মূল্য বঞ্চনা ও হয়রানির শিকার পঞ্চগড় জেলার ক্ষুদ্র চা চাষিদের দাবিগুলো পূরণ হতে যাচ্ছে। উৎপাদিত কাঁচা চা পাতার পরিবহন খরচ বাদে প্রতি কেজি কাঁচা পাতার মূল্য ১৬ দশমিক ৮০ টাকা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকার এখানে একটি সরকারি চা প্রত্রিয়াজাত কারখানা করার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত মঙ্গলবার বিকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘কাঁচা চা পাতা সরবরাহ ও চলমান পরিস্থিতি’ নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় চা পাতার মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় চা কারখানা মালিক, চা চাষি ও চা বোর্ডের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, চা বোর্ডের প্রতিনিধি ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শামীম আল মামুন, চা চাষিদের পক্ষে বাংলাদেশ স্মল টি গার্ডেন ওনার্স এসোসিয়েশনের সহসভাপতি এবিএম আকতারুজ্জামান শাহজাহান, কারখানা মালিকদের পক্ষে মোশাররফ হোসেন ও শাহ আলম ভূঁইয়া বক্তব্য দেন। সভা সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্র্বিক) আব্দুল মান্নান। সভায় নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম দামে চা পাতা ক্রয় ও সাড়ে চার পাতার কমে পাতা নেয়া যাবে না বলে সকল পক্ষ একমত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এ ছাড়া চা প্রক্রিয়াজাত কারখানা নিয়মিত চালু রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০০ সালে পঞ্চগড় জেলায় চা চাষ শুরু হয়। বর্তমানে এ জেলায় ৫ হাজার ৫৯৫ একর জমিতে চায়ের আবাদ করা হচ্ছে। প্রতিবছর চা চাষ বাড়ছে। এ পর্যন্ত নিবন্ধিত বড় চা বাগান ৮টি ও অনিবন্ধিত বড় চা বাগান ১৮টি। ছোট চা বাগান ৬৬২টি, অনিবন্ধিত প্রায় ৩ হাজার ৫০০ চা বাগান রয়েছে। চা প্রক্রিয়াজাতের জন্য বেসরকারি কারখানা চালু রয়েছে ১৫টি। বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল-মামুন বলেন, পঞ্চগড় জেলায় ২০১৭ সালে ৫৪ লাখ ৪৬ হাজার কেজি ও ১৮ সালে ৮১ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। চলতি মৌসুমে ১ (এক) কোটি কেজি চা উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আমরা নিবন্ধিত চাষিদের স্বল্পমূল্যে চা চারা দিচ্ছি। চা বাগান পরিদর্শন করে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমাদের এটুআই কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ চা বোর্ড কর্তৃক ‘দুটি পাতা একটি কুড়ি’ নামে মোবাইল অ্যাপস রয়েছে। সেখান থেকে চা সম্পর্কে যেকোনো তথ্যের পরামর্শ পাওয়া যায়। এদিকে, সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত চা শিল্পের সথে সম্পৃক্ত স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে এক মত বিনিময় সভায় বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. সোহায়েল খান বলেন, পঞ্চগড় জেলায় উৎপাদিত কাঁচা চা পাতার মূল্য সমতায় রাখতে এখানে একটি সরকারি চা কারখানা স্থাপন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চা শিল্পকে সম্প্রসারিত কারার লক্ষ্যে ক্ষুদ্র চা চাষিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। চাষিদের কাঁচা চা পাতার মান বৃদ্ধির জন্য সরকার ও চা বোর্ড সব ধরনের সহযোগিতা করবে।