× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ঢাবি অধিভুক্ত ৭ কলেজ কাহন / তিতুমীরে সমস্যার পাহাড়, ছাত্রাবাসের ছাদ রক্ষায় বাঁশ

শিক্ষাঙ্গন

পিয়াস সরকার
(৪ বছর আগে) ডিসেম্বর ৫, ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:০৩ পূর্বাহ্ন

ছাত্রাবাসের পলেস্তারা খসে পড়ছে। বাঁশ দিয়ে ঠেলে রাখা হয়েছে ছাদ। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করেছে ভবনটি। তারপরও নিরুপায় শিক্ষার্থীরা শঙ্কা নিয়ে রাত কাটাচ্ছে। এ চিত্র রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের। সমস্যার পাহাড় সরকারি এ কলেজে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যাওয়া সাত কলেজের এটি একটি।

অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষার্থীর জন্য এখানকার প্রধান সমস্যা শ্রেণিকক্ষ সংকট।
কলেজে শ্রেণিকক্ষ রয়েছে মাত্র ৪২টি। সে হিসাবে ১২শ’ শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ১টি শ্রেণিকক্ষ। একেকটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের একাধিক শাখা করে ক্লাস নেয়া হয়। একেকটি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ২ থেকে ৩ শতাধিক। ভাগ করে ক্লাসের ব্যবস্থা করা হলেও নেই পর্যাপ্ত ভবন। এ অবস্থায় নতুন ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছে। কিন্তু নির্মাণাধীন ওই ভবনে দেখা দিয়েছে ফাটল। এ অবস্থায় ঠিকাদার গেছেন পালিয়ে। ফলে কাজ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া হল সংকট, সেশনজট পিছু ছাড়ছে না শিক্ষার্থীদের।

কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৮ সালে। শুরুতে নাম ছিলো জিন্নাহ কলেজ। স্বাধীনতার পর নাম রাখা হয় তিতুমীর কলেজ। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে শুধুমাত্র উচ্চমাধ্যমিক থাকলেও বর্তমানে বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যার দিক থেকে সর্ববৃহৎ কলেজ এটি। এখানে অধ্যয়নরত আছেন ৫০ হাজার ৪৬২ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ২০ হাজার ১৮৫ টাকা। শিক্ষকের সংখ্যা ২১৪ জন। অর্থাৎ ২৩৬ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন শিক্ষক। ২২টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়।

হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্শ্ষর শিক্ষার্থী আল হাসান রাব্বী বলেন, শ্রেণিকক্ষের অভাবে আমরা ঠিকমতো ক্লাস করতে পারি না। ক্লাসের জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হয়। আমাদের বিভাগের নেই কোন স্থায়ী ক্লাসরুম। আর ৪৫ মিনিটের এসব ছোট ক্লাসে রোল কল করতেই চলে যায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট।

কলেজে নেই কোন ক্যান্টিন। নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা। পানি পানের জন্য শিক্ষার্থীদের যেতে হয় ক্যাম্পাসের বাইরে। নেই পর্যাপ্ত ওয়াশরুম। রীতিমতো সিরিয়াল দিয়ে যেতে হয় এসব ওয়াশরুমে। ক্লাসের ফাঁকে শিক্ষার্থীদের থাকতে হয় যত্রতত্র। কারণ নেই কমনরুম বা বসার কোন স্থান।

২০১৭-১৮ সেশনে যারা ভর্তি হয়েছেন তাদের সেশনজট না থাকলেও পূর্ববর্তী শিক্ষার্থীদের এই সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থীদের চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। তাদের শেষ হয়ে যাবার কথা ছিল ২০১৮ সালে। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তানিয়া রহমান বলেন, আমাদের ক্লাস নিয়মিত হয়। তবে কলেজে প্রায় সময়ই বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষার জন্য ক্লাস বন্ধ থাকে।

কলেজে রয়েছে মাত্র ৩টি হল। ছাত্রীদের ২টি ও ১টি ছাত্রদের। ছাত্রী হলে ২শ’ জন করে ৪শ’ জন থাকার কথা থাকলেও থাকছেন ২ থেকে ৩ গুণ বেশি শিক্ষার্থী। সুফিয়া কামাল ছাত্রীনিবাসটি কলেজের পাশেই। এই হলের শিক্ষার্থী আনিতা রহমান বলেন, আমাদের কক্ষে ৪ জন থাকার কথা। আমরা থাকি ৮ জন। অনেক রুমে আমাদের থেকেও অধিক পরিমাণে শিক্ষার্থী থাকেন। আরেকটি ছাত্রীনিবাস বনানীতে অবিস্থিত, নাম সিরাজ ছাত্রীনিবাস। ওই হলের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ৪ জনের রুমে থাকেন ৭ জন। অনেক রুমে ১০ থেকে ১৫ জন করেও থাকতে হয়। ছাত্রদের ৩ তলা বিশিষ্ট আক্কাছুর রহমান আঁখি ছাত্রাবাসটির অবস্থা ভয়াবহ। এখানে থাকেন প্রায় ৮শ’ শিক্ষার্থী। এই ছাত্রাবাসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী তার কক্ষে নিয়ে গিয়ে দেখান ৪ জনের সিটে ১৪ জন বাস করছেন তারা। এছাড়া একই অবস্থা প্রায় অধিকাংশ রুমে। রুম গুলোর পলেস্তারা ধ্বসে পড়েছে। বাঁশ দিয়ে কোন রকমে আটকে রেখেছেন খসে পড়া পলেস্তারা। যদিও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ভবনটি। তবে ছাত্রদের চাপের মুখে সংস্কার কাজে হাত দিতে পারেননি কর্তৃপক্ষ।

এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে মাত্র ৪টি বাস। অর্থ্যাৎ গড়ে ১২ হাজার ৬শ’ ১৫ জন শিক্ষার্থীদের জন্য ১টি বাস। ৬০ সিটের এসব গাড়িতে ২শ’ ১০ জনের জন্য বরাদ্দ ১টি সিট। কলেজের গ্রন্থাগারে আসন সংখ্যা মাত্র ১শ’। অর্থ্যাৎ প্রতি ৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য বরাদ্দ ১টি করে আসন। গ্রন্থাগারে বই নামমাত্র। প্রতিটি বিভাগের বই গড়ে সেখানে মেলে ১০ থেকে ১৫টি। আর সেমিনার হলেরও একই অবস্থা। কলেজে রয়েছে একটি খেলার মাঠ। খেলার সামগ্রী দেয়া হয়না তাদের। এছাড়াও শরীরচর্চার সামগ্রীও অপ্রতুল। আর সেখানে যা আছে সবই ব্যবহার অনুপযোগী। অভিযোগ রয়েছে কলেজের ওয়েবসাইট একাধিকবার ‘হ্যাক’ হয়েছে। তাছাড়া ওয়েবসাইটে নিয়মিত আপডেট তথ্য মেলেনা বলেও জানা যায়।

তিতুমীরে ছাত্ররাজনীতির সহঅবস্থান থাকার কথা শোনা গেলেও বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠন তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। গত ২৯শে নভেম্বর কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার সময় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা কর্মীদের উপর ছাত্রলীগ হামলা চালায়। বিরোধী দলের ছাত্রসংগঠনের একাধিক নেতাকর্মীর দাবি, ছাত্রলীগের ভয়ে তার ক্যাম্পাসে নিজেদের কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন না।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রিপন মিয়া বলেন, হলে আমাদের সুপারিশ ছাড়া উঠতে পারে না এ বিষয়টি সম্পুর্ণ মিথ্যা। আমাদের কোন প্রভাব নেই এতে। আর বিরোধী দলীয় কেউ রাজনীতি না করলে আমাদের করণীয় কী থাকতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের কলেজ নানা সমস্যায় জর্জরিত। কলেজের মানোন্নয়নে আমারা নিজেরাও কাজ করে যাচ্ছি।

তিতুমীর কলেজের প্রধান সমস্যা শ্রেণিককক্ষ সংকট। এই সমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্য ৪টি ১০ তলা ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। এই কাজ শেষ হবার আগেই দেখা দিয়েছে ফাটল।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নির্মাণাধীন ভবনের পিছনের অংশের দুই তলার জানালার নিচের অংশের ৫টি পিলারে ফাটল ধরেছে। ফাটল ধরেছে একটি কলামেও। তাছাড়া ভবনের সামনের অংশের দরজার পাশের দেয়ালেও চিড় ধরেছে।

তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফ হোসেন বলেন, ফাটল ধরার বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু আমরা তো চাইলেই কিছু করতে পারি না। আমরা বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। তাছাড়া আমাদের যে কমিটি এই কাজের দেখাশোনা করেন তাদের সঙ্গেও আমরা বৈঠক করেছি। আমরা ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাদের মতো করে ব্যবস্থা নিব।

উপাধ্যক্ষ ড. মোসা. আবেদা সুলতানা এ বিষয়ে বলেন, এ নিয়ে আমরাও চিন্তিত। আমরা বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।

সার্বিক বিষয়ে অধ্যক্ষ মো. আশরাফ হোসেন বলেন, কলেজটি নির্মাণ করা হয়েছিলো ৬ থেকে ৭ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য। সেইস্থানে এতো পরিমাণ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করলে সমস্যাতো দেখা দেবেই। নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে। কমে আসবে শ্রেণিকক্ষ ও আবাসন সংকট। শিক্ষক সংকটের বিষয়টি মন্ত্রণালয় জানে। কলেজে সেশনজটের বিষয়টি অনেকটাই কম। ঢাবি অধিভুক্ত হবার কারণে ২টি ব্যাচের শিক্ষার্থী ১ বছরের সেশনজটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আগে কলেজে ক্যান্টিন ছিলো। কলেজ থেকে ভর্তুকিও ছিলো। ক্যান্টিন চলতো বাইরের লোক দ্বারা। ক্যান্টিনের ব্যাপারে এখন কেউ আগ্রহ না দেখানোর কারণেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর