× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ঘরে দুই স্ত্রী রেখে পরকীয়া / আজমীরিকে ভালোবেসে জেলে ইন্সপেক্টর সালাউদ্দিন

এক্সক্লুসিভ

জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও জাহিদ হাসান, কুম
১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, সোমবার

ঘরে দুই স্ত্রী। সুশ্রী-সুন্দর দু-জনই। তারপরও পরকীয়ায় মজেছেন পুলিশের পরিদর্শক মো. সালাউদ্দিন। এর এতে ফেঁসে গেছেন তিনি। আজমীরি খন্দকার পপির ভালোবাসা নিয়ে গেছে তাকে জেলে। গতকাল রোববার দ্বিতীয় স্ত্রীর মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি আদালত কারাগারে পাঠিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তাকে। প্রথম স্ত্রীও মামলা করেছেন তার বিরুদ্ধে। সালাউদ্দিন কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ছিলেন।
স্ত্রীদের অভিযোগসহ নানা কারণে তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। দ্বিতীয় স্ত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা যুব মহিলা লীগ নেত্রী তাহমীনা আক্তার পান্না জানান, আজমীরির সঙ্গে ৩ বছর ধরে পরকীয়ায় লিপ্ত সালাউদ্দিন। পরকীয়া শুরুর পর থেকে তার প্রতি আগ্রহ কমে যায় সালাউদ্দিনের। ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসা বা তার সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেন ওই সময় থেকে। কিন্তু সেটি তিনি বুঝতে পারেন প্রথম স্ত্রীর ডিআইজি’র কাছে অভিযোগ দেয়ার পর। তাতে সালাউদ্দিনের পরকীয়া প্রেমিকা আজমীরির বিরুদ্ধে অভিযোগ করা ছাড়াও সালাউদ্দিন আমাকে বিয়ে করেছে সেটিও উল্লেখ করা হয়। ডিআইজি স্যার কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিলে সেখান থেকে আমাকে নোটিশ পাঠানো হয়। নভেম্বরের ১১ তারিখ কুমিল্লায় গিয়ে আমি প্রথম শুনতে পারি সালাউদ্দিন আজমীরি নামে এক মহিলার সঙ্গে পরকীয়া করছে। যার স্বামীর নাম আফজল। আজমীরির বাড়ি খুলনা হলেও সে কুমিল্লায় নানার বাড়ি থাকে। এটি শোনার পর আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। এই আজমীরি সালাউদ্দিনের প্রথম স্ত্রীকে নিয়মিত থ্রেট দিতো। বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্যে চাপ দিতো । বলতো সেই সালাউদ্দিনের স্ত্রী। নানাভাবে টর্চার করতো প্রথম স্ত্রীকে। সালাউদ্দিনও ঘর ত্যাগী হন। ৫ মাস বড় স্ত্রীকে ছেড়ে বাসার বাইরে ছিলেন। এরপর তিনি বাধ্য হন ডিআইজি’র কাছে অভিযোগ দিতে। পান্না জানান, প্রথম স্ত্রী এবং সে ছাড়াও পুলিশের নোটিশ পেয়ে ওইদিন আজমীরিও হাজির হয়েছিলো কুমিল্লার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে। সালাউদ্দিনও ছিলেন সেখানে। পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের অভিযোগ শুনেন। এরপর আরো কয়েক দফা এনিয়ে কুমিল্লার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে বসেন তারা।
সালাউদ্দিনের প্রথম স্ত্রী শামসুন্নাহার সুইটির ঘরে ৯ বছরের একটি ছেলে ও ৫ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। সুইটির সঙ্গে সালাউদ্দিনের বিয়ে হয় ২০০৬ সালে। এর ৮ বছর পর বিয়ে করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়ে পান্নাকে। পান্নার ঘরে রয়েছে ৩ বছরের আরেকটি কন্যা সন্তান। কুমিল্লায় একটি মামলার কাজে সালাউদ্দিনের কাছে গিয়ে ফাঁদে পড়েন পান্না। অবশেষে দুই স্ত্রীই সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা করেন। রোববার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার সাদাত দ্বিতীয় স্ত্রী পান্নার মামলায় জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন সালাউদ্দিনকে। পান্না গত ১লা ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনে এ মামলা করেন। এই মামলায় বিচারক সমন জারি করে সালাউদ্দিনকে ১৫ই ডিসেম্বর অর্থাৎ রোববার আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। সমন অনুসারে সালাউদ্দিন আদালতে হাজির হলে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পশ্চিম মেড্ডা এলাকার মৃত শরাফ উদ্দিনের মেয়ে তাহমিনা আক্তার পান্নার সঙ্গে ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক চট্টগ্রামের হাটহাজারী উত্তর মাদ্রাসা এলাকার সামসুল আলমের ছেলে সালাউদ্দিনের দ্বিতীয় বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ১৫ লাখ টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়। বিয়ের পর তাহমিনা একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন। তার বয়স তিন বছর। গত তিন-চার মাস আগে তাহমিনার কাছে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন সালাউদ্দিন। গত ১৫ই নভেম্বর সালাউদ্দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সামনে পুলিশের চাকরিতে পদোন্নতির কথা বলে আবার ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। যৌতুকের ২০ লাখ টাকা না দিলে অন্যত্র বিয়ে করবে বলে তাহমিনাকে ভয় দেখান সালাউদ্দিন।
টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাহমিনাকে নাকে মুখে চর-থাপ্পড়, কিল, ঘুষিসহ এলোপাতাড়ি মারধর করেন সালাউদ্দিন। পরে স্ত্রী ও সন্তানকে ফেলে রেখে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। ঘটনার পরপর বিষয়টি কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে জানিয়েও কোনো বিচার পাননি তাহমিনা। এজন্য বিচার পাওয়ার আশায় তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন। পান্নার আইনজীবী তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত বলেন, যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন তাহমিনা। এই মামলার একমাত্র আসামি পুলিশ পরিদর্শক সালাউদ্দিন গতকাল আদালতে হাজির হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ওদিকে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে গত ৩০শে নভেম্বর তার প্রথম স্ত্রী শামসুন নাহার সুইটি কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে যৌতুক ও নির্যাতনের আরেকটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি আদালত তদন্তের নির্দেশ দেয়। এছাড়াও ভয়ভীতি দেখিয়ে দেড় কোটি টাকার চেক আদায়ের অভিযোগে কুমিল্লার ১ নম্বর আমলি আদালতে আরেকটি মামলা করেন কুমিল্লা নগরের মনোহরপুর এলাকার বাসিন্দা মো. মহিউদ্দিন। এসব মামলার পরই কুমিল্লার কোতয়ালি থানার তদন্ত পরিদর্শকের দায়িত্ব থেকে সালাউদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়। তাঁকে কুমিল্লা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর