জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধে তেশ জুগে যখন আন্দোলন চলছে ঠিক তখনই ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ গোটা দেশে এনআরসি চালু করার পক্ষে প্রশ্ন করে চলেছেন। তিনি বলেছেন, পৃথিবীর কোনও দেশই অনুপ্রবেশকারীদের বসবাস করতে দেয় না, ভারতও দেবে না। এনআরসি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই অনঢ় মনোভাবের প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীসহ বিরোধী দলগুলি পাল্টা হুমকি দিয়েছেন যে, কিছুতেই নাগরিকপঞ্জি চালু করতে দেওয়া হবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, দেশের বৈধ নাগরিকদের সরকারি তালিকা থাকা প্রয়োজন। মোদী সরকার এ বিষয়ে বদ্ধপরিকর। অমিত শাহর মতে, সময় এসেছে এই ধাঁচের একটি তালিকা তৈরির। এই তালিকায় যাঁরা থাকবেন, শুধু তাঁরাই ভোট দিতে পারবেন। দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার থাকবে শুধু তাঁদেরই। ইতিমধ্যেই এই কাজে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
আর বিলম্ব করা হবে না। তবে সম্প্রতি আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী তৈরি নিয়ে নানা ত্রুটি ও অসঙ্গতি সামনে এসেছে। প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়েছে। এর অধিকাংশই হিন্দু। এছাড়া জনজাতির মানুষও রয়েছেন এই বাদ যাওয়ার তালিকায়। ফলে আসামের বিজেপি দাবি তুলেছে, আসমের জন্য তৈরি এনআরসি বাতিল করা হোক। তবে এনআরসি নিয়ে অমিত শাহর মতের তীব্র বিরোধীতা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এত দিন যাঁরা ভোট দিলেন, তাঁরা কি এ দেশের নাগরিক নন? আজ কাগজ দেখিয়ে তাঁদের নাগরিকত্বের প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। মমতার এই আপত্তি প্রসঙ্গে অবশ্য অমিত শাহ বলেছেন, একটি দলের সভানেত্রী বা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি কী অবস্থান নেবেন, সেটা তাঁর ব্যাপার। এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। আমি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বলতে পারি, গোটা দেশে এনআরসি হবে। এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ বা সে রাজ্যের ভোটের সম্পর্ক নেই। অবশ্য আগামী ভোটের দিকে তাকিয়ে বিজেপি অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। এবারের সংসদ অধিবেশনে এই সংক্রান্ত বিলটি আসা হবে বলে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে। তবে বিরোধীরা প্রশ তুলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষ দেশের সরকার কি আদৌ ধর্মভিত্তিক কোনও নীতি গ্রহণ করতে পারে? এর জবাবে অমিত শাহ অনুপ্রবেশকারী ও শরণার্থীদের মধ্যে পার্থক্যের কথা তুলে বলেছেন, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ হচ্ছে মুসলিম দেশ। সে দেশে অন্য ধর্মের মানুষেরা ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ধর্মীয় অত্যাচারে ওই দেশগুলির হিন্দু, শিখ, পার্সি ও বৌদ্ধ ধর্মের লোকেরা ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের কোনও ভাবেই অনুপ্রবেশকারী বলা যায় না। কারণ অতীতেও উগান্ডা, শ্রীলঙ্কা থেকে আসা শরণার্থীদের ভারত আশ্রয় দিয়েছে। অবশ্য ইতিমধ্যেই নাগরিকত্ব বিলের আগের খসড়াকে পরিবর্তন করে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে নতুন খসড়া তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। সংসদে এই খসড়া বিলটি পাশ হয়ে গেলেই যে বিজেপি সারা দেশে এনআরসি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়বে তা স্পষ্ট হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনড় মনোভাবে।