× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

হবিগঞ্জে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে পুকুরচুরি /অ্যাকশনে দুদক মন্ত্রণালয়

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা ও হবিগঞ্জ
৪ ডিসেম্বর ২০১৯, বুধবার

শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের পৌনে ১৪ কোটি টাকার কেনাকাটায় দুর্নীতি-অনিয়মের তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তদন্তের অংশ হিসেবে গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা সরজমিন কলেজ পরিদর্শন করে কেনাকাটার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। এর আগে সোমবার অনিয়ম তদন্তে কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য ও  পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। সরকার প্রধানের নামে নব প্রতিষ্ঠিত এই কলেজে কেনাকাটার নামে পুকুর চুরির তথ্য উপাত্ত নিয়ে প্রথম রিপোর্ট প্রকাশ করে মানবজমিন। ওই রিপোর্ট প্রকাশের পর তোলপাড় শুরু হয় সর্বত্র। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশনা আসে। এর অংশ হিসেবে মন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্র জানায়, রিপোর্ট প্রকাশের পর অনিয়মের বিষয়টি তাদের নজরে আসে। এছাড়া স্থানীয়রা দুদকের হটলাইনে ফোন দিয়েও ওই অনিয়মের বিষয়ে প্রতিকার চান। অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রাথমিক তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়। প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর দুদক বিশদ তদন্তে যাবে। তদন্তে ঘটনা সত্য প্রমাণ হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলার উদ্যোগ নেয়া হবে।

গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় হবিগঞ্জ শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে ঝটিকা অভিযান চালায় দুদকের হবিগঞ্জ জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের একটি দল। এ সময় কলেজের ক্রয় করা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও জিনিসপত্র ও বিল ভাউচার খতিয়ে দেখা হয়। বিভিন্ন মালামালের ছবিও সংগ্রহ করেন দুদক কর্মকর্তারা। প্রায় দুই ঘণ্টা অভিযান চলাকালে কলেজের কয়েকজন শিক্ষককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির কোনো সদস্যকে পায়নি দুদকের তদন্তকারী দল।
দুদক জানায়, কমিশনের ১০৬ হটলাইনে এ ব্যাপারে (মেডিকেল কলেজের দুর্নীতি) অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর এগুলো আমলে নিয়ে প্রধান কার্যালয় থেকে হবিগঞ্জ দুর্নীতি দমন কমিশনকে প্রাথমিক তদন্তের নির্দেশনা দেয়া হয়। এ প্রেক্ষিতেই প্রাথমিক তদন্তে নেমেছে হবিগঞ্জ দুদকের দল।

অভিযানে নেতৃত্বদানকারী হবিগঞ্জ দুদকের সহকারী পরিচালক এরশাদ মিয়া জানান, প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে আমরা প্রাথমিক তদন্তে এসেছি। ক্রয় করা মালামালের দর সম্পর্কে বাজারে যাচাই করা হবে। পরবর্তীতে দুর্নীতির প্রমাণ ও কমিশনের অনুমতি পেলে বিস্তারিত তদন্ত করবে দুদক। এটা তাদের প্রথম পদক্ষেপ। বিস্তারিত তদন্তের পর এ ব্যাপারে মামলা এবং চার্জশিটের প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। তবে অভিযানকালে কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. আবু সুফিয়ান ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব ডা. নাসিমা খানমকে খুঁজে পায়নি দুদক। এ সময় মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোলায়মান মিয়া ও প্রভাষক ডা. রোজিনা রহমানকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদক কর্মকর্তারা। অভিযানে দুদক হবিগঞ্জের সহকারী উপ-পরিচালক আব্দুল মালেক, উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মোতালেব ও কনস্টেবল মো. ছদরুল আমীন উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৪শে নভেম্বর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে দুর্নীতি বিষয়ে ‘প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ জরুরি’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হয় মানবজমিন-এ। ওই প্রতিবেদনে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। নব প্রতিষ্ঠিত এই মেডিকেল কলেজে পুকুর চুরি ও মামামাল ক্রয়ে অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবিও ওঠে সর্বত্র।

মানবজমিন এর হাতে আসা নথিপত্রে দেখা যায়, শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ মালামাল ক্রয় বাবদ ব্যয় দেখানো হয় ১৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮১ হাজার টাকা। কিন্তু বাস্তবে ওই মালামালের মূল্য ৫ কোটি টাকার বেশি নয়। সরবরাহকৃত মালামালের মধ্যে ৬৭ টি লেনেভো ১১০ মডেলের ল্যাপটপের মূল্য নেয়া হয় ৯৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। প্রতিটির মূল্য পড়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৫শ’ টাকা। অথচ বাজারে একই মডেলের ল্যাপটপ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪২ হাজার টাকায়। ৬০ হাজার টাকা মূল্যের এইচপি কালার প্রিন্টার এর দাম নেয়া হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯শ’ টাকা। ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকার ইন্টারেক্টিভ বোড কেনা হয়েছে ১৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকায়। ৬ হাজার ৪শ’ ৭৫টি বইয়ের জন্য বিল দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৮ হাজার ৬৬৪ টাকা। এ ছাড়াও মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ১০৪টি প্লাস্টিক মডেলের মূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৩ টাকা। যেগুলোর বাজার মূল্য অর্ধেকের চেয়েও কম। ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা দরে ৮১টি কার্লজিস প্রিমো স্টার বাইনোকুলার মাইক্রোস্কোপ সরবরাহ করা হয়েছে। যার মূল্য নিয়েছে ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। অথচ এর বাজার মূল্য ১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। ৫০ জনের বসার জন্য কনফারেন্স টেবিল, এক্সিকিউটিভ চেয়ার ও সাউন্ড সিস্টেমে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬১ লাখ ২৯ হাজার টাকা। দেশের নামিদামি ফার্নিচার প্রতিষ্ঠানে এ সব চেয়ারের মূল্য ওই দামের অর্ধেকের চেয়েও কম। ওয়ালটনের যে মডেলের ফ্রিজ ৩৯ হাজার ৩৯০ টাকা, একই মডেলের ফ্রিজের মূল্য গুণতে হয়েছে ৮৫ হাজার টাকা। এ রকম ৬টি ফ্রিজ কেনা হয়।

বাজারমূল্য থেকে কয়েকগুণ বেশি দরে এসব যন্ত্রপাতি ও সামগ্রী সরবরাহ করে ঢাকার নির্ঝরা এন্টারপ্রাইজ ও পুনম ট্রেড ইন্টার ন্যাশনাল নামে দুটি প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ উঠেছে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. আবু সুফিয়ান দরপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে এ দুই প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করেন। এদিকে দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের পর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন অধ্যক্ষ সুফিয়ান। হবিগঞ্জ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান মানবজমিনকে জানান, প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে প্রাথমিক তদন্তে নেমেছে হবিগঞ্জ দুদক। এ তদন্তের রিপোর্ট প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে। রিপোর্টে কোন অনিয়ম পাওয়া গেলে সেখান থেকে অনুমতি আসলে পরবর্তীতে বিস্তারিত তদন্ত করা হবে। উল্ল্যেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছায় ২০১৫ সালের ১লা জানুয়ারি কলেজটি অনুমোদন লাভ করে। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ৫১ জন শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে কলেজটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর