বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও অবিভক্ত ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা স্মরণে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত নাগরিক শোকসভায় বক্তারা বলেছেন, খোকা ছিলেন সত্যিকারের একজন মানবতাবাদী উদার মনের রাজনীতিক। দলীয় রাজনীতি করলেও তার কর্মকাণ্ড ও দৃষ্টিভঙ্গি ছিল দলমতের অনেক ঊর্ধ্বে। সরকারি দায়-দায়িত্ব পালনকালে তিনি কখনও কারো প্রতি বৈষম্য করেননি। তার মৃত্যুর পর এর প্রমাণ মিলেছে পরিষ্কারভাবেই। আর তাই নিজের কর্মের মধ্যেই তিনি বেঁচে থাকবেন আরও বহুকাল।
গত রোববার রাতে নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের বেলোজিনো কনভেনশন সেন্টারে এই শোকসভা আয়োজিত হয় প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক সমাজের উদ্যোগে। ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও ভাসানী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান ইউসুফজাই সালুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাদেক হোসেন খোকার কন্যা সারিকা হোসেন দৃষ্টি ও বোন নারগিস বেগম। স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা শেষে দোয়া পরিচালনা করেন জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের খতিব মাওলানা মির্জা আবু জাফর বেগ।
সাপ্তাহিক বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক ডাক্তার ওয়াজেদ এ খানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সাংবাদিক ও লেখক মনজুর আহমদ, সিনিয়র সাংবাদিক মঈনুদ্দিন নাসের, সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, টাইম টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী আবু তাহের, সাংবাদিক ফজলুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী, সাবেক দুই সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন খান ও ফখরুল আলম, স্থানীয় আল নূর কালাচারাল সেন্টারের পরিচালক মুফতি মো. ইসমাঈল হোসেন, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেত্রী ও সংগীত শিল্পী বেবি নাজনীন, স্থানীয় বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিল্টন ভূঁইয়া ও জিল্লুর রহমান জিল্লু, মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার ফরহাদ হোসেন, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. শওকত আলী, কমিউনটি নেতা আলী ইমাম শিকদার ও কাজী নয়ন, জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সম্পাদক মনজুর আহমেদ চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের সভাপতি জাকির এইচ চৌধুরী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, ছাত্রদলের সাবেক নেতা মোশাররফ হোসেন সবুজ, বাংলাদেশ সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি শেখ হায়দার আলীসহ আরও অনেকেই।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাংবাদিক আবু তাহের বলেন, শেষ বিদায়ের কিছুদিন আগে সর্বশেষ যেদিন খোকা ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল, স্বাভাবিক নিয়মেই কুশল জানতে চেয়েছিলাম। জবাবে তিনি বললেন, এইতো ভালোই আছি, অনেকটা যেমন ট্রেনের জন্য স্টেশনের প্ল্যাটফরমে অপেক্ষায় আছি। একটা ট্রেন আসবে, তারপর সেটায় চড়ে চলে যাবো। খোকা ভাই শেষ পর্যন্ত আমাদের ফাঁকি দিয়ে এমন এক ট্রেনে চড়েই চলে গেলেন যে আর কোনোদিন ফিরবেন না। এমন একজন অসাধারণ সজ্জন মানুষের বিদায়ে রাজনৈতিক অঙ্গন তো বটেই, দেশেরও অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
অন্য আলোচকরা বলেন, সাদেক হোসেন খোকা ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক, মানবতাবাদী এবং প্রকৃত দেশপ্রেমিক একজন নেতা। তার সাথে কারো তুলনা চলে না। তার তুলনা শুধু তিনি নিজেই। তিনি মেয়র থাকাকালে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের নাম মুক্তিযোদ্ধাদের নামে করেছিলেন দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির ঊর্ধ্বে ওঠে। তিনি সব সময় নিজ দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করেছেন। কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগামীতে যেন আর কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে পাসপোর্ট না থাকায় মৃত্যুর পর ট্রাভেল পারমিট নিয়ে দেশে ফিরতে না হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধার নামে যেন রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা মামলা দেয়া না হয় এবং প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে সম্পত্তি কেড়ে নেয়া না হয়।
সারিকা সাদেক প্রবাসে তার পিতাকে নিয়ে নাগরিক শোকসভার আয়োজন করায় উদ্যোক্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং অংশগ্রহণকারী সকলকে ধন্যবাদ জানান।