ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে সম্প্রতি আটক ৫৯ ‘বাংলাদেশী’কে শনিবার কলকাতায় নিয়ে আসার পরও পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে পুশব্যাক করা হয়নি। বর্তমানে এদের আশ্রয় মিলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পুলিশের কাছে। তবে তাদেরকে যেকোন সময় পুশব্যাক করা হতে পারে বলে জানা গেছে। নবান্ন সূত্রে খবর, ‘মানবিকতার’ খাতিরে আপাতত পশ্চিমবঙ্গ সরকার ওই বাংলাদেশিদের সাময়িক থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য পশ্চিমবঙ্গের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, রবিবার সকালেই এই ৫৯ জনকে পুশব্যাকের জন্য উত্তর ২৪ পরগণার নিশ্চিন্দা থানায় নেয়া হয়েছে। তবে কোন পদ্ধতিতে এদের পুশব্যাক করা হবে তা নিয়ে প্রশাসনের কোনও মহলই কোন কথা বলেন নি। তবে এই ভাবে অবৈধ বাংলাদেশিদের আইনি অনুমোদন ছাড়া বাংলাদেশে পুশব্যাক করার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি।
জানা গেছে, পুশব্যাক করার জন্য ৫৯ জন বাংলাদেশিকে ট্রেনে চাপিয়ে পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে এসেছিল কর্নাটক পুলিশের ৪০ জনের একটি দল। এদের মধ্যে ২৫ জন নারী, ১০টি শিশু এবং ২৪ জন পুরুষ। তবে ‘পদ্ধতিগত জটিলতা’র কারণে পুশব্যাকের প্রক্রিয়া থমকে গিয়েছে। সাধারণত, যে রাজ্যের সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠানো হয় অনুপ্রবেশকারীদের সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছানোর দায়িত্ব সেই রাজ্যের পুলিশের। তারপর সীমান্ত পাড়ের দায়িত্ব নেয় বিএসএফ। কিন্তু এই গোটা প্রক্রিয়ার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব থাকায় বিষয়টি থমকে গিয়েছে বলে জানা গেছে। কয়েকদিন আগে বেঙ্গালুরুতে আটক আরও ৮২ জনকে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়েছে। সূত্রের খবর, বেঙ্গালুরুর একটি হোমে ২৬ দিন আটকে রাখার পর ৫৯ জনকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্নাটক সরকার। শুক্রবার সকালে এদের ট্রেনে একটি আলাদা কামরায় তুলে দেওয়া হয়েছিল বিশেষ প্রহরায়। শনিবারই দলটি হাওড়ায় এসে পৌঁছেছে । উল্লেখ্য, গত মাসে বেঙ্গালুরুর বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ বহু বাংলাভাষীকে আটক করেছে। বেঙ্গালুরু পুলিশের দাবি, এদের কাছে ভারতীয় নাগরিকত্বের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় নি। পুলিশের আরও দাবি, জেরায় তারা স্বীকার করেছেন যে তারা বাংলাদেশি এবং কোনও রকম নথিপত্র ছাড়াই কাজের সন্ধানে দালালদের মারফত সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে এসেছিল। কর্ণাটক পুলিশ জানিয়েছে, আটক বাংলাদেশিরা পাচার হয়ে এসেছে গণ্য করে আটকদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা রুজু করা হয়নি। তবে প্রথম দফার ৮২ জন এবং দ্বিতীয় দফার এই ৫৭ জনের বাইরে আরও চারজন রয়েছে, যারা পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট মামলা শুরু করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে মানবাধিকার সংগঠন বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সম্পাদক কিরীটি রায় এক বিবৃতিতে এই ভাবে আদালতের অনুমতি ছাড়া কথিত বাংলাদেশিদের পুশব্যাকের তীব্র বিরোধীতা করেছেন। কিরীটি রায় প্রশ্ন তুলেছেন, সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের কর্ণাটকে এলেন কী করে? এদের পুশব্যাকের আইনি নির্দেশ কোথায়? সেইসঙ্গে তিনি বলেছেন, ধৃতরা যে অবৈধ বাংলাদেশি তার প্রমাণ হল কীভাবে। আর এ ব্যাপারে কি বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করা হয়েছে? এই সব প্রশ্নের সদুত্তর দাবি করেছেন তিনি প্রশাসনের কাছে। অ্যাসোসিয়েশন অব প্রটেকশন অব ডেমোক্রাটিক রাইটস (এপিডিআর)-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আদালতে না তুলে ধৃতদের অপরাধী বিবেচনা করে পুশব্যাক করাটা সম্পূর্ণ বেআইনি। একই সঙ্গে অমানবিকও। এপিডিআরের মতে, এই ধরণের ঘটনায় কেন্দ্র ও রাজ্য কেউই দায় এড়াতে পারে না।