× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

হেগে জেরবার সুচি

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৪ বছর আগে) ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯, শুক্রবার, ১১:৪০ পূর্বাহ্ন

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা, গণহত্যার অভিযোগে হেগে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে জেরবার মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি। গাম্বিয়ার পক্ষে বিশ্বের বাঘা বাঘা আইনজীবী তাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন। তাদের প্রশ্ন, যুক্তিতর্ক শুনে বেশির ভাগ সময়ই সুচিকে মনে হয়েছে ভাবলেশহীন। এর মধ্যে আইনজীবী পল রাইখলার বৃহস্পতিবার যুক্তি দেয়ার সময় আবেগি হয়ে ওঠেন। তার কণ্ঠ থেকে ঝরে পড়তে থাকে ক্ষোভ। তিনি বলেন, মিয়ানমার দাবি করছে, রাখাইনে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তারা অভিযান চালিয়েছে। তাহলে শিশুরা কি সন্ত্রাসী? অসহায় নারীরা? এর মধ্য দিয়ে তিনি অসহায় শিশু, নারী, পুরুষকে হত্যার দিকে দৃষ্টিপাত করেছেন। মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে শিশুকে হত্যার দিকে দৃষ্টি কেড়েছেন।
যে ভয়াবহতার মুখে রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়েছেন তার এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন আদালতের সামনে। প্রশ্ন রেখেছেন, এগুলো কি গণহত্যা নয়? জবাবে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) করা গাম্বিয়ার মামলাটি খারিজ করে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মিয়ানমারের বেসামরিক নেত্রি অং সান সুচি।

মামলার তৃতীয় ও শেষ দিনের শুনানিতে সমাপনী বক্তব্যে আদালতের প্রতি এ আহ্বান জানান তিনি। আদালতের উদ্দেশে সুচি বলেন, এ বিষয়ে আগে মিয়ানমারের নিজস্ব বিচার ব্যবস্থাকে কাজ করতে দেয়া উচিত। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর সামরিক অভিযানে জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করেছে গাম্বিয়া। ১০ থেকে ১২ই ডিসেম্বর দ্য হেগে আইসিজেতে মামলাটির শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুনানিতে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সুচি। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে রাখাইনের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নৃশংস সামরিক অভিযান চালায় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। অভিযান থেকে বাঁচতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৭ লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা।
মামলার শুনানিতে গাম্বিয়া আদালতকে বেশকিছু আর্জি জানিয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, মামলা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় থাকার নির্দেশ জারি ইত্যাদি। তবে সুচি দাবি করেছেন, মিয়ানমার কোনো গণহত্যা চালায়নি। মিয়ানমারের ওপর আইসিজের কোনো এখতিয়ারও নেই। বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর তার বক্তব্যে বলেন, মিয়ানমার আদালতকে গণহত্যার মামলাটি খারিজ করে দেয়ার অনুরোধ করছি। পাশাপাশি, গাম্বিয়ার অনুরোধ করা শর্তাধীন পদক্ষেপগুলোও প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের মতো মিয়ানমারেও সামরিক অপরাধের বিচার সামরিক বিচার ব্যবস্থায় হয়ে থাকে বলে উল্লেখ করে বলেন, বুথিডং দ্বিতীয় আরেকটি সামরিক আদালতে বিচার চলছে। ওই বিচার বাধাগ্রস্ত করা ঠিক হবে না।

এদিকে, গাম্বিয়া তাদের দাবি অব্যাহত রেখেছে। বলেছে, মিয়ানমারের সেনাদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে। সেনাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে মিয়ানমারকে বিশ্বাস করা যাবে না। গাম্বিয়া সুচির অনুরোধগুলোকেও প্রত্যাখ্যান করেছে।
গাম্বিয়ার আইনজীবী পল রাইখলার বলেন, মিয়ানমার এই মামলার শুনানিকালে তাদের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে থাকা সকল অভিযোগ অস্বীকারের চেষ্টাও করেনি। ২০১৭ সালে সহিংস অভিযান থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গাদের গণ দেশান্তরের অভিযোগও অস্বীকার করেনি। এমন কি সুচি তার বক্তব্যে রোহিঙ্গা শব্দটি একবারের জন্যও উচ্চারণ করেন নি। এ ছাড়া দাবি করা হয়েছে, এ থেকেই পরিষ্কার যে, রোহিঙ্গাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখা হয়।

মিয়ানমার তাদের বিবৃতিতে দাবি করেছে, তারা অপরাধকারী সেনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। তবে তাদের এ দাবি গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানান আইনজীবী রাইখলার। তিনি বলেন, কেউ কীভাবে বিশ্বাস করবে যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নিজেদের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যামূলক কার্যকলাপের জন্য দায়ী করবে, যখন সেনাবাহিনীর প্রধান সহ ছয় শীর্ষ জেনারেলের বিরুদ্ধেই জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন গণহত্যার অভিযোগ এনেছে ও অপরাধ মামলায় বিচারের আহ্বান জানিয়েছে।
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাটির শুনানির তত্ত্বাবধায়নে আছেন আদালতের ১৭ বিচারকের একটি প্যানেল। এর মধ্যে আইসিজের প্রেসিডেন্ট ও বিচারক আব্দুল কাওয়ি ইউসুফ জানান, আদালত খুব শিগগিরই মামলার একটি রায় দেবেন। তবে তা কবে হতে পারে সে বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করেননি।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ২০১৭ সালের অভিযানের সময় গণহত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে হত্যা, গণধর্ষণ চালিয়েছে। তারা আরো জানায়, সব মিলিয়ে ওই অভিযানে ১০ হাজারের মতো মানুষ খুন হয়ে থাকতে পারে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর