× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ধুলায় ধূসর ঢাকার আকাশ

এক্সক্লুসিভ

শাকিল আহমেদ
১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, শুক্রবার

রাজধানীতে এখনো শীতের কুয়াশা জেঁকে বসেনি। কিন্তু দিনভর আকাশ ঢাকা থাকছে ধোয়াশায়। দুপুরেও মনে হয় যেন সকাল হয়েছে মাত্র। আবহাওয়াবিদ ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাতাসে ক্ষতিকর ধুলির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। রাজধানীর বাতাস যে একেবারেই অস্বাস্থ্যকর তাও প্রকাশ পাচ্ছে এই ধুয়াশায়। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, নগরায়ন ও শুষ্ক মৌসুমের  ফলে ঢাকার আকাশে ছোট ছোট ধূলিকণা ভেসে বেড়াচ্ছে। যে কারণে মনে হচ্ছে কুয়াশা পড়েছে। ধুলিকনা নির্ধারিত মানমাত্রার অধিক পরিমানে বায়ুমন্ডলে উপস্থিত থাকার কারণে বাতাসের স্বাভাবিক কার্য়কারিতা ব্যাহত করছে।
যা জনস্বাস্থ্য, উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় প্রতিদিনই সামনের সারিতে থাকছে ঢাকা। অতি সম্প্রতি কয়েক দিন দুষিত নগরীর শীর্ষে ছিল ঢাকা। এয়ার ভিজুয়াল এর তথ্য মতে, গতকাল বেলা দুইটার পর তালিকার সপ্তম স্থানে ছিল ঢাকা। বাতাসে একিউআই এর পরিমান  ছিলো ১৭৭। বাতাসে যদি একিউআই ১৫০ পর্যন্ত থাকে তাহলে এটি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলা যেতে পারে। এর বেশি হলে বিপজ্জনক। ৯ই ডিসেম্বর ঢাকায় বাতাসের একিউআই ছিলো ২৯৮। এবিষয়ে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, ঢাকায় এখন যেটি দেখা যায় সেটি কুয়াশা নয় ধোঁয়াশা। সকাল বেলা ভোর ছয়টার আগে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমান বেশি থাকে। সূর্য উঠার সাথে সাথে এ পরিমান কমতে থাকে। ঘনবসতি ও নগরায়নের ফলে শীতের যে কুয়াশা এটি এখনও ঢাকায় পড়েনি। আসলে বায়ু দূষণের কারণে সবকিছু এরকম ধোঁয়াশা দেখা যায়। আর গ্রাম অঞ্চলে খোলা জায়গা থাকায় সেখানে একটু কুয়াশা পড়ছে। ঢাকার বাইরে কিছু কিছু জেলায় কুয়াশা পড়ছে। এবিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র রসায়নবিদ মোহাম্মদ আব্দুল মোতালেব বলেন, সার্বক্ষণিক বায়ুমান মনিটরিং স্টেশন (ইকিউআই) থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে এটি একটি অতিক্ষুদ্র ধুলিকণা। প্রতি বছরই  শুষ্ক মৌসুমে এ ধুলিকনা বৃদ্ধি পায়। যা অল্পতেই মানব দেহের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে। এটি মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই ধুলিকনা মোটা হলে ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না। পার্টিকুলেট মেটার ১০ থেকে ২৫ পর্যন্ত থাকলে সেটিকে মোটা ধুলা বলা যেতে পারে যা তেমন ক্ষতিকর নয় বলে আমরা মনে করি। তবে অতিক্ষুত্র ধুলি কনার এই ক্ষতিকর মাত্রাটা মার্চ পর্যন্ত চলবে। কারণ এসময় বিভিন্ন কলকারখানা ইটভাটা, রাস্তাঘাট ও ভবন নির্মাণের কাজ চলে তবে খুব বেশি কুয়াশা ও বৃষ্টিপাত হলে এটি আর থাকবে না। সরজমিনে দেখা যায় প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। বর্তমানে রাজধানীতে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মত বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি সব জায়গাতেই চলছে ড্রেন নির্মাণ ও সড়ক সংস্কারের কাজ।  ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন আগারগাঁও সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সামনে দিয়ে সোজা নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত সড়কের দুই দিকেই চলছে ড্রেন নির্মাণ ও সড়ক সংস্কারের কাজ। নির্বাচন কমিশনের পাশ থেকে ডাক ভবন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সামনের সড়ক হয়ে ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালের সামনের সড়কেও চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে একটি সাইন বোর্ডে লেখা রয়েছে ওয়াসার জরুরি কাজ চলছে, সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত। এছাড়া সড়ক ও ড্রেন নির্মাণের কাজ করছে সিটি কর্পোরেশন। সড়কের  পাশে বড় বড় গর্ত খুঁড়ে রাখা হয়েছে, বড় বড় পাইপ, স্লাব, রড, ইটের খোয়া, বালু ,সিমেন্ট, মাটি সড়কের মাঝখানে ফেলে রাখা হয়েছে। গাড়ি চলাচলের সময়  বাতাসে ধুলা উড়ে অন্ধকার হয়ে যায় পুরো এলাকা। মুখে মাস্ক ও রুমাল চেপেও রেহাই নেই পথচারীদের। প্রবীণ নিবাসের সামনে এক চা দোকানি বলেন, আগে ভালো বেচাবিক্রি হতো। কিন্তু ধুলার কারণে এখন আর কোন কাস্টমার আসে না। এই রাস্তায় ধুলার জন্য বের হওয়া যায় না, কেউ একটু পানিও ছিটায় না। ধুলা-বালুতে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এদিকে কল্যাণপুর ফুট ওভার ব্রিজের পাশে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। ড্রেনের মাটি খুঁড়ে সড়কের উপরে রাখছেন শ্রমিকরা। বাতাসে উড়ছে ধুলাবালু পানি না ছিটানোর কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন পথচারিসহ সাধারণ মানুষ। একটু সামনেই শ্যামলী শিশু মেলার সামনে ফুট ওভার ব্রীজ নির্মাণ করছে ডিএনসিসি। প্রধান সড়কের উপরে বালুর স্তূপ ফেলে রাখা হয়েছে গাড়ি চলাচলের সময় যা ধুলায় অন্ধকার হয়ে যায়। রাস্তার মাঝখানে আইল্যান্ডের উপর বালু দিয়ে শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা যায়। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে আমাদের সব সংস্থাকে একসাথে কাজ করতে হবে। এটি সিটি কর্পোরেশনের একার দায়িত্ব নয়। কারণ ব্রিকফিল্ড ও বিআরটিএর লাইসেন্স আমরা দেইনা। তবে মেয়র হিসাবে আমার ভুমিকা অবশ্যই থাকতে হবে। আমাদের সিটি কর্পোরেশনের কোন ঠিকাদার যদি পানি না ছিটিয়ে কাজ করে তাহলে আমি ব্যবস্থা নেবো। তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে এবং জরিমানার আওতায় আনা হবে। এখন থেকে আমি নিজে নগরীতে ঘুরে ঘুরে এলাকা পরিদর্শন করবো।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর