বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে হরতাল কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। গতকাল সকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ভবনে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে গণশুনানি চলাকালে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সিপিবি ও বাসদ নেতারা। আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে এই হুঁশিয়ারি দেন বাম নেতারা।
জানা গেছে, বিদ্যুতের দাম বাড়াতে গত তিনদিন ধরে গণশুনানির আয়োজন করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। টিসিবি ভবন অডিটোরিয়ামে গত ১লা ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে তা শেষ হয় গতকাল। এই গণশুনানি চলাকালে টিসিবি ভবনের নিচে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ করে সিপিবি ও বাসদ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, এই সরকারের আমলে ৮ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। প্রতিবারই গণশুনানির নামে তামাশা চলছে।
বিইআরসি সরকারের তাবেদারি সংস্থায় পরিণত হয়েছে। অথচ এটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সমাবেশে বক্তারা বলেন, কুইক রেন্টালের নামে ৫৬ হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে আধুনিকায়ন না করেই বেসরকারি লুটেরা ধনিকশ্রেণির হাতে বিদ্যুৎ খাত তুলে দেয়া হচ্ছে। ধনিকশ্রেণির লুটপাটের স্বার্থেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। বিনা ভোটে নির্বাচিত বর্তমান সরকার আজ দুর্নীতিবাজ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, লুটেরা ধনিকশ্রেণির স্বার্থেই দেশ পরিচালনা করছে। জনগণের প্রতি এই সরকারের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই।
শুধু বিদ্যুৎ নয় প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। সিন্ডিকেট ও মাফিয়াদের সরকারে পরিণত হয়েছে এই সরকার। বিদ্যুৎ এর দাম বাড়ানোর যে চক্রান্ত চলছে এর বিরুদ্ধে শ্রমজীবী মেহনতি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা। সমাবেশে বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘আজকে বিদ্যুতের দাম বাড়ালে তা শুধু বিদ্যুতের মধ্যে থেমে থাকবে না। সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাবে। কারখানার উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে, কৃষকের সেচের খরচ বেড়ে যাবে। সব ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ বাড়লে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরো বেড়ে যাবে।’ বিদ্যুৎ খাতের ব্যবসায়ীদের সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মো. শাহ আলম বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে কিছু করা যাবে না। সেখানে ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করা যাবে না। তিনি বলেন, শেয়ার মার্কেট লুট করছে যারা, বিদ্যুৎ লুট করছে যারা, পরিবহনের মাফিয়া যারা, এরাই তো সংসদে। তারা কী তাদের স্বার্থ ছেড়ে আমার-আপনার জন্য আইন করবে? বিদ্যুতে যারা লুট করছে, তারা কি গ্রাহকের পক্ষে আইন করবে? করবে না।’ যদি সিস্টেম লসের নামে যে চুরি, ডাকাতি বন্ধ হয় তাহলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না বলে জানান তিনি।’ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, সিপিবির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহকারী সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন, প্রেসিডিয়াম সদস্য অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, বাসদ নেতা খালেকুজ্জামান লিপন, আহসান হাবিব বুলবুল, সিপিবি কেন্দ্রীয় নেতা হাসান তারিক চৌধুরী প্রমুখ।