× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

জলবায়ু পরিবর্তন: বাংলাদেশের নতুন কণ্ঠস্বর শবনম

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৪ বছর আগে) ডিসেম্বর ৪, ২০১৯, বুধবার, ২:৫০ পূর্বাহ্ন

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন টিনেজার রেবেকা শবনম (১৬)। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে একটি হাইস্কুলের ছাত্রী সে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তাকে নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের নারীরা ও রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যেসব ঝুঁকির মুখে তা নিয়ে জোরালো প্রচারণা চালাচ্ছে। নিউ ইয়র্কেরই পরিবারের সঙ্গে সঙ্গে বসবাস তার। বয়স যখন ৬ বছর তখন পরিবার তাকে নিয়ে চলে যায় যুক্তরাষ্ট্রে। ম্যানহাটানে হাজারো জনতার সামনে দাঁড়িয়ে শবনম জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কি ভয়াবহ সঙ্কটের মুখে পড়ছে বাংলাদেশ তা তুলে ধরে। দৃপ্তকণ্ঠে তার উচ্চারণ, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট জরুরি অবস্থা কিভাবে জাতিগত অনাচার ও দারিদ্র্যের সঙ্গে আন্তঃসম্পর্কিত তার একটি উদাহরণ হলো বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন  বর্ণের মানুষ মাঝে মাঝে বৈষম্যমুলকভাবে আক্রান্ত হয়-  এর মধ্য দিয়ে তা-ই ফুটিয়ে তুলেছে শবনম। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

স্পেনের মাদ্রিদে বিশ্বনেতারা যখন ইউএন ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্স বা সিওপি২৫-এ যোগ দেন এ সংক্রান্ত সঙ্কট নিয়ে আলোচনা ও তার সমাধান বের করতে, তখন রেবেকা শবনমের ওপর আলো ফেলেছে আল জাজিরা। ওই সম্মেলনে বিশ্বজুড়ে মূল আলোচনার ইস্যু জলবায়ু পরিবর্তন। তবে এই আলোচনাকে সামনে নিয়ে এসেছে যুব সমাজের অধিকারকর্মীরা। বিশেষ করে গ্রেটা থানবার্গের মতো টিনেজ শিক্ষার্থীরা। গ্রেটা থানবার্গ সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন চলাকালে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে নিউ ইয়র্ক সিটিতে হাজারো মানুষের সমাবেশে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে জোরালো বক্তব্য উত্থাপন করে। ওই সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন কমপক্ষে দুই লাখ মানুষ। তারা ম্যানহাটান প্রদক্ষিণ করেছে। তার মধ্যে দূরের বাংলাদেশকে তুলে ধরেছে একজন টিনেজার। সে রেবেকা শবনম। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বিপন্ন যেসব দেশ এবং যাকে নিয়ে কমই রিপোর্ট করা হয়েছে, সেই বাংলাদেশকে তুলে ধরে শবনম। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের নারী, শিশু ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয় তুলে ধরে সে। ওই সমাবেশে দাঁড়িয়ে সে বাংলাদেশে তার শৈশব সম্পর্কে বক্তব্য রাখে। বর্ণনা করে, রাজধানী ঢাকায় বন্যার সময় তার এক আঙ্কেল কিভাবে তাকে পিঠে করে স্কুলে নিয়ে গিয়েছিলেন।

পরে শবনম কথা বলেছে আল জাজিরার সঙ্গে। সে বলেছে, যখন ম্যানহাটানের ওই সমাবেশে সে বক্তব্য রেখেছে বাংলাদেশকে নিয়ে তখন নীরবতা ছাড়া আর কিছুই শুনতে পায় নি। পক্ষান্তরে জনতার সাড়া দেখে অভিভূত হয়েছে শবনম। নিউ ইয়র্কে উত্তাল জনতার সামনে শবনম বলে, জলবায়ু বিষয়ক সংকট শুধুই একটি পরিবেশগত ইস্যু নয়। এটি জরুরি মানবাধিকার বিষয়ক ইস্যু। জলবায়ু সঙ্কটের ফলে বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর বাংলাদেশী নারীরা চরমভাবে বিপন্ন হয়ে পড়েন। বাঙালি নারী এবং বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী মানুষগুলোকে আমরা জানাতে চাই যে, বিশ্বজুড়ে যুব সমাজ তাদের জীবন ও নিরাপত্তার জন্য লড়াই করছে।

আল জাজিরা লিখেছে, সিওপি২৫ আশা করছে তারা বিভিন্ন রকম ইস্যুতে দৃষ্টি দেবে। এর মধ্যে রয়েছে বৈশ্বিক পর্যটন শিল্পে জলবায়ু-বান্ধব পদক্ষেপের বাস্তবায়ন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ২০১৬ নিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়া এবং আন্তর্জাতিক তদন্ত, যেখানে বৈশ্বিক নেতারা জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে যুব সমাজের কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। এবারের সম্মেলন শুরুর দু’সপ্তাহ আগে আল জাজিরাকে রেবেকা শবনম বলেছে, সিওপি২৪ গত বছর যেটুকু আশা বা দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেছে, তার চেয়ে আরো বেশি জরুরি হিসেবে বিষয়টিকে দেখা উচিত। তার ভাষায়, আমরা চাই না যে, সিওপি২৫ শুধু তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগজনক ডাটাই আমলে নেবে। একই সঙ্গে আমরা চাই ফসিল জ্বালানিতে তহবিল, এর সম্প্রসারণ ও ব্যবহার বন্ধে পরামর্শ। আমি আশা করি তারা (বিশ্বনেতারা) শুধু নবায়নযোগ্য উৎসের দিকে ফেরার বিষয়েই নজর দেবেন না, একই সঙ্গে তা হতে হবে সামনের সারিতে থাকা সম্প্রদায়ের পরিবর্তনের জন্য।

উল্লেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে যেসব দেশ তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। এ দেশটি সমতল ভূমির। ফলে এখানে খুব বেশি বন্যা হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ২০১৬ সালে ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৬ষ্ঠ। এরই মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ঝুঁকি বৃদ্ধির ফলে জলবায়ু সংক্রান্ত অভিবাসীর সংখ্যা মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে ১৬ কোটি মানুষের এই দেশের উপকূল অঞ্চলে এই ঝুঁকিটা বেশি। এসব অঞ্চল থেকে মানুষ শহরমুখী হচ্ছেন বলে শহরের ভিতর জনসংখ্যার অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে যুবতী ও শিশুদের পাচারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। জুলাইয়ে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, নারীরা যেসব কারণে ঘর ছাড়েন তার অন্যতম হলো জলবায়ু পরিবর্তন। এর ফলে নারীরা অধিক হারে পাচারের ঝুঁকিতে পড়েন।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের যোগাযোগ বিষয়ক ম্যানেজার সাকিল ফয়জুল্লাহ। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যু হলো এক নীরব বিপর্যয়। এই বিপর্যয় ঘটছে নিত্যদিন। ফলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে এ বিপর্যয়টা দেখতে পাই না। এপ্রিলে প্রকাশিত ইউনিসেফের এক রিপোর্ট বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের এক কোটি ৯০ লাখ শিশু। সাকিল ফয়জুল্লাহ বলেন, এর অর্থ হলো অন্যান্য সুবিধা সহ এসব শিশুর শিক্ষা বিঘ্নিত হচ্ছে। তার ভাষায়, বন্যা হলে স্বাস্থ্য সুবিধা প্রকৃতপক্ষে ধ্বংস হয়ে যায়। বিশেষ করে টিউবওয়েল। বন্যায় এসব জিনিস ডুবে যায়। বন্যার সময় স্কুল বন্ধ থাকে। যদি একটি শিশু স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পানীয় জল থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে তাকে আপনি কি অফার করতে পারেন? এগুলো তো মৌলিক চাহিদা।

রেবেকা শবনম নিউ ইয়র্কে সেপ্টেম্বরে দেয়া তার বক্তব্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা বিশ্বে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে যেসব সম্প্রদায় তাদের দিকে দৃষ্টি ফেরায়। বিশেষজ্ঞরা একমত যে, একই রকম ঝুঁকিতে রয়েছেন নারী ও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়। সাংস্কৃতিক আদর্শে নারীরা প্রভাবিত হওয়া ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাড়িঘর ছেড়ে আসা নারীরা বৈষম্যের শিকার হন। এমনটা মনে করেন ব্র্যাকের ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্রিপিয়ার্ডনেস বিষয়ক প্রোগ্রাম ম্যানেজার ময়েন উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক অভিবাসনের ফলে একটি বাড়ির পুরুষ ব্যক্তিটি মাঝে মাঝেই আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হন। এর ফলে গৃহস্থালির যাবতীয় দায় চাপে একজন নারীর কাঁধে।
শবনম বলেছে, সে চেষ্টা করছে বাংলাদেশকে যেন ভুলে যাওয়া না হয় এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে। একই সঙ্গে ‘আমরা আমাদের দাবিকে অব্যাহতভাবে চাপ দিয়ে সামনে এগিয়ে নিতে চাই’।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর