প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন বাংলাদেশের মাটিতে মীর জাফর-মোশতাকের মতো বেঈমানদের জন্ম হয়েছে বারবার। কিন্তু ভবিষ্যতে এদের মতো কেউ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর যেনো ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সে দায়িত্ব এদেশের জনগণকে নিতে হবে, তরুণ প্রজন্মকে নিতে হবে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। গতকাল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর খামারবাড়িস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে স্বাধীন বাংলাদেশ জাতির পিতা দিয়ে গেছেন তা সমুন্নত রাখতে হবে। বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেভাবে যেন এগিয়ে যেতে পারে। বিশ্ব সভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। তাহলেই শহীদদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
এখন বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, ইনশাল্লাহ্ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতা সারাজীবন ত্যাগ স্বীকার করে বাংলাদেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তারই ডাকে সাড়া দিয়ে লাখো শহীদ রক্ত দিয়েছে। কাজেই এ রক্ত কখনও বৃথা যায় না, বৃথা যেতে পারে না। জাতির পিতার দেখানো পথে আওয়ামী লীগ এগিয়ে চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতার যে স্বপ্ন ছিল, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, এই বাংলাদেশকে আমরা সেভাবেই এগিয়ে নিতে চাই। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি, আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আমাদের প্রতিটি কাজ আপনারা লক্ষ্য করবেন, আমাদের তৃণমূল মানুষের ভাগ্য আমরা কিভাবে পরিবর্তন করবো, সেভাবেই সাজানো আমাদের পরিকল্পনা।
তিনি আরও বলেন, এভাবে আমরা তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এদেশকে যেন আর কোনো দিন কারও কাছে হাত পাততে না হয়। মানুষকে খাদ্যের জন্য কষ্ট না পেতে হয়, জাতির পিতা আমাদের যে সংবিধান দিয়ে গেছেন সে সংবিধানে যে মৌলিক অধিকারগুলোর কথা বলা হয়েছে সেগুলো সমুন্নত থাকে আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, একটি জাতিকে ধ্বংস করতে হলে আগে আঘাত আসে তার সংস্কৃতির উপর। প্রথম আঘাত বাঙ্গালি পেয়েছিলো ৪৮ সালে। তারা উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করতে চেয়েছিলো, আমাদের ভাষাকে কেড়ে নেয়ার প্রচেষ্টা করেছিল। পাকিস্তানী হানাদাররা যখন দেখলো তাদের আত্মসমর্পণ করতে হবে। ঠিক সে সময়ই তারা পরিকল্পতিভাবে আমাদের কবি, সাংবাদিক, ডাক্তার, শিল্পী সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীদের খোঁজে খোঁজে বের করে হত্যা করে। যদিও এই হত্যাকাণ্ড তারা শুরু করেছিলো ’৬৯- এর আন্দোলন যখন আমরা শুরু করি। তখন থেকেই তাদের পরিকল্পনা, এবং তারা এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। ৭১ এ জাতির পিতা যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যে মুহুর্তে নিরস্ত্র বাঙ্গালির ওপর আক্রমণ শুরু করে ঠিক তখনই জাতির পিতা যে ঘোষণা দিলেন, সে ঘোষণা সারাদেশে ছড়িয়ে যায়। হানাদাররা রাজারবাগ পুলিশ ফাঁড়ি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা এবং বঙ্গবন্ধুর বাসভবন এরকম বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা আক্রমণ শুরু করে। তখন তারা সারাদেশেই আগুন জ্বালানো, গণহত্যা এবং কিভাবে তারা বাংলাদেশকে ধ্বংস করবে সে প্রচেষ্টাই তারা চালিয়েছিলো। এই হত্যাকাণ্ড যখন তারা চালায় সে সময় আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নির্মভাবে হত্যা করে। ছাত্রদের হত্যা করে এবং মধুর ক্যান্টিনে মধু দাকে হত্যা করে। এই হত্যাযজ্ঞের সময় যে চারজন জাতির পিতার ভাষণ ওয়্যারলেস দিয়ে প্রচার করে তাদেরকেও তারা হত্যা করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙ্গালিদের কাছে পাকিস্তানীদের পরাজয় মানতে হবে এটা তারা মানতে পারেনি। তাই বাংলাদেশ যেন ভবিষ্যতে চলতে না পারে সে জন্য তারা আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। যারা রাষ্ট্রকে, যারা সমাজকে গড়ে তোলে তাদেরকে তারা হত্যা করে। এর আগে তারা গণহত্যা চালায় সারা বাংলাদেশে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর যখন জাতির পিতা দেশে ফিরে এলেন, একটি যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশকে গড়ে তোলার কাজ যখন শুরু করলেন, তখন তারা নতুন করে আরও ষড়যন্ত্র শুরু করলো। তখনও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে তারা। এছাড়া বিভিন্ন ধ্বংসযজ্ঞ কাজ তারা চালিয়ে যাচ্ছিলো। অনেকে তখন সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে লেখালেখি করতো, নানা অপপ্রচার চালাতো। কিন্তু এই অপপ্রচার কিভাবে যে তাদের ধ্বংস করতে পারে তখন তারা সেটা বুঝেনি।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, শহীদ বুদ্ধিজীবী আলতাব মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ, আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণালকান্তি দাস, মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি ও উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান।