আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে চালানো বর্মী বাহিনীর গণহত্যা মামলার শুনানির যুক্তিতর্ক পর্বে বাদি গাম্বিয়ার আইনজীবিরা দাবি করেছেন, ২০১৭ সালের ২৫ শে আগস্ট পুলিশ ক্যাম্পে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠি আরসার হামলার প্রেক্ষিতে রাখাইন জুড়ে ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শুরুর যে দাবি করেছেন মিয়ানমার তা সত্য নয়। তার কারণ হিসাবে তারা আদালতকে জানান, ওই এলাকায় অভিযানের জন্য প্রায় দুই সপ্তাহ আগে মিয়ানমার সেনাদের মোতায়েন করেছিল। রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তেই এটি হয়েছিল। এ সময় তারা আদালতে ওই সেনা মোতায়েনের ছবি প্রদর্শন করে বলেন, রোহিঙ্গাদের টার্গেট করেই কোন রকম উত্তেজনা ছাড়া রাখাইনে সে সময় ব্যাপক সৈন্য সমাবেশ ঘটানো হয়েছিল। বাদি পক্ষের আইনজীবিরা আদালতে বর্মী সেনাদের বাছ-বিচারহীন হত্যা, গণধর্ষণ এবং বর্বর নির্যাতনের বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, দেশটির স্টেট কাউন্সেলরও ঘটনাগুলো স্বীকার করেছেন। তবে তিনি নিজেদের আইনে বিচারের দাবি জানিয়ে আদালতের সহায়তা চেয়েছেন। বাদি পক্ষের আইনজীবিরা আদালতকে বলেন, ঘটনার দুই বছরেও মিয়ানমার দেশীয় আইনে অপরাধীদের বিচারে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। রাখাইনে যুদ্ধাপরাধ হয়েছে স্বীকার করলেও তার বিরুদ্ধে এখনও অ্যাকশন না নেয়া এবং দোষীদের কোর্ট মার্শালে ১০ বছরের সাজা পাওয়ার পরও তাদের ক্ষমা করে দেয়ার ঘটনায় তার দেশের মানুষই যে অসন্তুষ্ট সেটি স্টেট কাউন্সেলরের বিবৃতিতেই উল্লেখ করা হয়েছে।
বাদি গাম্বিয়ার আইনজীবিরা এ অবস্থায় রাখাইনে গণহত্যার অভিযোগ আমলে নিয়ে মিয়ানমারের প্রতি একটি অন্তর্বর্তী আদেশ জারি করার অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য, গাম্বিয়ার বক্তব্য খন্ডন করে আজই মিয়ানমার তার পাল্টা যুক্তি দেবে। আজ শুনানী শেষ হলেও এ সংক্রান্ত আদালতের সিদ্ধান্ত পেতে ৬-৮ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। উল্লেখ্য, মামলার বাদি গাম্বিয়া হলেও বাংলাদেশ, নেদারল্যান্ডস ও কানাডাসহ দুনিয়ার মানবাধিকার সংবেদনশীল রাষ্ট্রগুলো তাদের পাশে আছে। শুরুতে বক্তব্য রাখেন গাম্বিয়ার আইনজীবী পল রাইখলার। রাখাইনে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর চালানো নৃশংসতার মর্মস্পশী বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি।
কিভাবে নারী, শিশুদের হত্যা করেছে সেনাবাহিনী, ধর্ষণ করেছে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে তার বর্ণনা দেন তিনি। এ সময় তিনি মিয়ানমারের যুক্তি খন্ডন করেন। বলেন, মিয়ানমার দাবি করেছে রাখাইনে ছিল তাদের সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান। কিন্তু ভয়াবহতা ও তার শিকার মানুষের সংখ্যার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি প্রশ্ন করেন, যদি তাই হয় তাহলে কতজন মানুষ সন্ত্রাসী? রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
আইনজীবী পল রাইখলা বলেন, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংঘাতকে গণহত্যার সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা যায় না। ওই অভিযানে প্রতিজন মানুষকে টার্গেট করা হয়েছিল। নারী, শিশু, পুরুষ কেউ রক্ষা পায় নি। মিয়ানমার গণকবরের কথা অস্বীকার করেছে। তিনি এ যুক্তি খন্ডন করে বলেন, কমপক্ষে ৫টি গণকবরের সন্ধান মিলেছে। মিয়ানমারে এখনও রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়া, তাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে ফিরে যাওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয় নি বলে জাতিসংঘ সব অন্যদের দেয়া রিপোর্ট উদ্ধৃত করেন তিনি। বলেন, মিয়ানমারে এখনও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, তাদের মুক্তভাবে চলাফেরার বিষয়ে নিশ্চয়তা মেলেনি