তাহিরপুরে শিশু তোফাজ্জলকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে তার দাদার ফুফাতো ভাই (সম্পর্কে তোফাজ্জলের দাদা) রাসেল মিয়া। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করে রাসেল মিয়া। এবিষয়ে গত মঙ্গলবার বিকালে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে সে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় রাসেল মিয়া বলেছে- ঘটনার দিন তার খাটেই শুয়েছিল শিশু তোফাজ্জল। সে নিজে শোয়ার সময় হঠাৎ করে বিছানার উপর পড়ে যায়। এসময় তোফাজ্জল চিৎকার দিয়ে ওঠে। তোফাজ্জল যাতে চিৎকার না করে এজন্য তাকে (তোফাজ্জলকে) বালিশ দিয়ে মুখে চাপা দেয় রাসেল। এরই এক পর্যায়ে তোফাজ্জল দমবন্ধ হয়ে মারা যায়। পুলিশকে রাসেল বলেছে, তোফাজ্জলকে প্রাণে মারার উদ্দেশ্যে বালিশ চাপা দেয়নি সে।
কিন্তু শিশুটি মারা যাওয়ার পর সে হতবাক হয়ে যায়। একপর্যায়ে এই দোষ অন্যদের ঘাড়ে চাপানোর জন্য তোফাজ্জলের চোখ উপড়ে এবং পা ভেঙে তোফাজ্জলের মৃতদেহ বস্তাবন্দি করে রাখে সে। এই হত্যাকান্ডের পর সন্দেহ হওয়ায় শিশু তোফাজ্জলের চাচা, ফুপু এবং সম্পর্কে দাদা রাসেল মিয়াসহ ৭ জনকে আটক করে পুলিশ। গত সোমবার সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম খুন হওয়া তোফাজ্জলের বাড়ী গিয়ে রাসেল মিয়ার শোয়ার ঘরের খাটের পাশের ছোট ওয়ারড্রপ থেকে একটি রক্তভেজা লুঙ্গি ও দুটি বালিশের কাভার উদ্ধার করে। এ সময়ই রাসেলের উপর সন্দেহ হয় পুলিশের। এদিকে আটক ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সুনামগঞ্জের কোর্ট ইন্সপেক্টর আশেক সুজা মামুন জানান, রাসেল মিয়া জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শুভদ্বীপ পালের আদালতে মঙ্গলবার বিকালে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তিনি জানান, এ ঘটনায় আটক তোফাজ্জলের ফুপু শিউলী বেগম, ফুফা সেজাউল কবির ও তার বাবা কালন মিয়া, হাবিবুর রহমান হবি, আপন চাচা সালমান মিয়া ও লোকমান মিয়ার রিমান্ড শেষ হওয়ায় বুধবার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শুভ দীপ পালের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করেন।
এবিষয়ে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, রাসেল মিয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ায় অন্যদের রিমান্ডে রাখার যৌক্তিক কারণ না থাকায় তাদেরকে বুধবার আদালতে হাজির করা হয়। এদিকে তাহিরপুরে খেলাঘর নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনের মাধ্যমে এলাকাবাসী এঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বাসতলা গ্রামের জোবায়েল হোসেনের ছেলে ৭ বছরের শিশু ৪ দিন নিখোঁজ ছিল। শনিবার ভোর রাতে শিশুর চোখ উপড়ে ফেলা ও পা ভাঙা অবস্থায় বস্তাবন্দি লাশ হবি মিয়ার ছেলে রাসেলের বাড়ীর পাশেই পাওয়া যায়। পরে এ ঘটনায় নিহতের পিতা জোবায়েল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে তাহিরপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।॥