× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সবুজ বিপ্লবের নায়ক শাজাহান

বাংলারজমিন

রিপন আনসারী, মানিকগঞ্জ থেকে
৭ ডিসেম্বর ২০১৯, শনিবার

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার কৌড়ি গ্রামের শাজাহান বিশ্বাস। এই মানুষটির শখই হচ্ছে গাছ লাগানো। সুন্দর পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষপ্রেমিক এই মানুষটি নিজ কর্মগুণে হয়ে উঠেছেন অনন্য। পেয়েছেন খ্যাতি আর মানুষের ভালোবাসা। নিজ বাড়ির আঙ্গিনা, গাঁয়ের মেঠো পথের দুই প্রান্ত থেকে শুরু করে এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তার হাতে লাগানো প্রায় ৭০ হাজার বৃক্ষ শোভা পাচ্ছে ছায়া-সুনিবিড়- নিভৃত কৌড়ি গ্রামে। ৬৪ বছর বয়সী শাজাহান বিশ্বাস প্রায় ৩৮ বছর ধরে বৃক্ষের সঙ্গে একাকার হয়ে আছেন।  মানিকগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের ছায়া-সুনিবিড়-নিভৃত পাখি ডাকা গ্রামই হচ্ছে কৌড়ি গ্রাম। সৌন্দর্যমণ্ডিত এই গ্রামে যারা বসবাস করেন তাদের প্রত্যেকটি বাড়িঘর, রাস্তাঘাট সুসজ্জিত। সবুজ বিপ্লবের এমন সাফল্য গাঁথার মহানায়ক  এ গ্রামের সন্তান শাজাহান বিশ্বাস।
যার জীবনে চাওয়া- পাওয়ার কিছু নেই। মিশে আছেন গাছপালার সঙ্গে। কৌড়ি গ্রামের সুসজ্জিত রাস্তার দু’ধারে মেহগনি ও ফলজসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের কারিগর তিনি। তার হাতে লাগানো বৃক্ষগুলো এখন এলাকার মূল্যবান সম্পদে পরিণত হয়েছে। শাজাহান বিশ্বাস বৃক্ষের সঙ্গে সখ্য শুরু করেন ১৯৭৯ সালের দিকে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৭০ হাজারের অধিক গাছের চারা রোপণ করেছেন তিনি। শুধু চারা রোপণ করেই তার কাজের সমাপ্তি হয় না। চারা পরিচর্যা, পানি দেয়া, আগাছা পরিষ্কার করা, বেড়া দেয়া থেকে শুরু করে পরিপূর্ণ বৃক্ষে পরিণত করা পর্যন্ত যাবতীয় কাজগুলো তিনি ৩৮ বছর ধরে নিয়মিতভাবেই করে যাচ্ছেন। গাছের সঙ্গেই যেন তার সব সখ্য, গাছই যেন সংসার, গাছের সঙ্গেই তার মিতালী। পরিবারকে যেমন ভালোবাসেন ঠিক গাছপালাকেও  সন্তানের মতো ভালোবাসেন। সেজন্যই তিনি এলাকার মানুষের কাছে “গাছ শাজাহান” নামেই পরিচিত। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে দেশের জন্য পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশকে স্বাধীন করেন বৃক্ষপ্রেমী এই মানুষটি। ১৯৭৬ সালে ভ্রমণের জন্য চলে যান দেশের বাইরে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া। বিদেশ ভ্রমণ শেষে আবার চলে আসেন নিজ গ্রাম কৌড়িতে। এসে তিনি নিজ অর্থে প্রথমে গ্রামের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা এরপর রাস্তার দু’পাশে শুরু করেন গাছ রোপণ। প্রথমদিকে কিছু প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হয় তাকে। শুরুর দিকে শাহানের পরিবার ও সমাজের কেউ ভালোভাবে নেয়নি এ কাজটি। গাছপ্রেমী শাজাহান তবুও থেমে যাননি, সে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যান। আজও তিনি নিঃস্বার্থ ভাবে একের পর এক গাছ রোপণ করছেন সেগুন, মেহগনি, আকাশমণি, নিম, হরতকি ও কাঠবাদামসহ বিভিন্ন প্রকারের বৃক্ষ। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত ৭০ হাজারের অধিক গাছ রোপণ করেছেন। বৃক্ষপ্রেমী শাজাহান বিশ্বাসকে মডেল অনুসরণ করে হরিরামপুর উপজেলার কৌড়ি সহ আশেপাশের গ্রামের ছোট বড় সকলেই তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় রোপণ করছেন আম, জাম, লিচু, লেবু ও মালটাসহ নানান রকমের ফলের গাছ। গাছপালায় সৌন্দর্য ও সুসজ্জিত কৌড়ি গ্রামটি দর্শনার্থীদেরও দৃষ্টি কেড়েছে। ফলে চলচ্চিত্র পরিচালক এবং টিভি নাট্যকাররা তাদের চলচ্চিত্র ও নাটকের অসংখ্য শুটিং করেছেন এই সবুজ গ্রামে। কৌড়ি গ্রামের যুবক মোয়াজ্জেম হোসেন  বলেন, বৃক্ষপ্রেমী শাজাহান বিশ্বাস হচ্ছেন আমাদের এলাকার একজন মডেল। তার হাতে লাগালো বৃক্ষ গ্রামকে সুসজ্জিত করে তুলেছে। তিনি আমাদের গ্রামের অহঙ্কার। কৌড়ি গ্রামের প্রত্যেকটি রাস্তায় হাঁটলেই তার হাতে লাগানো সবুজ গাছ আর গাছ। কোনো স্বার্থ না দেখেই বৃক্ষের প্রতি তার এমন ভালোবাসা দেখে আমরা মুগ্ধ।  গাছ রোপণের ফলে যেমন গ্রামের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি ভাবে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে অক্সিজেন প্রয়োজন তা এখান থেকে তৈরি হচ্ছে।
 বৃক্ষপ্রেমিক “গাছ শাজাহান” বলেন, বাবা-মা তার সন্তানকে যেভাবে আদর সোহাগ দিয়ে লালনপালন করেন। আমার কাছেও একেকটি বৃক্ষ সন্তানের মতো। গ্রামের মাটিতে যতগুলো বৃক্ষরোপণ করেছি সবগুলোকে আমি আমার সন্তান মনে করি। তাই তো ৩৮ বছর ধরেই বৃক্ষের সঙ্গে আমি মিশে আছি। আমার মতো বাংলাদেশের প্রত্যেকটি শাজাহানরা যদি তাদের নিজ নিজ এলাকায় গাছ রোপণ করতো তা হলে তো আমরা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হয়ে যেতাম। গাছ হচ্ছে একটা ইন্ডাস্ট্রি, সারা দেশে যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী গাছ রোপণ করা হয় তাহলে কোনো অভাব থাকবে না। এই দেশের প্রাকৃতির ভারসাম্য কখনো নষ্ট হবে না। শাজাহান বিশ্বাস বলেন, মানবকল্যাণে কিছু করার মধ্যে যে প্রশান্তি তা কোটি টাকা দিয়ে পাওয়া সম্ভব না। আমি যখন আমার গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে হেঁটে যাই তখন দেখি গাছের ছায়ার নিচে বসে অনেক কৃষক বিশ্রাম নিচ্ছে- তখন মনে হয় আমি সফল। তবে কষ্ট হয় যখন দেখি মানুষজন বিনা প্রয়োজনে গাছ কর্তন করে ফেলে। তাই নতুন প্রজন্মের প্রতি আমার একটাই আহ্বান সোনার বাংলাদেশ গড়তে গেলে সবুজের বাংলাদেশ গড়তে হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর