বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ প্রশাসনের পদ-পদবি পাওয়ার লোভে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে ঠিকমতো অংশ না নিয়ে বিভিন্ন লবিং এ ব্যস্ত থাকেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল হামিদ। তিনি আরো বলেন, অনেকে আবার নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে পিছপা হন না। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ভুলে গিয়ে পারস্পারিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট লেনদেনে সম্পৃক্ত হন। এটা অত্যন্ত অসম্মানের ও অমর্যাদাকর। রাজনৈতিক মতাদর্শ ও চিন্তা চেতনায় একজনের সঙ্গে আরেক জনের পার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাব যেন প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষার্থীদের উপর না পড়ে তাও নিশ্চিত করতে হবে।
আজ শনিবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শেখ কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির একাদশ সমাবর্তনে শিক্ষকদের উদ্দেশ্য করে প্রেসিডেন্ট এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট বলেন, তোমরা আজ গ্রাজুয়েট। দেশের উচ্চতর মানবসম্পদ। দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও অগ্রগতি নির্ভর করছে তোমাদের উপর।
তোমাদের তারুণ্য, জ্ঞান, মেধা ও প্রজ্ঞা হবে দেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে একজন গ্রাজুয়েট হিসেবে সব সময়ে সত্য ও ন্যায়কে সমুন্নত রাখবে। নৈতিকতা ও দৃঢ়তা দিয়ে দুর্নীতি ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেন, গবেষণা ছাড়া কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে পারে না। নিত্য-নতুন গবেষণায় দেশ এগিয়ে যাবে, মান-সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হবে। এটাই আমাদের সকলের কাম্য। উচ্চ শিক্ষাকে আরো গতিশীল করার জন্য সকল বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে গবেষণা কাজে আরো মনযোগী হতে হবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, জ্ঞান-বিজ্ঞানের যে শাখায় আমরা বিচরণ করি না কেন, আমাদের সকলের জন্য বিষয় ভিত্তিক জ্ঞানের পাশাপাশি কিছু দক্ষতা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য আমাদের যে শিক্ষা ব্যবস্থা তা শিক্ষার্থীদের মাঝে এধরণের বিশেষ দক্ষতা তৈরি করতে পারছে না।
এর আগে বিকেল তিনটার দিকে হেলিকাপ্টার যোগে প্রেসিডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হল সংলগ্ন মাঠে হ্যালিপ্যাডে অবতরণ করেন। এরপর তাকে ফুল দিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে থেকে সাময়িক বিশ্রামের জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি এম আব্দুস সোবহানের বাসভবনে যান। সেখানে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। বিকেল পৌনে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাদশ সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠানস্থলে যান। এরপর বিকেল চারটার দিকে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো পাঠের পর প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
পরে বিকেল সোয়া চারটার দিকে প্রেসিডেন্ট পিএইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্তদের সনদ প্রদান করেন। এরপর বিকেল ৫টা ৭ মিনিটে সমাবর্তন বক্তা ও অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথিকে সমাবর্তন স্মারক প্রদান করা হয়। এরপরই তিনি বক্তব্য দেন। বক্তব্যের শুরুতে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধসহ স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন। এ সময় তিনি ডিগ্রিপ্রাপ্তদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। এরপর সন্ধ্যা ৫টা ২৬ মিনিটে রাষ্ট্রপতি সামবর্তন অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসবে উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি। এছাড়া সমাবর্তন বক্তা ছিলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যাসাগর বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক রঞ্জন চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভিসি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্রো ভিসি চৌধুরী মো. জাকারিয়া।