতে দিতে পারি না। আমাদের সীমান্তবর্তী থানার পুলিশ ও বিজিবিদের কঠোর হাতে অনুপ্রবেশকারীদের প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। ভারত আমাদের বন্ধু দেশ, এই বিষয়ে দ্রুত আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, কিছুদিন যাবৎ লক্ষ্য করা যাচ্ছে অবৈধ পথে ভারত থেকে আসা প্রচুর পরিমাণে নারী-পুরুষ ও শিশু ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত অঞ্চলে আটক হচ্ছেন। কারাগারে পাঠানোর পর তাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তাদের ভাষ্য, তারা পাসপোর্ট ছাড়াই অবৈধ পথে ভারতে গিয়ে বসবাস করছিল। ওখানে কোনো বাসা বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো। সমপ্রতি ওখানকার স্থানীয় নাগরিকরা তাদের খোঁজ করছে এবং যারা তাদের আশ্রয় দিয়েছিল তারা তাদের বলে দিয়েছে, তাদের আর রাখতে পারবে না। বাধ্য হয়ে তারা ভারতের স্থানীয় দালাল ধরে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এ সময় পুলিশ ও বিজিবি তাদের আটক করে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর