ফুটবলের শেষ দশকটা রাজত্ব করেছেন দু’জন। আর্জেন্টাইন গ্রেট লিওনেল মেসি আর পর্তুগিজ সুপার স্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ২০০৮ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত প্রত্যেকটি ব্যক্তিগত অ্যাওয়ার্ড ভাগাভাগি করেছেন এ দুজন। রোনালদোর সঙ্গে সর্বাধিক ব্যালন ডি অর জেতার একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা সবসময়ই ছিল মেসির। ৫টি করে জিতে এতদিন দু’জনই ছিলেন সমান-সমান। তবে এবার ‘সিআর সেভেন’ খ্যাত রোনালদোকে ছাড়িয়ে গেলেন মেসি। ষষ্ঠবারের মতো ব্যালন ডি অর জিতে গড়েছেন ইতিহাস। চার বছর পর ‘ফ্রান্স ফুটবল’ ম্যাগাজিনের মর্যাদাপূর্ণ অ্যাওয়ার্ড পুনরুদ্ধার করার আগে ফিফার বর্ষসেরা খেতাবও জেতেন মেসি।
ক্লাব পর্যায়ে পরিসংখ্যান বিচারে গত এক দশকে রোনালদোর চেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে আর্জেন্টাইন ‘এলএম টেন’। কিছুদিন আগেই ক্লাব ক্যারিয়ারে ৭০০ ম্যাচের মাইলফলক ছুঁয়েছেন মেসি। ৩৪ বছর বয়সী রোনালদো দুই বছর আগে আগেই ৭০০ ম্যাচের কোঠায় পা রাখেন। ম্যাচ বিচারে গোল সংখ্যায় তুলনামূলকভাবে এগিয়ে মেসি। ৭০১ ম্যাচে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড ৬১৪ গোল, ২৩৭ অ্যাসিস্ট ও ৪৬ হ্যাটট্রিক করেন। তিন ক্লাব স্পোর্টিং লিসবন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ৭০০ ম্যাচে রোনালদো ৫০৪ গোল, ১৮৫ অ্যাসিস্ট ও ৪১ হ্যাটট্রিক করেছিলেন। বর্তমানে ৮২০ অফিসিয়াল ক্লাব ম্যাচে তার গোল ৬০৮টি। ট্রফি জয়েও মেসি এগিয়ে। বার্সার হয়ে মোট ৩৪টি ট্রফি জিতেছেন তিনি। এর মধ্যে ১০টি লা লিগা, ৬টি কোপা দেল রে, ৮টি স্প্যানিশ সুপার কাপ, ৪টি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, তিনটি করে উয়েফা সুপার কাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপ জিতেছেন। ক্যারিয়ারের একই স্টেজে রোনালদোর ট্রফি ছিল ২১টি। একটি করে পর্তুগিজ সুপার কাপ ও স্প্যানিশ লা লিগা, দুটি করে ইংলিশ লীগ কাপ, স্প্যানিশ কোপা দেল রে, স্প্যানিশ সুপার কাপ ও উয়েফা সুপার কাপ। আর তিনটি করে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ, চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ও ক্লাব বিশ্বকাপ জিতেছেন রোনালদো। তবে বয়স ৩২ পার হওয়ার পর আরো দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতেছেন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। ইউরোপসেরার এই আসরে ট্রফি ও গোলে মেসির চেয়ে এগিয়ে রোনালদো। তাছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সফল তিনি। পতুর্গালকে জিতিয়েছেন ইউরো। মেসি আর্জেন্টিনাকে বড় কোনো আন্তর্জাতিক ট্রফি জেতাতে পারেননি।
মেসিকে স্বপ্ন দেখতে বলেন স্ত্রী
৩২ বছর বয়সী মেসির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ এখন ফর্ম ধরে রাখা। কারণ ৩২-এর পর অনেকটাই ফর্ম হারিয়েছেন রোনালদো। জুভেন্টাসে যোগ দেয়ার পর গত মৌসুমে সবমিলিয়ে ২৮ গোল করেন তিনি। সামনের বছরগুলোতে মেসিকেও নানান প্রতিকূলতার মুখে পড়তে হবে। তবে চার বছর পর ব্যালন ডি অর মঞ্চে ফিরে মেসি বলেছিলেন, ‘১০ বছর আগে প্যারিসে প্রথমবার এসেছিলাম। তখন ছিলাম ২২ বছরের তরুণ। তখন ব্যাপারটা অভাবনীয় মনে হচ্ছিল। এটা আমার ষষ্ঠ ব্যালন ডি অর। সম্পূর্ণ অন্যকরকম মুহূর্ত। আমার স্ত্রী বলে কখনো স্বপ্ন দেখা থামিও না। পরিশ্রম করো আর উপভোগ করো। আরো অনেক দিন খেলে যেতে চাই। যদিও একদিন অবসর নিতেই হবে। এটা কঠিন হবে। অনেক আগেই বলেছি শরীরের সায় দেয়ার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে। তবে এখন শারীরিক ও মানসিকভাবে খুব ভালো লাগছে। আশা করি আরও অনেক দিন খেলতে পারবো।’ বিশ্বের কোটি কোটি মেসিভক্তের এটাই চাওয়া।