× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

হাতুড়ে চিকিৎসকের খপ্পরে পড়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে শিশু রঞ্জিত

এক্সক্লুসিভ

শাহ্‌ আলম শাহী, দিনাজপুর থেকে
১১ ডিসেম্বর ২০১৯, বুধবার

বেসরকারি এক হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে ৭ বছরের শিশু রঞ্জিত সিংহ। পেনিসে ভুল অপারেশনে প্রায় একমাস ৫ দিন ধরে এই পরিস্থিতি তার। তাকে নিয়ে এখন দিশাহারা দরিদ্র পিতা-মাতাসহ পরিবারের সবাই। হাসপাতালের বেডের পাশে বসে প্রতিনিয়ত চোখের জল ঝরাচ্ছে তারা। ঘুম হারাম হয়ে গেছে ওই পরিবারের।

এ ঘটনা দিনাজপুরের। কাহারোল উপজেলার দরিদ্র বর্গাচাষি কাজল সিংহের ছেলে রঞ্জিত সিংহ (৭)। পেনিসের একটি রোগ বাঁকা হওয়ায় দালালের খপ্পরে পড়ে দিনাজপুর শহরের বালুয়াডাঙ্গা দোতলা মসজিদ মোড়স্থ হাসনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গত ৫ই নভেম্বর ভর্তি করানো হয় রঞ্জিত সিংহকে। ১৪ হাজার টাকার বিনিময়ে সেখানে ডা. মারুফ খান এবং ওবায়দুর রহমান নামে দুই চিকিৎসক ভুল অপারেশন করায় রঞ্জিতের পেনিসে ইনফেকশন দেখা দেয়।
এ ঘটনায় এলাকাবাসী এবং কতিপয় সাংবাদিক চড়াও হয় হাসনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এলাকাবাসী এবং কতিপয় সাংবাদিককে এক লাখ দশ হাজার টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে রঞ্জিতকে পরে ভর্তি করা হয় দিনাজপুর ইসলামী হাসপাতালে। হাসপাতালের ৪১৫ নম্বর বেডে রঞ্জিত এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।

ইসলামী হাসপাতালে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে শিশু রঞ্জিত চিকিৎসক ডা.এস.এম বোরহান উদ্দিনের অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছে। চিকিৎসক ডা. বোরহান জানিয়েছেন, রঞ্জিতের অবস্থা ভালো নয়। রঞ্জিতের প্রস্রাব ক্যাথেটারের মাধ্যমে করানো হচ্ছে। সময়সাপেক্ষে ঢাকায় তাকে নিয়ে আবারো অপারেশন ও চিকিৎসা করাতে হবে। রঞ্জিতের পিতা কাজল জানান, অপারেশনের রাতে তিনি বাড়িতে ছিলেন। তার স্ত্রী ও শাশুড়ি ছিল ক্লিনিকে। অপারেশনের সময় মদ পান করে ওই দুই চিকিৎসক। মদ্যপ অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ ওই অপারেশন করা হয় তার ছেলের। যা তার স্ত্রী এবং শাশুড়ি দেখেছেন। এ ব্যাপারে হাসনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কথিত চিকিৎসক ডা. মারুফ খানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানালেও পরে আর রিসিভ করছেন না মুঠোফোন। অন্যদিকে আরেক কথিত চিকিৎসক ওবায়দুর রহমান পল্লী চিকিৎসক বলে জানা গেছে। তারপরও তিনি নিজেকে ডিগ্রিধারী চিকিৎসক দাবি করে হাসনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে রয়েছেন। হাসনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী মো. শামীম হোসেন সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তাদের ওপর মিথ্যা অপবাদ দেয়া হচ্ছে। তাদের ক্লিনিক রেজিস্ট্রেশনের জন্য অনলাইনে আবেদন করা হয়েছে। এ ঘটনাকে পুঁজি করে এলাকার কিছু মাস্তান ও কতিপয় সাংবাদিক এক লাখ দশ হাজার টাকা নিয়েছে। সেই সঙ্গে ক্লিনিকের প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার ওষুধও চুরি করে নিয়ে গেছে তারা। তারপরও শিশুটির উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা খরচ বহন করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. শামীম হোসেন আগে অন্য একটি ক্লিনিকের কর্মচারী ছিলেন। বিরল উপজেলার জুগিহারী গ্রামের মৃত আনিসুর রহমানের ছেলে মো. শামীম হোসেন নিজেই এখন ক্লিনিক দিয়েছেন। দালাল চক্রের মাধ্যমে তার হাসনা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসাসেবা নিতে এসে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা মানুষগুলোর জীবন-মৃত্যু নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে কথিত চিকিৎসকরা। এমন অভিযোগ অনেকের।

এবিষয়ে দিনাজপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর। আমি অফিসের কাজে ঢাকায় অবস্থান করছি। ফিরে বিষয়টি দেখবো।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর