× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর হঠাৎ বাতিল

প্রথম পাতা

কূটনৈতিক রিপোর্টার
১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, শুক্রবার

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন তার পূর্বনির্ধারিত ভারত সফর বাতিল করেছেন। ৩ দিনের সফরে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে তার নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা ছিল। সে মতেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু ফ্লাইটের অল্প আগে আচমকা সফরটি বাতিল হয়ে যায়। ঢাকার তরফে এটি বাতিল করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সেগুনবাগিচা। তবে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বার্তা প্রচার করা হয়নি। মন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে যাওয়ার কথা ছিল এমন দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে দাবি করেছেন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের আয়োজনসহ দেশে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভবে মন্ত্রী মোমেন তার দিল্লি সফরটি শেষ পর্যন্ত বাতিল করেছেন। তাছাড়া শুক্রবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম এমপির মাদ্রিদ সফরে যাওয়া এবং পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বর্তমানে দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের শুনানি পর্যবেক্ষণে থাকার বিষয়টিও মন্ত্রীকে বিবেচনায় নিতে হয়েছে বলে দাবি করেন ওই কর্মকর্তা।


জানুয়ারিতে মন্ত্রী ভারত সফরে যেতে পারেন এমনটাই  অনানুষ্ঠানিকভাবে বলছে ঢাকা। তবে কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে দিল্লির সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত তাৎক্ষণিক খবরে সফর বাতিলের ভিন্ন কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতের নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে ‘খানিক অস্বস্তি’র প্রেক্ষাপটে সফরটি হঠাৎ বাতিল হয়ে গেছে বলেও কেউ কেউ দাবি করছেন। এই আইন নিয়ে এরইমধ্যে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে সহিংসতা শুরু হয়েছে। বুধবার ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট  মিলারের সঙ্গে নিজ দপ্তরে বৈঠকের পর ওই আইন নিয়ে সাংবাদিকদের একাধিক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী মোমেন বলেছিলেন- ভারত ঐতিহাসিকভাবে একটা সহনশীল দেশ, যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে। সেখান থেকে পদস্খলন হলে ভারতের ঐতিহাসিক অবস্থান দুর্বল হবে বলে মনে করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি যে এ নিয়ে কতগুলো কথা উঠেছে, যার অনেকগুলো সত্য নয়। আমাদের দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি অত্যন্ত বেশি। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আমাদের দেশে অন্য ধর্মের লোক কেউ নিপীড়িত নয়। বরং তারা অনেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছেন। মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা সবাইকে একই দৃষ্টিতে দেখি। বাংলাদেশে কে কোন ধর্মের সেটা বিচার করা হয় না। বিচার করা হয় তিনি বাংলাদেশের নাগরিক কি-না? এখানে সব ধর্মের লোকই সম্মানীয়। মন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয় বলে যে কথাটা এসেছে তা সত্য নয়। যারা এ নিয়ে ভারতকে তথ্য দিয়েছেন বা বুঝিয়েছেন, তারাও সত্যি কথা বলেননি। ভারতীয় পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি পাস হয়েছে। বিলটি পার্লামেন্টে উত্থাপনের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক কমিশন (ইউএসসিআইএরএফ)  তাৎক্ষণিক এক বিবৃতিতে বলেছে, বিলটিতে ধর্মীয় মানদণ্ড বেঁধে দেয়াটা বিপজ্জনক।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর বাতিল নিয়ে দিল্লির বক্তব্য: এদিকে আমাদের কলকাতা প্রতিনিধি জানান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সফর বাতিলের ঘটনাকে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সঙ্গে জুড়ে দেখা উচিত হবে না বলে জানিয়েছে দিল্লি। পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার বৃহস্পতিবার বলেন, আমাদের দু’দেশের সম্পর্ক সুদৃঢ়, যেমনটা দু’দেশের রাষ্ট্রনেতারা বার বার বলেছেন। আমি মনে করি, এই সফর বাতিল সেই সম্পর্কে কোনও প্রভাব ফেলবে না। তিনি কোন পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। ধর্মীয় নির্যাতনের বিষয়টি সামরিক শাসন এবং অতীতের সরকারের প্রসঙ্গেই বলা হয়েছে। ভারতে ‘ইন্ডিয়ান ওশিয়ান ডায়ালগ’-এ যোগ দেয়ার কথা ছিল মোমেনের। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া আগের বিবৃতি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৫টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নয়াদিল্লি পৌঁছানোর কথা ছিল।  

ইন্ডিয়ান ওশান ডায়ালগে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ: এদিকে ইন্ডিয়ান ওশান ডায়ালগ- আইওডি’ এর ষষ্ঠ সংস্করণে যোগ দেয়া এবং সাইড লাইনে দিল্লির বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে সঙ্গত কারণেই। তবে  ইন্ডিয়ান ওশান ডায়ালগ- আইওডি’তে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেছে সেগুনবাগিচা। স্মরণ করা যায়, ড. মোমেন চলতি বছরের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরে সঙ্গে ছিলেন। এর আগে, গত আগস্টে ভারতের বিদেশমন্ত্রী ঢাকা সফর করেন এবং দুই দেশের বার্নিং ইস্যুগুলো নিয়ে মন্ত্রী পর্যায়ে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা করেন। ওই দুই সফরে দিল্লি যে আশ্বাস বা অঙ্গীকার করেছে তার ওপরে পূর্ণ আস্থা রাখছে ঢাকা। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনেক অমীমাংসিত ইস্যু থাকলেও অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন দুই দেশের বন্ধন সুদৃঢ়। দিল্লির তরফে এটাকে ‘সোনালী অধ্যায়’ হিসাবে অভিহিত করা হয়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর